
শিশুরা বড় হলে যেন বাবা-মাকে সম্মান করে, সে চাওয়া প্রতিটি পরিবারেরই স্বপ্ন। তবে অনেক সময় এমন কিছু অভ্যাস অভিভাবকদের মধ্যে গড়ে ওঠে, যা অনিচ্ছাকৃতভাবেই সন্তানের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে দেয় এবং ভবিষ্যতে সম্মানের জায়গাটিও দুর্বল করে ফেলে। সম্মান এমন একটি বিষয়, যা আচরণ এবং প্রতিদিনকার ব্যবহারের মাধ্যমেই তৈরি হয়।
এই সম্মান তৈরি করতে হলে কিছু ক্ষতিকর অভ্যাস এখনই বাদ দেওয়া জরুরি। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিচের অভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করলে সন্তানের সঙ্গে গড়ে উঠতে পারে আরও গভীর ও শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক।
১. অতিরিক্ত সমালোচনা করা
অতিমাত্রায় সমালোচনার মাধ্যমে শিশু নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে এবং নীরবে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয়। প্রতিটি আচরণের পেছনে যদি নেতিবাচক মন্তব্য থাকে, তাহলে শিশুর মনেও সেই নেতিবাচক ধারণাই গেঁথে যায়। বরং গঠনমূলক ও উৎসাহমূলক বক্তব্যই সন্তানের মধ্যে সম্মানের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে।
২. অনুভূতির অবমূল্যায়ন করা
শিশুর দুঃখ, ক্ষোভ কিংবা হতাশাকে ছোট করে দেখা একধরনের অবজ্ঞা। “এতটা ভাবার কী আছে?” এই ধরনের মন্তব্য শিশুকে শেখায়, তার অনুভূতির কোনও মূল্য নেই। বরং শিশুর অনুভূতিকে গুরুত্ব দিয়ে সহমর্মিতার সঙ্গে পাশে থাকলে সে বুঝতে পারে, তার আবেগকে সম্মান করা হচ্ছে।
৩. অসততা প্রদর্শন করা
বাবা-মা যদি কথায় ও কাজে অসততা দেখান যেমন বাড়িতে এক কথা, বাইরে আরেক কথা বলেন তাহলে শিশুর ভেতরে বিশ্বাস ও শ্রদ্ধাবোধ দুর্বল হয়ে যায়। শিশুরা বড়দের আচরণ থেকে শিখে। তাই অভিভাবকরা সততার অনুশীলন করলে তারাও সেটিই গ্রহণ করে।
৪. অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ
শিশুর প্রতিটি সিদ্ধান্ত যদি বড়দের নিয়ন্ত্রণে থাকে, তবে সে নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হারায়। কী পরবে, কী বলবে বা কাদের সঙ্গে চলবে এই সবকিছুতে হস্তক্ষেপ তাকে বিরক্ত ও বিদ্রোহী করে তুলতে পারে। কিছুটা স্বাধীনতা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দিলে, শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও শ্রদ্ধা গড়ে ওঠে।
৫. অনিয়মিত শৃঙ্খলা ও সীমারেখা
নিয়ম একবার কঠোরভাবে মানতে বাধ্য করা হচ্ছে, আরেকবার তা উপেক্ষা করা হচ্ছে এ ধরনের দ্বৈত আচরণ শিশুদের মানসিকভাবে বিভ্রান্ত করে। স্থির ও যুক্তিযুক্ত নিয়ম শৃঙ্খলা থাকলে শিশুর মধ্যে নিরাপত্তাবোধ তৈরি হয়, যা সম্মানের ভিত্তি গড়ে তোলে।
৬. অন্যকে অসম্মান দেখানো
শিশু কেবল যা বলা হয়, তা-ই শেখে না যা দেখা হয়, তাও শেখে। যদি বড়রা আশেপাশের মানুষদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন, তবে শিশুও সেই আচরণ অনুকরণ করতে পারে। অন্যদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ দেখানোই সম্মান শেখানোর অন্যতম উপায়।
৭. বাহ্যিক স্বীকৃতিকে অতিমূল্যায়ন করা
শুধু নম্বর, পুরস্কার বা প্রশংসার ভিত্তিতে সন্তানের মূল্যায়ন করলে সে ভাবতে শেখে, ভালোবাসা ও সম্মান অর্জনের জন্য কিছু ‘অর্জন’ করতে হয়। এতে শিশুর মধ্যে আত্মমূল্যায়নের দুর্বলতা তৈরি হয় এবং সম্পর্কও হয়ে পড়ে শর্তাধীন।
সন্তান যদি বুঝতে পারে, তার অনুভূতি শোনা হচ্ছে, তার সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এবং সে এক নিরাপদ ও সম্মানপূর্ণ পরিবেশে বেড়ে উঠছে তবে তার মধ্যে প্রকৃত সম্মানবোধ তৈরি হবে। প্রতিদিনের ছোট ছোট আচরণেই গড়ে ওঠে সেই পরিবেশ। এখনই সময় নিজ নিজ অভ্যাসগুলোর দিকে ফিরে তাকানোর, এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের মাধ্যমে সন্তানের সঙ্গে গড়ে তোলার একটি সম্পর্ক যেখানে সম্মান থাকবে মজবুত ভিতের মতো।
সূত্র:https://tinyurl.com/2vcvfhtt
আফরোজা