ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৭ আগস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২

আরো এক মীরজাফরকে ফাঁসিতে ঝোলালো ইরান

প্রকাশিত: ২১:৩৩, ৬ আগস্ট ২০২৫

আরো এক মীরজাফরকে ফাঁসিতে ঝোলালো ইরান

ছবি: সংগৃহীত

আরও এক বিশ্বাসঘাতককে কঠিন পরিণতি দিল ইরান। মোসাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে দোষী সাব্যস্ত রুজবেহবাদীকে বুধবার সকালে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। আদালতের চূড়ান্ত রায় ঘোষণার একদিনের মধ্যেই এই রায় কার্যকর হয়। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ইরান শুধু এক ব্যক্তিকে সাজা দিল না, বরং গোটা বিশ্বকে জানিয়ে দিল—জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে কোনো মীরজাফরকে ছাড় দেওয়া হবে না।

তবে এই ঘটনা নিছক একজন গুপ্তচরের শাস্তির চিত্র নয়। বরং এটি এক গভীর আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের পর্দা উন্মোচন—যেখানে সাইবার রিক্রুটমেন্ট, গোপন বৈঠক, আধুনিক প্রযুক্তি এবং ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যার মতো চাঞ্চল্যকর তথ্য জড়িয়ে আছে।

রুজবেহবাদী ইরানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল সরকারি সংস্থায় কর্মরত ছিলেন। তার ছিল শীর্ষ পর্যায়ের গোপন তথ্যের প্রবেশাধিকার। সেই সুযোগকেই কাজে লাগায় ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। সাইবার মাধ্যমে তার সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ করে একজন কর্মকর্তা, যার ছদ্মনাম ‘অ্যালেক্স’। পরিচয় যাচাইয়ের পর রুজবেকে রিক্রুট করা হয় এবং পরবর্তীতে ‘কেভিন’ নামের একজন হন তার নিয়মিত হ্যান্ডলার।

রুজবেহের অনুরোধে মাসিক পারিশ্রমিক পাঠানো হতো ডিজিটাল মুদ্রার মাধ্যমে। তাকে সরবরাহ করা হয় প্রযুক্তিগত ট্রেনিং ও নিরাপদ যোগাযোগের জন্য বিশেষ যন্ত্রপাতি। এসবের মাধ্যমেই তিনি স্পর্শকাতর তথ্য পাঠাতেন মোসাদকে।

রুজবেহের মিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় পাঁচটি গোপন বৈঠক, যেগুলো ছিল সিনেমার মতো উচ্চ নিরাপত্তা বেষ্টিত। এসব বৈঠকে তাকে দেওয়া হতো নতুন নির্দেশনা, আর ফিরে গিয়ে তিনি পাঠাতেন বিশদ রিপোর্ট, প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ এবং নানা গোপন আপডেট।

এই বিশ্বাসঘাতকতার সবচেয়ে ভয়াবহ অধ্যায়টি হলো—তিনি এমন এক ইরানি পারমাণবিক বিজ্ঞানীর পরিচয় দেন, যিনি পরে ইসরাইলি হামলায় নিহত হন। এটিই ছিল তার সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা।

তবে ইরানের নিরাপত্তা সংস্থা তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিল বহুদিন ধরে। ভিয়েনা থেকে ফেরার পরই শুরু হয় নিবিড় নজরদারি। এক গোপন মিটিংয়ের তথ্য হাতে আসার পর তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং দীর্ঘ তদন্ত শেষে ইসরাইলের শত্রু রাষ্ট্রের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক, রাষ্ট্রদ্রোহ, অর্থ গ্রহণ এবং তথ্য পাচারের দায়ে অভিযোগ গঠিত হয়।

৬ আগস্ট, ২০২৫—সকালেই তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

এই ঘটনার আগেও ইরানে অন্তত তিনজন মোসাদ গুপ্তচরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। শুধু ২০২৫ সালের জুন মাসেই, ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী মোসাদের সঙ্গে যুক্ত ৭০০-এর বেশি গুপ্তচরকে গ্রেফতার করেছে। তারা সম্প্রতি তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে মোসাদের গোপন ড্রোনঘাঁটিও ধ্বংস করেছে, যেখানে ইরানবিরোধী হামলার প্রস্তুতি চলছিল।

রুজবেহবাদীর মৃত্যুদণ্ডের মধ্য দিয়ে ইরান আন্তর্জাতিকভাবে কড়া বার্তা দিয়েছে— “জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আপোষ নয়। বিশ্বাসঘাতকদের পরিণতি একটাই: কঠোরতম শাস্তি।”
 

শেখ ফরিদ 

×