
ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে আবারও আগুনের হলকা। একের পর এক হামলা-পাল্টা হামলায় রক্তে রঞ্জিত লেবানন-ইসরাইল সীমান্ত। চলমান এই সংঘাতে এবার শক্ত অবস্থান নিয়েছে লেবাননের শিয়া প্রতিরোধ সংগঠন হিজবুল্লাহ। ইসরাইলের বিরুদ্ধে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে তারা। আর তাতেই বাড়ছে উত্তেজনার পারদ।
ইসরাইলের হামলা এবং যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মধ্যেও হিজবুল্লাহ স্পষ্ট করে দিয়েছে—তারা কোনভাবেই দখলদার শক্তির কাছে মাথানত করবে না। সংগঠনটির ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল নাঈম কাসেম হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “গত আট মাসে ইসরাইল যত নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে, মাত্র এক ঘণ্টার ক্ষেপণাস্ত্র হামলাতেই তা ধূলিসাৎ করে দেয়া সম্ভব।” তাঁর এই বক্তব্য শুধু ইসরাইল নয়, গোটা বিশ্বের কাছে এক ধরনের সতর্কবার্তা হিসেবেই ধরা পড়েছে।
হিজবুল্লাহর মতে, অস্ত্র হস্তান্তরের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ অযৌক্তিক এবং বিপজ্জনক। কাসেম স্পষ্ট বলেন—“আমরা যদি অস্ত্র ছেড়ে দেই, তাও ইসরাইল তাদের আগ্রাসন বন্ধ করবে না।”
এই প্রেক্ষাপটে লেবানন সরকার দেশের সেনাবাহিনীকে এমন একটি পরিকল্পনা তৈরির দায়িত্ব দিয়েছে যাতে চলতি বছরের শেষ নাগাদ কেবল রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতেই অস্ত্র থাকে। এতে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্রীকরণের পথ তৈরি করা হচ্ছে। অথচ দেশের জাতীয় সংসদেই হিজবুল্লাহর এমপি আলিফা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “ইসরাইল যদি লেবাননের দখলদারিত্ব না ছাড়ে, লেবানিজ বন্দিদের মুক্তি না দেয় এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি না মানে—তাহলে নিরস্ত্রীকরণ অসম্ভব।”
এই পটভূমিতে হিজবুল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে লেবাননের রাজনৈতিক অঙ্গন বিভক্ত। কেউ মনে করেন, হিজবুল্লাহ একটি বৈধ প্রতিরোধ সংগঠন, অন্যদিকে কেউ এটিকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা একটি সামরিক শক্তি হিসেবে দেখেন। এখন ইসরাইলি আগ্রাসন ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সেই বিতর্ক আরও তীব্রতর হয়েছে।
গত বছরের সংঘাতে হিজবুল্লাহ বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বহু নেতা নিহত হয়েছেন, হাজারো যোদ্ধা ও বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ, যার মধ্যে রয়েছে লেবানের শিয়া সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য অংশ।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এইসব ক্ষতির মধ্যেও হিজবুল্লাহ নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে। ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আরও শক্তিশালী করছে তারা। এবার হিজবুল্লাহর কাছে চ্যালেঞ্জ—কি করে তারা ইসরাইলি আক্রমণ প্রতিহত করবে এবং নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করবে। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি নতুন এক বাঁকে মোড় নিচ্ছে—যেখানে এক ঘণ্টার হুমকিই হতে পারে যুদ্ধের অগ্নিসংকেত।
শেখ ফরিদ