
ছবি: সংগৃহীত।
বাংলাদেশে ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি নিয়ে বহুদিন ধরেই জটিলতা, বিভ্রান্তি ও আইনি দ্বন্দ্ব চলছিল। বিশেষ করে জমা ভাগ না করে সম্পত্তি ভাগাভাগি, এক দাগ থেকে নামজারি বা বিক্রির ক্ষেত্রে আইনি অনিশ্চয়তা ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে। তবে সম্প্রতি ভূমি মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র ও নির্দেশনায় এসব বিভ্রান্তির অবসান ঘটেছে।
এখন থেকে যদি ওয়ারিশরা পারস্পরিক সম্মতিতে "আপোষ বণ্টননামা" দলিল করে থাকেন, তাহলে যে যার অংশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট একটি দাগ থেকেই নামজারি করতে পারবেন। অর্থাৎ, কারও ভাগে যদি ১০ শতাংশ জমি পড়ে এবং তা যদি একটি নির্দিষ্ট দাগে নির্ধারিত হয়, তাহলে তিনি সেই এক দাগ থেকেই সম্পত্তির মালিক হিসেবে নামজারি করতে পারবেন এবং বিক্রি-হস্তান্তরসহ সব ধরনের আইনি কার্যক্রম চালাতে পারবেন।
কীভাবে এটি সম্ভব?
আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি অবিভক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়, যতক্ষণ না তা দলিলভুক্ত হয়। আগে এই অবিভক্ত সম্পত্তি দাগে দাগে ভাগ করে নেওয়ার নিয়ম প্রচলিত ছিল। এতে একই ওয়ারিশের মালিকানা অনেক দাগে ছড়িয়ে পড়ত, যা পরবর্তীতে বিক্রয় বা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা তৈরি করত।
এখন নতুন প্রক্রিয়ায় ওয়ারিশরা যদি পারস্পরিক সম্মতিতে আপোষ বণ্টননামা দলিল করেন এবং রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করেন, তাহলে ভূমি অফিস সেটি অনুসারে এক দাগেই নামজারি করে দেবে। এতে কেউ ১০ শতাংশ একটি নির্দিষ্ট দাগে পেলে, সেই দাগেই সে সম্পূর্ণ মালিকানা পাবে এবং ভবিষ্যতে কোনো ওয়ারিশ সেই সম্পত্তির ওপর দাবি করতে পারবে না।
আইনি স্বচ্ছতা ও শান্তিপূর্ণ মালিকানা নিশ্চিত
এই পদ্ধতির মাধ্যমে একদিকে যেমন জমির দখল ও মালিকানা নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও মামলা মোকদ্দমা কমবে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষও সঠিকভাবে নিজের প্রাপ্য সম্পত্তি ভোগ করতে পারবে। অনেক সময় দেখা যেত, মৌখিকভাবে ভাগাভাগির পরেও ভবিষ্যতে উত্তরাধিকারীরা এসে মামলা করত। নতুন প্রক্রিয়ায় এই সমস্যা আর থাকবে না।
সতর্কতা ও করণীয়
যদি আপনি জমা ভাগ না করে শুধুই ওয়ারিশ সনদের মাধ্যমে নামজারি করেন, তবে দাগে দাগেই মালিকানা হবে এবং আপনি সেই দাগ অনুযায়ীই বিক্রি করতে পারবেন। তবে আপোষ বণ্টননামা দলিল করে যদি আপনি নির্দিষ্ট একটি দাগ থেকে সম্পত্তি নেন, তাহলে আপনি শুধুই সেই দাগের মালিক হবেন এবং সম্পূর্ণ আইনগত অধিকার পাবেন।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে স্পষ্ট বলা হয়েছে—আপোষ বণ্টননামা দলিল ছাড়া এক দাগ থেকে অংশবিশেষ বিক্রি করলে তা বৈধ হবে না। তাই আইনি সুরক্ষার জন্য রেজিস্ট্রি করা দলিল আবশ্যক।
এই নতুন নির্দেশনা ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আরও সহজ ও সংঘাতমুক্ত করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা, যাঁরা দূর থেকে জমি ব্যবস্থাপনায় সমস্যায় পড়েন, তাঁদের জন্য এটি হবে স্বস্তির খবর।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=hAyX-RhvzFw&ab_channel=LegalKnowledge
নুসরাত