
বিশ্বজুড়ে ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে কোলন বা কলোরেক্টাল ক্যান্সার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্যমতে, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী ১৯ লাখের বেশি নতুন কোলন ক্যান্সারের রোগী শনাক্ত হয় এবং প্রায় ৯ লাখ ৩০ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় এই নীরব ঘাতক। আশঙ্কাজনকভাবে, ২০৪০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা আরও বেড়ে দাঁড়াবে বছরে ৩২ লাখ নতুন রোগী এবং ১৬ লাখ মৃত্যুতে, যা যথাক্রমে ৬৩ ও ৭৩ শতাংশ বৃদ্ধি।
তবে আশার বিষয় হলো, প্রাথমিক পর্যায়ে এই ক্যান্সার শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসায় সাফল্যের হার অনেক বেশি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, রোগটির শুরুতে যে উপসর্গগুলো দেখা দেয়, সেগুলো এতটাই সাধারণ এবং মৃদু যে অনেকেই সেগুলিকে অন্য কোনো তুচ্ছ শারীরিক সমস্যার অংশ বলে মনে করে এড়িয়ে যান। এতে করে রোগ শনাক্তকরণে দেরি হয়, চিকিৎসা পিছিয়ে পড়ে এবং সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
চলুন জেনে নিই সেই পাঁচটি সাধারণ উপসর্গ, যেগুলো প্রায়ই অবহেলা করা হয় অথচ কোলন ক্যান্সারের প্রাথমিক সংকেত হিসেবে বিবেচিত।
মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন
মলত্যাগের ধরণে যেকোনো পরিবর্তনকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। একটানা ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা মলত্যাগের পরও অপূর্ণতা অনুভব করা, কোলন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। অনেকে খাদ্যাভ্যাস, পানির ঘাটতি কিংবা মানসিক চাপে এমন পরিবর্তনের ব্যাখ্যা খোঁজেন। তবে যদি এই অবস্থাগুলো এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
মলে রক্ত থাকা
মলের সঙ্গে উজ্জ্বল লাল বা গাঢ় রক্ত দেখা গেলে তা কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়। অনেকেই একে হেমোরয়েড বা ক্ষুদ্র অন্ত্রের সমস্যা বলে মনে করে চিকিৎসা এড়িয়ে যান। যদিও পাইলস বা গ্যাস্ট্রিকজনিত সমস্যাতেও রক্তপাত হতে পারে, তবে WHO বলছে, কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীই মলদ্বার থেকে রক্তপাতের অভিযোগ করেন। সময়মতো কোলোনোস্কপি করিয়ে সমস্যার উৎস জানা এবং প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব।
পেটব্যথা বা অস্বস্তি
ঘন ঘন পেটের ব্যথা, ক্র্যাম্প বা ফুলে যাওয়া যা সহজে সারে না,তা কোলন ক্যান্সারের ইঙ্গিত হতে পারে। অনেকেই একে গ্যাস বা আইবিএস (ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম) বলে ধরে নেন। তবে এই ব্যথা যদি নিয়মিত হয় এবং অন্য কোনো উপসর্গের সঙ্গে মিলে যায়, তাহলে অবশ্যই তা অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
হঠাৎ ও অকারণ ওজন কমে যাওয়া
ডায়েট না বদলানো কিংবা ব্যায়াম না করেও যদি হঠাৎ করে ১০ পাউন্ড বা তার বেশি ওজন কমে যায়, তাহলে তা নিঃসন্দেহে সতর্কবার্তা। অনিচ্ছাকৃত ওজন হ্রাস কোলন ক্যান্সারসহ অন্যান্য ক্যান্সারেরও গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ হতে পারে। দুঃখজনকভাবে, অনেকেই ওজন কমে যাওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেন এবং এর পেছনের কারণ অনুসন্ধান করেন না। তবে এই উপসর্গ যদি অন্য লক্ষণগুলোর সঙ্গে মিলে যায়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসা প্রয়োজন।
দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি
প্রচুর বিশ্রাম নেওয়ার পরও যদি শরীরে ক্লান্তি লেগে থাকে, তাহলে তা ক্যান্সারের একটি গোপন ইঙ্গিত হতে পারে। কোলন ক্যান্সারের কারণে শরীরে অভ্যন্তরীণ রক্তপাত হতে পারে, যা রক্তাল্পতা ও এনার্জির ঘাটতির কারণ হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত অনেকেই প্রাথমিকভাবে দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তির অভিযোগ করেছেন। কর্মব্যস্ত জীবনে আমরা প্রায়ই ক্লান্তিকে অবহেলা করি, কিন্তু যদি এটি অন্য উপসর্গের সঙ্গে মিলে যায়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসা নেওয়া উচিত।
কোলন ক্যান্সার একটি নীরব ঘাতক, যা শুরুতে প্রায়ই কোনো জোরালো লক্ষণ প্রকাশ করে না। তবে উপরোক্ত উপসর্গগুলো যদি একসঙ্গে বা পৃথকভাবে দেখা যায় এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্তকরণই পারে জীবন বাঁচাতে।
নিজেকে সচেতন রাখুন, নিয়মিত চেকআপ করুন এবং স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিন। সময়মতো সঠিক পদক্ষেপই পারে আপনাকে ও আপনার প্রিয়জনকে রক্ষা করতে।
সূত্র:https://tinyurl.com/58xe4fvd
আফরোজা