
ছবিঃ সংগৃহীত
তিনি বলেছিলেন, ‘বাকি জীবনটা উপভোগ করুন’—গাই বললেন, ‘আমি লড়ব’
স্টেজ–৪ বোন ক্যান্সার, শরীরজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ফুসফুসেও। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, আর কিছুই করার নেই—কোনো কেমোথেরাপি নয়, কোনো চিকিৎসা নয়—শুধু বাকি জীবনটা উপভোগ করার পরামর্শ।
কিন্তু গাই এই ‘শেষ কথা’ মেনে নেননি। পেরিয়ে গেছে ছয় বছর, এবং তিনি এখন সুস্থ।
এই ছয় বছরে গাই যে পথ বেছে নিয়েছেন, তা প্রচলিত চিকিৎসার বাইরে। কেমো বা রেডিয়েশনের মতো আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণ না করে, তিনি নির্ভর করেছেন গবেষণা, প্রাকৃতিক খাদ্যাভ্যাস, ও কঠিন উপবাসের ওপর। এ এক অনন্য পথচলা—যা শুধু তার জীবন বাঁচায়নি, বরং অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা।
ক্যান্সারের মেটাবলিজমকে বুঝে শুরু
গাই বুঝতে চেষ্টা করেন, ক্যান্সার কোষ কীভাবে জ্বালানি সংগ্রহ করে। তার মতে, ক্যান্সার কোষ স্বাভাবিক কোষের মতো ‘মৃত্যুবরণ’ করতে পারে না (যা অ্যাপোপটোসিস নামে পরিচিত) এবং তারা শক্তি সঞ্চয়ের জন্য ভিন্ন পথ বেছে নেয়।
গবেষণায় দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্যান্সার কোষ গ্লুকোজ থেকে শক্তি নেয়। কিছু তত্ত্বে এমনটাও বলা হয়, গ্লুকোজ না থাকলে তারা কিটোন থেকেও শক্তি সংগ্রহ করতে পারে। এই জ্ঞান থেকে গাই সিদ্ধান্ত নেন, ক্যান্সারের জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করতে হবে—খাদ্যাভ্যাস বদলে।
উপবাস: কেবল খাবার বন্ধ নয়, শত্রুকে না খাইয়ে মারা
গাই নিয়মিত দীর্ঘ সময় উপবাসে থাকেন। কখনো সাত দিন, কখনো ৪০ দিন পর্যন্ত। তার কোনো নির্দিষ্ট রুটিন ছিল না—তিনি বিশ্বাস করতেন, ক্যান্সার খুব চতুর। তাই তাকে প্রতিনিয়ত চমকে দিতে হবে।
গবেষণায় বলা হয়, দীর্ঘ সময় উপবাস করলে কোষের মেরামত প্রক্রিয়া সক্রিয় হয়, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, এমনকি ক্যান্সার কোষের বিপাকে সমস্যা তৈরি হয়। তবে, দীর্ঘ সময় উপবাস ঝুঁকিপূর্ণ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া করা উচিত নয়।
যারা উপবাসে অক্ষম, তাদের জন্য উপবাস-মতো ডায়েট
গাই ও জনপ্রিয় স্বাস্থ্যগবেষক ড. বার্গ বিকল্প হিসেবে কথা বলেন ‘ফাস্টিং-মিমিকিং ডায়েট’ (FMD) নিয়ে। এটি ড. ভ্যাল্টার লঙ্গো উদ্ভাবিত একটি পরিকল্পনা, যেখানে ৫ দিন ধরে মাত্র ৮০০ ক্যালোরির সবজি ও তেলভিত্তিক খাদ্য গ্রহণ করা হয়—যেমন: ব্রোকলি, জলপাই তেল, স্যুপ ও হারবাল চা।
গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে, এটি প্রদাহ কমাতে, রোগপ্রতিরোধ বাড়াতে এবং কেমো চলাকালীন শরীরকে সাহায্য করতে পারে। তবে এটি চিকিৎসা নয়—চিকিৎসার বিকল্পও নয়।
প্রাকৃতিক উপাদান ও স্ট্র্যাটেজিক সাপ্লিমেন্ট
গাই, ক্যান্সার গবেষক ড. থমাস এন. সেফ্রিডের সহায়তায় এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান গ্রহণ করেন যা ক্যান্সার কোষের কিটোন ব্যবহার করার ক্ষমতা (SCOT এনজাইম) বন্ধ করতে পারে।
তিনি গার্লিকের এলিসিন, গ্রিন টি এক্সট্র্যাক্টসহ বেশ কিছু উপাদান গ্রহণ করেন, যেগুলো প্রাথমিক গবেষণায় ক্যান্সারের জ্বালানি ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
তবে, এগুলোর বেশিরভাগই প্রাণীর ওপর গবেষণায় সীমাবদ্ধ। এখনো মানবদেহে প্রমাণিত হয়নি যে, এসব উপাদান একাই ক্যান্সার সারাতে পারে। তবে সহায়ক হিসেবে কার্যকর হতে পারে।
বারবার ফিরে আসার ভয়, তাই প্রোটোকলেও পরিবর্তন
গাই শুধু সারিয়ে তুলতে চায়নি নিজেকে, চেয়েছে ফিরে আসার সম্ভাবনাকেও রুখতে। তার এক বন্ধু ক্যান্সার জয় করার এক বছর পর ফের আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সেই ঘটনার পর গাই তার প্রোটোকলে আরো পরিবর্তন আনেন, সতর্ক হন।
তিনি বিশ্বাস করেন, ক্যান্সার নিজেও পরিবর্তিত হয়। তাই লড়াইটা একবারের নয়—চলতে থাকে। তার বর্তমান প্রোটোকল ছয় বছর আগের মতো নয়। পরিবর্তনশীল মনোভাব ও নিয়মই তাকে আজও বাঁচিয়ে রেখেছে বলে বিশ্বাস তার।
সতর্কতা ও প্রেরণা—দুটোই
গাইয়ের গল্প নিঃসন্দেহে অনুপ্রেরণাদায়ক। কিন্তু মনে রাখতে হবে, প্রতিটি রোগীর অবস্থা আলাদা। তার পথে হাঁটা মানেই সবার জন্য নিরাপদ বা কার্যকর হবে—তা নয়। তবে তার গল্প একটিই সত্য তুলে ধরে— একাগ্রতা, সচেতনতা ও পরিবর্তনের সাহস জীবন বাঁচাতে পারে।
নিয়মিত না খাওয়া কি শরীরের ক্ষতি করে?
হ্যাঁ, খাওয়ার সঠিক সময় না মানলে শরীরের স্বাভাবিক ছন্দ বা সার্কাডিয়ান রিদম বিঘ্নিত হয়। এতে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়, টাইপ–২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। হজমেও সমস্যা হতে পারে—যেমন গ্যাস্ট্রিক, বমি ভাব, বদহজম ইত্যাদি।
স্ট্রেস কমালে কি ভয়ানক কিছু রোগ এড়ানো সম্ভব?
হ্যাঁ, স্ট্রেস কমানো অনেক মারাত্মক রোগের ঝুঁকি কমায়। দীর্ঘমেয়াদি স্ট্রেস শরীরে কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিনের মাত্রা বাড়ায়, যা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ইমরান