
ছবি: সংগৃহীত
মিত্র ও সহযোগীদের মধ্যে গোপনে অনেক কিছুই ঘটে, যা স্বাভাবিক হলেও কিছু কিছু বিষয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তৈরি হয় অস্বস্তি ও উদ্বেগ। তেমনি একটি ইস্যু নিয়ে সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে ইরান ও রাশিয়ার গোপন যোগাযোগ—বিশেষ করে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে রুশ সহযোগিতা। ফাইনান্সিয়াল টাইমসের তথ্যসূত্রে মস্কো টাইমস এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যেখানে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ইরানের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাশিয়া সফর করে। সফরের উদ্দেশ্য ছিল পুরোপুরি সামরিক, যা নতুন করে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে ইরান-রাশিয়া সম্পর্ককে।
প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন পরমাণু পদার্থবিদ এবং ইরানের প্রতিরক্ষা উদ্ভাবন ও গবেষণা সংস্থার জ্যেষ্ঠ সদস্য আলি কালফান্দ—যাকে যুক্তরাষ্ট্র ২০০৩ সালের আগের গোপন পারমাণবিক কর্মসূচির উত্তরসূরি হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে। রাশিয়া সফরকালে দলটি পরমাণু ও সমরাস্ত্র সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি স্থাপনা পরিদর্শন করে, রুশ বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে এবং বিভিন্ন স্তরের পারমাণবিক প্রযুক্তি ঘুরে দেখে। সফরের আরও বিস্ময়কর দিক হলো, ইরানের নিষিদ্ধঘোষিত প্রতিষ্ঠান দামাভান টেক রাশিয়াকে ট্রিটিয়াম, স্ট্রন্টিয়াম এবং নিকেল বিক্রির প্রস্তাব দেয়। যদিও পরবর্তীতে রাশিয়া ওই পদার্থগুলো ইরানকে সরবরাহ করেছে কিনা, সে বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
এই সফরে ইরানি প্রতিনিধিরা রুশ পদার্থবিদ ওলেক মাসলিনিকভবের সাথেও সাক্ষাৎ করেন, যিনি ক্লিস্টন্স প্রযুক্তির জন্য পরিচিত মুখ। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, রুশ নিরাপত্তা সংস্থা এফএসবির অনুমোদন ছাড়াই ইরানি দলটি রাশিয়ার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা পরিদর্শন করে। এই সফরে অংশ নেওয়া অধিকাংশ সদস্যই পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত। যেমন রুহুল্লাহ আজিমিরা—মালেক আসতার বিশ্ববিদ্যালয়ের তেজস্ক্রিয়তা বিশেষজ্ঞ—যে বিশ্ববিদ্যালয়টির ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের সামরিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অন্যদিকে সদস্য সরস মুফাতাশামী নিউট্রোন জেনারেশন প্রযুক্তির বিশেষজ্ঞ, যাদের কার্যক্রম পশ্চিমা গোয়েন্দাদের চোখে সবসময় নজরদারির আওতায় থাকে।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দাবি, ইরান এখনো সরাসরি পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন শুরু করেনি, তবে রাশিয়া থেকে অর্জিত প্রযুক্তি ও জ্ঞান ব্যবহার করে যদি তারা ভবিষ্যতে তা শুরু করে, তাহলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এদিকে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে আসছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো হামলার শিকার হলে সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যদিও সেই দাবির স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ।
বর্তমানে ইরানের বুশেহর পারমাণবিক কেন্দ্রে ২০০-র বেশি রুশ বিজ্ঞানী সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। মস্কো আরও দুটি পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণসহ ইরানে মোট আটটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে। ফলে স্পষ্ট যে, ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো পারমাণবিক সমঝোতায় পৌঁছায়, তবে রাশিয়ার কৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থ বড় ধরণের ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।
ফাইনান্সিয়াল টাইমস রাশিয়া ও ইরান উভয় পক্ষকে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর অনুরোধ জানালেও, এখনো কোনো সাড়া মেলেনি। এতে জল্পনা আরও ঘনীভূত হয়েছে যে, রাশিয়া-ইরান জোটের মধ্যে এমন কিছু চলছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য এক নতুন হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে।
শেখ ফরিদ