ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৭ আগস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২

রাশিয়ান তেল আমদানির জেরে ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপালেন ট্রাম্প!

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ৬ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ২২:৩৬, ৬ আগস্ট ২০২৫

রাশিয়ান তেল আমদানির জেরে ভারতীয় পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপালেন ট্রাম্প!

রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি অব্যাহত রাখায় ভারতের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তিনি ভারতীয় পণ্যে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের নির্দেশ দিয়েছেন, যা আগে থেকেই চলমান ২৫ শতাংশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মোট ৫০ শতাংশে দাঁড়াল।

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারত এখন যুক্তরাষ্ট্রে অন্যতম উচ্চ শুল্কহারভুক্ত দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত হলো। এর আগে ব্রাজিলই একমাত্র দেশ ছিল, যার পণ্যে এমন উচ্চ আমদানি শুল্ক কার্যকর ছিল।

নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন একটি 'জাতীয় জরুরি অবস্থা' তৈরি করেছে। এ অবস্থায় রাশিয়ার জ্বালানি পণ্য আমদানিকারী দেশগুলোর ওপর চাপ বাড়ানো ‘প্রয়োজনীয় ও যুক্তিযুক্ত’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ট্রাম্প লিখেছেন, “আমি মনে করি ভারতের সরকার সরাসরি বা পরোক্ষভাবে রাশিয়ান তেল আমদানি করছে। রাশিয়ার কর্মকাণ্ড ও নীতিমালা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা এবং বৈদেশিক নীতির জন্য অস্বাভাবিক ও গভীর হুমকি তৈরি করছে।”

শুল্ক বৃদ্ধির এ আদেশ আগামী ২১ দিনের মধ্যে কার্যকর হবে। এর মধ্যে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে হার পুনর্বিবেচনার সুযোগ রাখা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের টানাপোড়েন

শুল্কবৃদ্ধির ঘোষণা এমন এক সময়ে এল, যখন ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যে চলমান পাঁচ দফা বাণিজ্য আলোচনাও অচলাবস্থায় পড়েছে। এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারত সফর করে এই আলোচনা এগিয়ে নিতে চাইলেও কার্যত কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো যায়নি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি গত কয়েক বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্য সম্পর্কের সবচেয়ে বড় সংকট। বিশেষ করে প্রতিবেশী পাকিস্তান যেখানে জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে স্বস্তিকর শুল্ক চুক্তি করতে সক্ষম হয়েছে, সেখানে ভারতের এই ব্যর্থতা আরও চোখে পড়ার মতো।

এই ঘোষণার সঙ্গে মিল রেখে জানা গেছে, চলতি মাসেই চীনের তিয়ানজিন শহরে একটি নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ নিতে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সাত বছরের মধ্যে এটাই হতে যাচ্ছে চীনে মোদির প্রথম সফর, যা দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনা প্রশমনে ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। সম্মেলনে রাশিয়ার প্রতিনিধিদেরও উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

ট্রাম্প ও মোদির সম্পর্ক এতদিন বেশ ঘনিষ্ঠ বলেই বিবেচিত হতো। ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে মোদিকে নিয়ে ‘হাউডি মোদি’ নামে একটি জমকালো জনসভা করেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ স্লোগানের অনুকরণে মোদি স্লোগান তুলেছিলেন ‘মেইক ইন্ডিয়া গ্রেট এগেইন’।

তবে ট্রাম্পের দৃষ্টিতে ভারতের অর্থনৈতিক নীতি বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘অন্যায্য’ ছিল। তাই বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ট্রাম্প এখন আরও কড়া অবস্থান নিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বাণিজ্য পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারত যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৮৭.৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানি করেছে। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৪১.৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।

সম্প্রতি ট্রাম্প দাবি করেন, মে মাসে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষের পর তিনিই উভয় দেশের মধ্যে শান্তি স্থাপন করেছেন। তবে ভারত সরকার তার এই দাবি স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/3t76s8w7

আফরোজা

×