
রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখায় ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে আগের ২৫ শতাংশসহ ভারতীয় পণ্যে মোট শুল্ক দাঁড়ালো ৫০ শতাংশ।
বুধবার (০৬ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার কয়েক ঘন্টা পর হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার জ্বালানি কেনার জন্য ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন।
নির্বাহী আদেশ অনুসারে, আগামী ২১ দিন পর এই অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকর হবে, সেই পর্যন্ত পূর্বনির্ধারিত ২৫ শতাংশ শুল্ক বজায় থাকবে।
আদেশে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আমি মনে করি ভারত সরকার বর্তমানে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, রাশিয়ান ফেডারেশনের তেল আমদানি করছে... ফলে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর একটি মূল্য নির্ধারণ শুল্ক আরোপ করা প্রয়োজন...।’
এরআগে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (০৫ আগস্ট) মার্কির সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি কিনে সেই তেল আবার খোলা বাজারে বিক্রি করে লাভ করছে। তার ভাষায়, রাশিয়া ইউক্রেনে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে, অথচ ভারত তাদের কাছ থেকে তেল কিনে সেগুলো আবার বিক্রি করে প্রচুর অর্থ আয় করছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ভারতকে ভালো বাণিজ্যিক মিত্র বলা যায় না। তারা আমাদের সঙ্গে প্রচুর ব্যবসা করে, আমাদের দেশে পণ্য রফতানি করে। কিন্তু আমরা তাদের সঙ্গে তেমন বাণিজ্য করি না। এই অসম বাণিজ্যের কারণে আমরা তাদের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক দিয়েছি। তবে আমি মনে করি, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই শুল্ক উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হবে।’
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেন ট্রাম্প। পাশাপাশি রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র আমদানির অভিযোগে অতিরিক্ত জরিমানাও আরোপ করেছেন তিনি। এর একদিন পরই ভারত ও রাশিয়াকে আক্রমণ করে তিনি বলেছেন, ‘ভারত রাশিয়ার সঙ্গে কী করছে, তা নিয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই। চাইলে তারা তাদের মৃত অর্থনীতি একসঙ্গে ডুবিয়ে দিতে পারে।’
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা খুবই সীমিত, কারণ তাদের শুল্কহার বিশ্বের মধ্যে অন্যতম উচ্চ। রাশিয়ার সঙ্গেও আমাদের বাণিজ্য নেই বললেই চলে, এবং আসুন আমরা এটি এভাবেই রাখি।’
পরে গত সোমবার ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘ভারত শুধু বিপুল পরিমাণে রাশিয়ান তেল কিনছে না, বড় লাভের আশায় তারা এই তেলের বেশিরভাগই খোলা বাজারে বিক্রি করছে।’
তিনি বলেন, ‘তাদের (ভারত) এমন পদক্ষেপে ইউক্রেনের কত মানুষ রাশিয়ান যুদ্ধযন্ত্রের হাতে মারা যাচ্ছে, এটি তারা পরোয়া করে না। এই কারণে, আমি ভারতের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে আরোপিত শুল্ক উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করব।’
তবে এই হুমকিকে ‘অন্যায্য’ ও ‘অযৌক্তিক’ বলে আখ্যায়িত করেছে ভারত।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইউক্রেনে শুরুর পর রাশিয়ার জ্বালানি তেলসহ প্রায় সব পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। কিন্তু সে সময় জ্বালানির বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভারতকে রাশিয়াার কাছ থেকে তেল কিনতে উৎসাহ দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ রাশিয়া থেকে পণ্য আমদানি করছে বলে উল্লেখ করে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার সঙ্গে এই দেশগুলোর বাণিজ্য একটি পরিসংখ্যানও দেয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
একই সঙ্গে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল ক্রয় অব্যাহত রাখারও ইঙ্গিত দিয়েছে দেশটি।
সজিব