
ছবি: সংগৃহীত
মা হওয়ার শুরুর দিনগুলো অনেকটা ঘোলাটে কুয়াশার মতো—পরামর্শ, চাপ এবং আবেগে ভরা। এই সময়ে দুধ পান করানো একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয় হয়ে ওঠে, যা শুধু জৈবিক নয়, বরং সামাজিক সংস্কার, পুরনো ধারণা এবং চিকিৎসকদের মতামতেও প্রভাবিত হয়। ফলে অনেক সময় ভুল তথ্য, অযাচিত দুশ্চিন্তা এবং আত্মবিশ্বাসে ভাঙন দেখা দেয়।
ভারতের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন অনেক ভুল ধারণা আজও চালু আছে, যা মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। নিচে এমনই কয়েকটি ভুল ধারণা তুলে ধরা হলো—যা ভাঙতে হবে এখনই।
ভ্রান্ত ধারণা ১: ফর্মুলা দুধ আর মায়ের দুধ একই
বাস্তবতা: ফর্মুলা দুধ কখনোই মায়ের দুধের জৈব গঠন এবং প্রতিরোধক্ষমতা উন্নতকারী উপাদানের সমান নয়।
ডা. হিমানি শর্মা, সিনিয়র গাইনোকলজিস্ট, কোকুন হাসপাতাল, জয়পুর, বলেন, ‘মায়ের দুধ শুধু খাদ্য নয়, এটি শিশুর প্রথম রোগ প্রতিরোধের ঢাল।’
ভ্রান্ত ধারণা ২: শিশু কাঁদলে বোঝা যায় দুধ কম পাচ্ছে
বাস্তবতা: শিশু অনেক কারণেই কাঁদতে পারে—ঘুম, অস্বস্তি, কোষ্ঠকাঠিন্য বা নিছক মন খারাপ।
ডা. শর্মার ভাষায়, ‘প্রতিটি কান্না মানেই ক্ষুধা নয়। ওজন, ডায়াপার ভেজানো এবং শিশুর সজাগতা–এসব বেশি নির্ভরযোগ্য সূচক।’
ভ্রান্ত ধারণা ৩: শালদুধ নোংরা
বাস্তবতা: শালদুধ বা কোলস্ট্রাম হলো ‘তরল সোনা’।
ডা. পালক দেওয়ান, গাইনোকলজিস্ট, দিল্লি এনসিআর বলেন, ‘শালদুধে এমন প্রোটিন ও অ্যান্টিবডি থাকে যা নবজাতকের অন্ত্র সুরক্ষিত রাখে এবং সংক্রমণ থেকে বাঁচায়।’
ভ্রান্ত ধারণা ৪: স্তনের আকার অনুযায়ী দুধের পরিমাণ নির্ধারিত হয়
বাস্তবতা: দুধ উৎপাদন নির্ভর করে গ্রন্থিজ টিস্যু এবং হরমোনের ওপর, স্তনের আকারের ওপর নয়।
ডা. দেওয়ান বলেন, ‘দুগ্ধ উৎপাদনের মূলনীতি হল চাহিদা ও যোগান—শিশু যত বেশি দুধ খাবে, তত বেশি উৎপাদন হবে।’
ভ্রান্ত ধারণা ৫: সিজারিয়ান মায়েরা দুধ খাওয়াতে দেরি করেন
বাস্তবতা: পরিকল্পিতভাবে সিজার করালে দ্রুতই দুধ খাওয়ানো সম্ভব।
ডা. দেওয়ান বলেন, ‘অপারেশন থিয়েটারেই যদি ত্বক-সংশ্লেষ করা যায়, শিশুর দুধ খাওয়ার স্বাভাবিক রিফ্লেক্স শুরু হয়ে যায়।’
ভ্রান্ত ধারণা ৬: দুধ খাওয়ালে স্তন ঝুলে যায়
বাস্তবতা: স্তন ঝুলে যাওয়ার পেছনে দায়ী গর্ভকালীন হরমোন, ওজন ও জেনেটিক্স; শিশুকে দুধ খাওয়ানো নয়।
ডা. দেওয়ান বলেন, ‘ভালো ডায়েট, স্কিন কেয়ার ও সঠিক সহায়তা দিলে স্তনের সৌন্দর্য ঠিক রাখা সম্ভব।’
ভ্রান্ত ধারণা ৭: কিছু খাবার শিশুর পেটে গ্যাস বাড়ায়
বাস্তবতা: শিশুদের কোলিক সাধারণত পেটে গ্যাস নয়, বরং বাতাস গিলে ফেলার জন্য হয়।
ডা. কালরা বলেন, ‘ভিটামিন ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য মা ও শিশুর উভয়ের জন্য উপকারী। খাবার কমানো নয়, ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি।’
ভ্রান্ত ধারণা ৮: দুধ খাওয়ানো নিখুঁতভাবে করতে হবে
বাস্তবতা: প্রতিটি মায়ের অভিজ্ঞতা আলাদা। কেউ এক্সক্লুসিভ ব্রেস্টফিড করেন, কেউ ফর্মুলা বা পাম্প মিলিয়ে।
ডা. তেজশ্রী শ্রোত্রী, সিনিয়র কনসালটেন্ট ও আইভিএফ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘পারফেকশন নয়, সন্তুষ্টি ও ভালোবাসাই গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি আংশিক দুধ খাওয়ানোরও উপকার আছে।’
পরামর্শ: এই প্রতিবেদনটি চিকিৎসকদের পরামর্শ ও বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। কোনো ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে ল্যাকটেশন কনসালটেন্ট বা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নিন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।
রাকিব