ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৮ আগস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

চিনিযুক্ত খাবারের চেয়ে কোমল পানীয় টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি বাড়ায়: গবেষণা

প্রকাশিত: ২২:২৪, ৭ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ২২:২৬, ৭ আগস্ট ২০২৫

চিনিযুক্ত খাবারের চেয়ে কোমল পানীয় টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি বাড়ায়: গবেষণা

প্রতিদিন ১২ আউন্স (প্রায় ৩৫৫ মিলিলিটার) কোমল পানীয় বা এনার্জি ড্রিংকসের মতো চিনি-মিশ্রিত পানীয় পান করলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।

চিনিজাতীয় খাবার খাওয়ার চেয়ে পানীয়র মাধ্যমে চিনি গ্রহণ করলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেক বেশি বেড়ে যায়, এমন তথ্য উঠে এসেছে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বড় পরিসরের একটি গবেষণায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিগহ্যাম ইয়াং ইউনিভার্সিটি (বিওয়াইইউ) এবং জার্মানির একদল গবেষক একসঙ্গে ৮ লাখের বেশি মানুষের ওপর করা ২৯টি আলাদা গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে এ ফলাফল পেয়েছেন। গবেষণাগুলো যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও লাতিন আমেরিকায় পরিচালিত হয়েছিল।

২০২৫ সালের মে মাসে অ্যাডভান্সেস ইন নিউট্রিশন সাময়িকীতে প্রকাশিত এই বিশ্লেষণে দেখা যায়, কোমল পানীয় ও ফলের রসের মতো পানীয়র মাধ্যমে চিনি গ্রহণ করলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। অন্যদিকে, খাবারের অংশ হিসেবে যেমন ফল বা অন্যান্য খাবারে থাকা চিনি গ্রহণ করলে তেমন ঝুঁকি দেখা যায় না।

'অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সব ধরনের চিনিকে এক করে ফেলা হয় অথবা শুধু আলাদাভাবে যোগ করা চিনির ওপর জোর দেওয়া হয়,' ফক্স নিউজ ডিজিটাল–কে বলেন গবেষণার প্রধান লেখক ও বিওয়াইইউ–এর পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ক্যারেন ডেলা কোর্তে। 

'কিন্তু আমাদের গবেষণা দেখায়, চিনির স্বাস্থ্যগত প্রভাব অনেকটাই নির্ভর করে এটি কীভাবে গ্রহণ করা হচ্ছে তার ওপর।'

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রতিদিন ১২ আউন্স (প্রায় ৩৫৫ মিলিলিটার) কোমল পানীয় বা এনার্জি ড্রিংকসের মতো চিনি-মিশ্রিত পানীয় পান করলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। অন্যদিকে, প্রতিদিন ৮ আউন্স (প্রায় ২৪০ মিলিলিটার) ফলের রস যার মধ্যে ১০০ শতাংশ ফলের রস, নেকটার এবং অন্যান্য জুস ড্রিংকসও অন্তর্ভুক্ত গ্রহণ করলে ঝুঁকি বাড়ে প্রায় ৫ শতাংশ।

এই ঝুঁকি অবশ্য আপেক্ষিক। অর্থাৎ যদি কারও টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক ঝুঁকি ১০ শতাংশ হয়, তাহলে প্রতিদিন চার গ্লাস কোমল পানীয় পান করলে সেই ঝুঁকি বেড়ে প্রায় ২০ শতাংশ হতে পারে, পুরোপুরি ১০০ শতাংশ নয়।

অন্যদিকে, ফলে থাকা প্রাকৃতিক চিনি বা আঁশসমৃদ্ধ খাবারে থাকা কিছু পরিমাণ যোগ করা চিনি ডায়াবেটিসের ঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। বরং কিছু ক্ষেত্রে এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হিসেবে কাজ করে।

ডেলা কোর্তে বলেন, 'চিনি–মিশ্রিত পানীয়তে ফাইবার, প্রোটিন বা চর্বির মতো উপাদান না থাকায় শরীর দ্রুতই চিনি শোষণ করে নেয়, যা রক্তে গ্লুকোজ ও ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করে।'

'অন্যদিকে, যেসব খাবারে চিনি আঁশ, প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বির সঙ্গে থাকে, তা হজমের গতি কমিয়ে রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।'

যেহেতু গবেষণাটি পর্যবেক্ষণমূলক, তাই এটি সরাসরি প্রমাণ করতে পারে না যে চিনিযুক্ত পানীয় টাইপ-২ ডায়াবেটিসের কারণ। তবুও এগবেষকরা বলছেন, এসব পানীয় স্বতন্ত্রভাবেই ঝুঁকি তৈরি করে।

ডেলা কোর্তে বলেন, 'জীবনযাপনের ধরন সবসময়ই দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকিতে ভূমিকা রাখে। তবে আমাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চিনিযুক্ত পানীয়র সঙ্গে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সম্পর্ক অন্যান্য বিষয়—যেমন শরীরচর্চা, ওজন বা ধূমপানের প্রভাব—থেকে আলাদা।'

'এই পানীয়গুলো নিজস্বভাবেই ক্ষতিকর,' বলেন ডেলা কোর্তে, 'জীবনযাপনের ধরন সবসময় দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকিতে ভূমিকা রাখে। তবে আমাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চিনিযুক্ত পানীয়ের সঙ্গে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সম্পর্ক অন্যান্য বিষয়—যেমন শরীরচর্চা, ওজন বা ধূমপানের প্রভাব থেকে আলাদা।' 

মার্কিন রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা (সিডিসি)–র তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ৩ কোটি ৮০ লাখের বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ১২ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ রোগী টাইপ-২ ডায়াবেটিসে ভুগছেন।

গত ২০ বছরে দেশটিতে ডায়াবেটিসের প্রাদুর্ভাব ৯ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছেছে।

গবেষকরা বলছেন, খাদ্যসংক্রান্ত নীতিমালায় শুধু কতটা চিনি খাওয়া হচ্ছে তা নয়, চিনি কীভাবে খাওয়া হচ্ছে—সেটির ওপরও জোর দেওয়া উচিত।

ডেলা কোর্তে আরও বলেন, ভবিষ্যতে আরও গবেষণা প্রয়োজন, যাতে বোঝা যায় চিনির ধরন ও গ্রহণের প্রেক্ষাপট কীভাবে মানবদেহের বিপাকক্রিয়া এবং ইনসুলিন প্রতিক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি, বিভিন্ন ধরনের খাবারে থাকা চিনি যেভাবে যকৃত প্রক্রিয়া করে—তা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রিত গবেষণা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। 

এ নিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক আমেরিকান বেভারেজ অ্যাসোসিয়েশন (এবিএ) ফক্স নিউজ ডিজিটাল–কে জানায়, কম চিনিযুক্ত ও বিভিন্ন বিকল্প পণ্যের মাধ্যমে পানীয় কোম্পানিগুলো 'গ্রাহকদের ভারসাম্যপূর্ণ জীবনধারা গড়ে তুলতে সহায়তা করছে।'

এবিএ জানায়, বর্তমানে ভোক্তারা যে পরিমাণ পানীয় কিনছেন, তার ৬০ শতাংশেই কোনো চিনি নেই। 

তারা আরও দাবি করে, এই গবেষণার লেখকরাও স্বীকার করেছেন যে, তাদের গবেষণায় সরাসরি প্রমাণ মেলেনি যে কোমল পানীয় পান করলেই অসুস্থতা হয়। তাছাড়া, ডায়েটারি গাইডলাইন্স ফর আমেরিকানস–এও বলা হয়েছে, চিনিযুক্ত পানীয় একটি ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যতালিকার অংশ হতে পারে।

মিমিয়া

আরো পড়ুন  

×