ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৮ আগস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

কোনো লক্ষণ নেই, অথচ শরীরে ক্যানসার? জানুন স্টেজ-০ ক্যানসারের ভয়ঙ্কর সত্য!

প্রকাশিত: ২২:৪৬, ৭ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ২২:৪৭, ৭ আগস্ট ২০২৫

কোনো লক্ষণ নেই, অথচ শরীরে ক্যানসার? জানুন স্টেজ-০ ক্যানসারের ভয়ঙ্কর সত্য!

ছবিঃ সংগৃহীত

স্টেজ-০ ক্যানসার—নামটি শুনেই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে: এটা কি সত্যিকারের ক্যানসার? না কি কোনো প্রাথমিক লক্ষণ? আসলে স্টেজ-০ হলো ক্যানসারের একেবারে প্রাথমিক স্তর, যা অনেক সময় নীরবেই শরীরে গড়ে ওঠে এবং সঠিক সময়ে ধরা না পড়লে তা পরবর্তী ধাপে প্রবেশ করতে পারে।

স্টেজ-০ ক্যানসার আসলে কী?

স্টেজ-০ ক্যানসারকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে Carcinoma in Situ (CIS) বলা হয়। এটি এমন এক অবস্থা যেখানে অস্বাভাবিক কোষগুলো কেবল সেই টিস্যুর স্তরেই সীমাবদ্ধ থাকে, যেখানে তারা প্রথম জন্ম নিয়েছিল। সহজভাবে বললে, এটি এমন যেন আপনি মাটির নিচে একটি আগাছার বীজ পেয়েছেন, যেটি এখনো গাছ হয়ে চারদিকে ছড়ায়নি। অর্থাৎ, এটি নন-ইনভেসিভ বা অনুপ্রবেশহীন স্তরে থাকে এবং আশপাশের স্বাস্থ্যকর কোষে ছড়ায় না।

এটি কি সত্যিকারের ক্যানসার?

হ্যাঁ, স্টেজ-০ হলেও এটি ক্যানসার হিসেবে গণ্য করা হয়। মাইক্রোস্কোপে এগুলো দেখতে ক্যানসার কোষের মতোই এবং চিকিৎসা না করলে তা বৃদ্ধি ও ছড়িয়ে পড়ার সক্ষমতা রাখে। এ কারণেই চিকিৎসকরা একে গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন।

কোনো উপসর্গ থাকে কি?

প্রায় কখনই নয়। অধিকাংশ স্টেজ-০ ক্যানসার উপসর্গবিহীন থাকে। না থাকে ব্যথা, না কোনো গাঁট বা ফোলাভাব। এই কারণেই এটি খুব সহজে ধরা পড়ে না এবং রুটিন স্বাস্থ্য পরীক্ষাই একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়ায়।

তাহলে এটি ধরা পড়ে কীভাবে?

স্টেজ-০ ক্যানসার রুটিন স্ক্রিনিং পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়ে। যেমন:

  • স্তন ক্যানসারের জন্য ম্যামোগ্রাম, যা DCIS (Ductal Carcinoma in Situ) শনাক্ত করতে পারে

  • সার্ভিক্যাল ক্যানসারের জন্য প্যাপ টেস্ট

  • কোলন ক্যানসারের জন্য কোলনোস্কোপি, যা প্রি-ক্যানসারাস পলিপ খুঁজে বের করে

  • ত্বকের ক্যানসারের জন্য স্কিন এক্সাম

স্ক্রিনিংয়ে সমস্যা ধরা পড়লে পরের ধাপে কী হয়?

পরবর্তী ধাপ হলো বায়োপসি। এতে সংশ্লিষ্ট টিস্যুর একটি ছোট নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়, যেখানে প্যাথলজিস্ট মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা করে নিশ্চিত করেন এটি স্টেজ-০ ক্যানসার কিনা।

এই ডায়াগনোসিস মানেই কি ভবিষ্যতে ক্যানসার হবেই?

না, সবসময় এমনটি নয়। সব স্টেজ-০ কোষই ক্যানসারে রূপ নেয় না। তবে কোনটি রূপ নেবে আর কোনটি নয়—তা আগে থেকে বলা যায় না। এ কারণেই সবচেয়ে নিরাপদ হলো এগুলোকে আগেভাগেই চিকিৎসার মাধ্যমে সরিয়ে ফেলা।

স্টেজ-০ ক্যানসারের চিকিৎসা কীভাবে হয়?

চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো অস্বাভাবিক কোষ পুরোপুরি সরিয়ে ফেলা। সাধারণত এই ধাপে চিকিৎসা খুবই কার্যকর হয় এবং পরবর্তী স্টেজের তুলনায় অনেক কম জটিল ও কম আক্রমণাত্মক। চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে থাকতে পারে:

  • সার্জারি: আক্রান্ত টিস্যু এবং তার আশপাশের কিছুটা সুস্থ কোষ অপসারণ

  • রেডিয়েশন থেরাপি: সার্জারির পর থেকে যেসব কোষ থেকে যেতে পারে, সেগুলো ধ্বংস করতে

  • হরমোন থেরাপি: বিশেষ করে হরমোন-সংবেদনশীল DCIS ক্যানসারে

  • অ্যাকটিভ সারভেইলেন্স (নজরদারি): খুব কম ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে শুধু নিয়মিত পর্যবেক্ষণই যথেষ্ট হতে পারে

ভবিষ্যতের জন্য কতটা আশাব্যঞ্জক?

প্রগনোসিস বা সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। যেহেতু এটি শরীরে ছড়ায়নি এবং প্রাথমিক স্তরেই ধরা পড়ে, তাই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠা প্রায় নিশ্চিত। স্টেজ-০ ক্যানসারই সবচেয়ে সহজে প্রতিকারযোগ্য স্তর, যা প্রমাণ করে নিয়মিত চেকআপ এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা কতটা জরুরি।

উপসংহার
স্টেজ-০ ক্যানসারকে অবহেলা নয়, বরং এটি সময়মতো শনাক্ত হলে সম্পূর্ণ নিরাময়ের সুযোগ থাকে। তাই শরীর যখন কোনো সতর্কবার্তা দেয় না, তখন নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাই হয়ে ওঠে আপনার জীবনের বীমা।

সূত্রঃ https://timesofindia.indiatimes.com/life-style/health-fitness/health-news/understanding-stage-0-cancer-the-silent-beginning-of-cancer/photostory/123144768.cms?picid=123144929

ইমরান

আরো পড়ুন  

×