
ছবিঃ সংগৃহীত
দীর্ঘ দুই দশক ধরে রাশিয়া যে ‘PAK DA’ স্টেলথ বোমার নির্মাণ প্রকল্প চালিয়ে আসছে, সেটি এখন কার্যত এক “ব্যর্থ উদ্যোগ” হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। এই যুদ্ধবিমানটি এক সময় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন B-21 Raider-এর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
PAK DA কী?
PAK DA (Perspektivnyi Aviatsionnyi Kompleks Dalney Aviatsii)—অর্থাৎ ‘দূরপাল্লার বিমান ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ কাঠামো’—একটি স্টেলথ বোমার বিমান, যেটি মূলত পুরনো Tu-95 এবং Tu-160 বোমারগুলোর জায়গা নিতে কথা ছিল। এই বিমান তৈরির দায়িত্বে আছে রাশিয়ার খ্যাতনামা টুপোলেভ ডিজাইন ব্যুরো।
বিমানটি পরিকল্পনা করা হয়েছিল নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো মাথায় রেখে:
- ৩০ টন পর্যন্ত পারমাণবিক বা প্রচলিত অস্ত্র বহনে সক্ষম
- প্রায় ৭,৫০০ মাইল পর্যন্ত দূরত্বে অভিযান চালাতে পারবে
- উন্নত স্টেলথ প্রযুক্তি ও রাডার ফাঁকি দেওয়ার সক্ষমতা
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ড্রোন সহযোগিতার প্রযুক্তি (loyal wingman)
কিন্তু এত প্রতিশ্রুতিশীল বৈশিষ্ট্যের পরও, বাস্তবে বিমানটি এখনো আকাশে উঠতেই পারেনি।
উৎপাদনের প্রতিশ্রুতি, বাস্তবের ব্যর্থতা
২০২১ সালে রাশিয়ার তৎকালীন উপপ্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, PAK DA-এর প্রোটোটাইপ তৈরি শুরু হয়েছে এবং ২০২৩ সালের মধ্যে সেটি উড়বে। পূর্ণাঙ্গ উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০২৭ সালে।
কিন্তু এরপরই ঘটে ইউক্রেন আক্রমণের ঘটনা। যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা এবং অর্থনৈতিক চাপে প্রকল্পটি কার্যত থমকে যায়। প্রযুক্তিগত উন্নয়নও আর তেমন অগ্রসর হয়নি।
এখনকার পরিস্থিতি এমন যে, দুই দশকের গবেষণা ও বিপুল ব্যয়ের পরও বিমানটি এখনও পরীক্ষামূলক উড্ডয়নেই যেতে পারেনি।
প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও বাস্তবতা
PAK DA প্রকল্প যে কেন পিছিয়ে পড়েছে, তার অনেকগুলো কারণ রয়েছে:
আধুনিক স্টেলথ প্রযুক্তিতে দুর্বলতা: বিমানটির বডি প্যানেল যথেষ্ট সূক্ষ্মভাবে যুক্ত করা যাচ্ছে না, ফলে রাডার প্রতিফলন কমানো যাচ্ছে না।
ইঞ্জিনের সংকট: একে বলা হচ্ছে ষষ্ঠ প্রজন্মের সাবসনিক বোমার, কিন্তু এর ইঞ্জিন ও নির্মাণ উপাদান অনেকটাই পুরনো প্রযুক্তিনির্ভর।
কারিগরি দক্ষতার ঘাটতি: টুপোলেভ বা অন্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো এর আগে কখনো এত উন্নত ফ্লাইং-উইং ডিজাইন তৈরি করেনি।
মানবসম্পদ সংকট: এই খাতে দক্ষ প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের অনেকেই ইতোমধ্যে অন্য প্রকল্পে চলে গেছেন।
Su-57 নামক রাশিয়ার স্টেলথ ফাইটার বিমানও একই ধরনের প্রযুক্তিগত সমস্যায় পড়েছিল। তাহলে PAK DA-এর ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি আলাদা হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?
বহির্বিশ্বের প্রতিক্রিয়া ও সন্দেহ
রাশিয়া প্রায়ই বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু বাস্তবে সেসব বাস্তবায়ন হয় না—এমন সমালোচনার সঙ্গে বহুদিন ধরেই পরিচিত। PAK DA তার সর্বশেষ উদাহরণ।
এই বিমান যদি সত্যিই এত ক্ষমতাধর হত, তাহলে এত বছরেও আকাশে না ওড়া কেন?
স্বপ্নের প্রজেক্ট, বাস্তবে ব্যর্থতা
PAK DA নির্মাণে রাশিয়ার একাধিক বিমান কারখানা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান যুক্ত থাকলেও, এদের কারোরই আধুনিক স্টেলথ প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য নেই। বরং বরাবরই তারা পিছিয়ে থেকেছে।
যতটা শোনা গিয়েছিল, বাস্তবে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। আর তাই, অনেক বিশ্লেষক বলছেন—PAK DA বলতে গেলে এখন “শুধু গল্প”।
বিশ্ব যখন আধুনিকায়নের দিকে দ্রুত এগোচ্ছে, তখন রাশিয়ার এই “আধুনিক যুদ্ধবিমান” প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ক্রমেই অস্পষ্ট হয়ে উঠছে। PAK DA কি আদৌ আকাশে উড়বে? নাকি এটি ইতিহাসের পাতায় “ব্যর্থতা” হিসেবেই থেকে যাবে—তা সময়ই বলে দেবে।
মারিয়া