
ছবি: সংগৃহীত
অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এড়াতে অনেক নারী জরুরি সময়ে ইমারজেন্সি পিল গ্রহণ করেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি নিয়মিত ব্যবহারযোগ্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নয়। বরং এটি শুধুমাত্র জরুরি প্রয়োজনে সীমিত ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত। পিলের হরমোনের মাত্রা বেশি হওয়ায় এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারে প্রচলিত দুটি ধরনের ইমারজেন্সি পিল রয়েছে:
1. লেভোনরজেস্ট্রেল (Levonorgestrel)
2. ইউলিপ্রিস্টাল অ্যাসিটেট (Ulipristal Acetate)
এই দুটি পিল দুইভাবে কাজ করে, এবং সেবনের নিয়মেও রয়েছে কিছু পার্থক্য। তবে দুটিই শতভাগ কার্যকর নয়। লেভোনরজেস্ট্রেল যদি ১২–২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেবন করা হয়, তাহলে এটি ৯৫% পর্যন্ত কার্যকর হতে পারে।
* দেরিতে খেলে এর কার্যকারিতা ৫০–৮৫ শতাংশে নেমে যেতে পারে।
* যাদের ওভুলেশন ইতিমধ্যে হয়ে গেছে, তাদের ক্ষেত্রে ইমারজেন্সি পিল প্রায় অকার্যকর হতে পারে।
ইমারজেন্সি পিলে থাকা উচ্চমাত্রার হরমোন শরীরে বেশ কিছু নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন:
* বমিভাব, মাথা ঘোরা, ঝিমুনি
* স্তনে ব্যথা বা অস্বস্তি
* মাসিকের সময়ের তারতম্য
* অতিরিক্ত বা কম রক্তক্ষরণ
* মাসিকের আগে-পরে অনিয়মিত রক্তস্রাব
* বিরল ক্ষেত্রে একটোপিক প্রেগন্যান্সি (ভ্রুণ জরায়ুর বাইরে প্রোথিত হওয়া)
* *লেভোনরজেস্ট্রেল পিল মাসে ২ বারের বেশি সেবন করা ঠিক নয়
* *ইউলিপ্রিস্টাল অ্যাসিটেট পিল মাসে ১ বারের বেশি সেবন করা উচিত নয়
যদি কারও সপ্তাহে একাধিকবার ইমারজেন্সি পিলের প্রয়োজন হয়, তাহলে তার নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে রূপান্তর হওয়া জরুরি।
* লেভোনরজেস্ট্রেল পিল ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সেবন করতে হয়।
* ইউলিপ্রিস্টাল অ্যাসিটেট সেবনের সময়সীমা ৫ দিন বা ১২০ ঘণ্টা।
* যত দ্রুত খাওয়া হয়, কার্যকারিতা তত বেশি।
* কেউ যদি পিল খাওয়ার ২–৩ ঘণ্টার মধ্যে বমি করেন, তাহলে পুনরায় ডোজ নিতে হবে।
কবে ইমারজেন্সি পিল দরকার হয়?
* জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছাড়াই শারীরিক সম্পর্ক হলে
* কনডম ছিঁড়ে গেলে বা স্লিপ হয়ে গেলে
* জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সময়মতো না খেলে
* যেকোনো অনিরাপদ যৌন সম্পর্কের পরে
বিকল্প উপায় কী?
জরুরি প্রয়োজনে ইমারজেন্সি পিল ছাড়াও কিছু বিকল্প রয়েছে:
* কম্বাইন্ড পিলের চার-পাঁচটি বড়ি একসঙ্গে খেয়ে ইমারজেন্সি পিলের কাজ করানো যেতে পারে (ডাক্তারের পরামর্শে)।
* কপার-টি (Copper IUD) যেটি জরায়ুতে স্থাপন করলে ৫–১০ বছর জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
এটি যৌন সম্পর্কের ৫ দিনের মধ্যে স্থাপন করা হলে ইমারজেন্সি কন্ট্রাসেপশনের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে।
বিশেষ সতর্কতা
* যাঁদের ওজন অনেক বেশি, তাঁদের শরীরে পিলের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
* যক্ষ্মা, খিঁচুনি বা অন্য হরমোন সংবেদনশীল ওষুধ খেলে পিল কম কার্যকর হতে পারে।
* ইমারজেন্সি পিল খাওয়ার পর *সাত দিন পার হলেও মাসিক না এলে* অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ইমারজেন্সি পিল একটি জরুরি সমাধান মাত্র—নিয়মিত বিকল্প নয়। যত বেশি এটি সেবন করা হবে, তত বেশি শারীরিক ঝুঁকি বাড়বে। তাই সচেতনভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নির্বাচন করুন এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ছামিয়া