
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে শিগগিরই একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ক্রেমলিন জানিয়েছে, বৈঠকের স্থান ও কাঠামো ইতোমধ্যেই নীতিগতভাবে নির্ধারিত হয়েছে। তবে এই আলোচিত বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপস্থিতি নিশ্চিত নয়। এতে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে ট্রাম্প ঘোষিত যুদ্ধবিরতি সময়সীমা নিয়েও।
ক্রেমলিন সূত্রে বৃহস্পতিবার জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং পুতিন আগামী সপ্তাহে এক শীর্ষ বৈঠকে বসবেন। পুতিনের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ বলেন, এ ধরনের বৈঠক আয়োজনের জন্য সময় প্রয়োজন, তাই নির্দিষ্ট তারিখ এখনই জানানো যাচ্ছে না। তবে সম্ভাব্য স্থান অচিরেই জানানো হবে।
বৈঠকের খবরটি আসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের মস্কো সফরের পরদিন। উইটকফ পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যদিও হোয়াইট হাউস কিংবা ক্রেমলিন, কেউই আলোচনার বিস্তারিত প্রকাশ করেনি। বরাবরের মতো ক্রেমলিন শুধু জানায়, বৈঠক ছিল “গঠনমূলক” এবং উভয় পক্ষ “সংকেত” বিনিময় করেছে।
ট্রাম্প নিজেও বিষয়টি নিয়ে অতিরঞ্জন করতে নারাজ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এটাকে ব্রেকথ্রু বলতে চাই না। আমি এখানে এসেছি সমাধান করতে।”
জেলেনস্কি থাকছেন কি না, সে প্রশ্নে ধোঁয়াশা
ট্রাম্প ও পুতিনের বৈঠক যখন প্রায় নিশ্চিত, তখন প্রশ্ন উঠছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও কি অংশ নেবেন? বিশেষ করে যখন ট্রাম্প নিজেই জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই রাশিয়া ও ইউক্রেনের দুই নেতার সঙ্গে একসাথে বসার “ভালো সম্ভাবনা” রয়েছে।
তবে ক্রেমলিন জেলেনস্কিকে নিয়ে কোনো প্রত্যাশা জাগাতে নারাজ। উশাকভ বলেন, “আমরা প্রথমত ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠককে গুরুত্ব দিতে চাই এবং সেটি যেন সফল ও ফলপ্রসূ হয়, সেটাই আমাদের কাছে মুখ্য।”
তিনি আরও জানান, বুধবার মস্কোতে উইটকফের সঙ্গে বৈঠকে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের ধারণাটি উত্থাপিত হলেও, এ বিষয়ে ক্রেমলিন কোনো মন্তব্য করেনি।
উল্লেখযোগ্যভাবে, উইটকফ-পুতিন বৈঠকের পরে বুধবার সন্ধ্যায় জেলেনস্কি ও ট্রাম্পের মধ্যে আলাদা একটি ফোনালাপ অনুষ্ঠিত হয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জানান, ইউরোপীয় নেতারাও সেই আলোচনায় যুক্ত ছিলেন, যেখানে তারা মস্কোতে অনুষ্ঠিত আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেন।
জেলেনস্কি বলেন, “আমাদের ও অংশীদারদের অবস্থান পরিষ্কার এই যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। এবং তা হতে হবে ন্যায্যভাবে। ইউক্রেন নিজের স্বাধীনতা রক্ষা করবে। আমরা টেকসই ও নির্ভরযোগ্য শান্তি চাই। রাশিয়াকে যুদ্ধ বন্ধ করতেই হবে।”
তিনি আরও বলেন, “প্রথমত, হত্যা বন্ধ হতে হবে। এবং যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে হবে রাশিয়াকেই। দ্বিতীয়ত, শীর্ষ নেতাদের এমন একটি বৈঠক দরকার যা সত্যিকারের শান্তির পথে এগিয়ে নিতে পারে। তৃতীয়ত, দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা, যা শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে মিলে সম্ভব।”
যুদ্ধবিরতির সময়সীমা কি পাল্টাবে?
ট্রাম্প আগামী ৮ আগস্ট মস্কোর জন্য যে যুদ্ধবিরতির সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন, সেটি কি এই বৈঠকের আলোকে পরিবর্তিত হবে, নাকি নেতাদের বৈঠক ছাড়াই সময়সীমা পেরিয়ে যাবে এটি এখনও স্পষ্ট নয়।
জেলেনস্কির দীর্ঘদিনের আহ্বান
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের শুরু থেকেই জেলেনস্কি পুতিনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের প্রস্তাব দিয়ে আসছেন। চলতি বছরের মে মাসে পুতিন যখন সরাসরি আলোচনার ইঙ্গিত দেন, তখন জেলেনস্কি দ্রুতই জানিয়ে দেন, তিনি নিজেই ইস্তানবুলে গিয়ে রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করতে প্রস্তুত।
জেলেনস্কি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ানের সঙ্গে দেখা করলেও পুতিন সেখানে যাননি। বরং রাশিয়া একটি নিম্ন পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠায়, যার মধ্যে ছিলেন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা উপমন্ত্রী, সামরিক গোয়েন্দা প্রধান এবং প্রেসিডেন্টের সহকারী।
এই বৈঠকের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল ছিল বৃহত্তম যুদ্ধবন্দি বিনিময়, কিন্তু যুদ্ধবিরতির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এদিকে যুদ্ধবিরতি আলোচনা যত বাড়ছে, রাশিয়া ততই ইউক্রেনের ওপর হামলা জোরদার করেছে।
“আমরা জানি, রাশিয়ায় কে সিদ্ধান্ত নেয়। তাই ইউক্রেন আবারও বলছে, কারিগরি আলোচনা নয়, বাস্তবিকভাবে শীর্ষ পর্যায়ে নেতাদের মধ্যে সাক্ষাৎ হওয়া দরকার,” বলেন জেলেনস্কি। তবে মস্কো তার এসব আহ্বানের অধিকাংশই উপেক্ষা করেছে।
তবে এবার দৃশ্যপটে ট্রাম্পের উপস্থিতি নতুন গতিপথের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ট্রাম্পের শান্তি প্রচেষ্টা
হোয়াইট হাউস থেকে বৃহস্পতিবার দেওয়া এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানান, তিনি জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফেরার পর গত পাঁচ মাসে পাঁচটি যুদ্ধ থামিয়েছেন। “আমি ইতোমধ্যে পাঁচটি যুদ্ধ থামিয়েছি। এই যুদ্ধটি যেন আমার ষষ্ঠ সফলতা হয়, আমি সেটাই চাই,” বলেন ট্রাম্প।
পুতিন-ট্রাম্প বৈঠক এখন নিশ্চিত। এর মাধ্যমে বিশ্ববাসীর চোখ এখন এক নতুন সম্ভাবনার দিকে তাকিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধ কি সত্যিই অবসানের পথে? এবং সেই পথে কি নেতৃত্ব দেবেন ট্রাম্প? উত্তর জানতে হয়তো অপেক্ষা করতে হবে আর মাত্র কিছুদিন। তবে একথা নিশ্চিত, এই বৈঠক শুধু কূটনৈতিক হিসেব নয়, বৈশ্বিক নিরাপত্তার এক বড় মুহূর্ত হয়ে উঠতে যাচ্ছে।
সূত্র:https://tinyurl.com/93mz7wsf
আফরোজা