
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের প্রেক্ষাপটে গৃহীত নতুন কড়াকড়ি ও ভিসা নীতির ফলে ধ্বসে পড়েছে কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’ খ্যাত নিউ মার্কেট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ও আশেপাশের ব্যবসায়িক অঞ্চলগুলোর অর্থনীতি। এক সময় বাংলাদেশি পর্যটক, রোগী, ছাত্র এবং ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখর থাকা এলাকাগুলো এখন প্রায় জনশূন্য।
গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের পরপরই ভারতের পক্ষ থেকে নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। বন্ধ হয়ে যায় সাধারণ ভিসা ও সীমিত হয়ে পড়ে মেডিকেল ভিসা। বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য হাসপাতাল, হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলো একে একে সেবা বন্ধ করে দেয়।
এই নিষেধাজ্ঞার ফলে কলকাতার ব্যবসায়ীদের মাথায় যেন বাজ পড়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর হিসাব অনুযায়ী,
* শুধু গত এক বছরেই এই অঞ্চলের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০০০ কোটি রুপি*।
* অনেক সংগঠনের মতে, ক্ষতির পরিমাণ ৫০০০ কোটি রুপিও ছাড়িয়ে যেতে পারে, যদি নিউ মার্কেট, বুররাবাজার, পার্ক স্ট্রিট ও সুধার স্ট্রিটের ক্ষতিও যোগ করা হয়।
একসময় প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিন কোটি টাকার ব্যবসা হতো এসব এলাকায়। এখন তা ২০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
*ছোট ও মাঝারি রেস্তোরাঁগুলোর ৪০% ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে, বাকি বেশিরভাগই লোকসানে চলছে।
*মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায় লেনদেন প্রায় শূন্যের কোঠায়।
*হোমস্টে ও গেস্টহাউজ ব্যবসাও একপ্রকার স্তব্ধ হয়ে গেছে।
*গাড়িচালক ও গাইডরাও কাজ পাচ্ছেন না, কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
রেস্তোরাঁ মালিকদের অনেকে করোনার পর ব্যবসা ফের চালু করতে ঋণ নিয়ে রিনোভেশন, নতুন ফার্নিচার ও কিচেনে বিনিয়োগ করেছিলেন। এখন সেই ঋণের কিস্তি দিতে গিয়ে তারা চরম মানসিক ও আর্থিক সংকটে পড়েছেন।
একজন মালিকের ভাই বলেন, “আমার ভাই ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় রাতের ঘুম হারিয়ে ফেলেছে। চিকিৎসা করাতে হচ্ছে, অথচ রোজগার নেই বললেই চলে।”
কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’ শুধু ব্যবসার জায়গা নয়, ছিল সাংস্কৃতিক সংযোগের কেন্দ্রও
বাংলাদেশি পর্যটকেরা কলকাতায় এসে
* নিজস্ব ভাষায় কথা বলতেন,
* পরিচিত খাবার খেতেন,
* সিনেমা দেখতেন,
* বাংলা বই কিনতেন।
এই সামাজিক সংযোগ থেকে গড়ে উঠেছিল একটি জীবন্ত সাংস্কৃতিক বলয়। এখন সেই অঞ্চলটি যেন এক স্মৃতির স্তূপে পরিণত হয়েছে।
একজন দোকানদার জানান, “দোকান খুলে বসি শুধুই অভ্যাসে। ভাবি, হয়তো কোন একদিন ফিরে আসবে পুরনো কোলাহল, পুরনো মিনি বাংলাদেশ।”
ছামিয়া