ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৮ আগস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

দীপু মনির অন্যায় আবদার না রাখতে ক্যাম্পাসে যেতাম কম: বেরোবির সাবেক ভিসি কলিমুল্লাহ

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ৭ আগস্ট ২০২৫; আপডেট: ২২:৪২, ৭ আগস্ট ২০২৫

দীপু মনির অন্যায় আবদার না রাখতে ক্যাম্পাসে যেতাম কম: বেরোবির সাবেক ভিসি কলিমুল্লাহ

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় গ্রেপ্তার রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত এ আদেশ দেন। শুনানিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিকে দুষেছেন তিনি।

আটকের পর বিকেলে আদালতের এজলাসে আনা হয় কলিমুল্লাহকে। বিকেল ৪টা ১২ মিনিটে ডকে বসেন তিনি। ৪টা ১৬ মিনিটে বিচারক এজলাসে আসেন। ৪টা ২২ মিনিটে শুনানি শুরু হয়।

শুরুতে দুদকের আইনজীবী দেলোয়ার জাহান রুমী বলেন, আজকের এই দুর্নীতি মামলায় আসামি পাঁচজন। তারা যোগসাজশে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেন। ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বার্থ হাসিলে ভবন নির্মাণের কাজ দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানকে দেন।

আসামি পক্ষের আইনজীবী শাহনাজ আক্তার বলেন, উপাচার্য নিয়মবহির্ভূতভাবে কিছু করেননি। এ সময় আইনজীবীরা তাঁর জামিন ও কারাগারে ডিভিশন চান।

বিচারক বলেন, আপনারা একবার জামিন চাচ্ছেন। আবার কারাগারে ডিভিশন চাচ্ছেন। এটা সাংঘর্ষিক।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, দুদকের মামলা হঠাৎ করে হয় না। বিস্তর তদন্ত হয়।

এ সময় বিচারক আসামির কোনো কথা আছে কিনা জিজ্ঞেস করেন। উত্তরে কলিমুল্লাহ বলেন, ২০১৭ সালে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনিয়ম-দুর্নীতি করিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাজ করেছি।

বিচারক বলেন, আপনার ক্যাম্পাস কোথায়? আপনি তো এক হাজার ৩৫২ দিনের মধ্যে এক হাজার ১১৫ দিন ঢাকায় ছিলেন।

উত্তরে কলিমুল্লাহ বলেন, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আমার কাছে অন্যায় আবদার করতেন। উনিই আমার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা (অপপ্রচার) ছড়িয়েছেন। তাঁর অন্যায় আবদার না রাখতে ক্যাম্পাসে যেতাম কম।

এ সময় বিচারক বলেন, আপনি কীভাবে ক্যাম্পাসে সময় দিতেন? আপনি তো ঘণ্টার পর ঘণ্টা টকশোতে সময় দিতেন।

এর উত্তরে তিনি বলেন, আমি ১৭-১৮ ঘণ্টা কাজ করেছি।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, আপনি এত সময় দিলে টকশো করতেন কখন? উত্তরে তিনি বলেন, আমি সারাদিন কাজ করে রাতে টকশো করতাম।

বিচারক কলিমুল্লাহকে জিজ্ঞেস করেন, আপনার মা ও আপনি কেন একই নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন? এর উত্তরে সাবেক উপাচার্য বলেন, শিশু ও পরিবার মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ছিলেন মা। সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত।

বিচারক জানতে চান, তিনি কীভাবে একাধারে উপাচার্য, বিভাগের চেয়ারম্যান ও অনুষদের ডিন ছিলেন। উত্তরে কলিমুল্লাহ বলেন, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ধারাবাহিক নিয়ম। এখানে আমার কোনো হাত নেই। আমার করা কোনো আইন নয়। এ সময় বিচারক বলেন, চার বছরে ৯৯ কোটি টাকার কাজ ছাড়া আর কী কী কাজ বিশেষ উন্নয়নে হয়েছে? এর উত্তরে তিনি বলেন, এই উন্নয়ন আগের উপাচার্যের আমলের। নকশাও আগের।

নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তিনি বলেন, আমি দীপু মনির ভর্তি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এ কারণে তিনি আমাকে ফাঁসিয়েছেন। বিচারক বলেন, আপনার বিরুদ্ধেও এসব অভিযোগ আছে। তদন্ত হবে।

এ সময় আদালতকে তিনি বলেন, নো-নেভার, আমি কোনো অন্যায় করিনি। বিচারক বলেন, কী করেছেন, এটা আপনি জানেন। আলিমুল গায়েব জানেন। কিছুদিন পর দুদক জানবে। এর পর বাকি মানুষ জানবে।

তিনি বলেন, কিছু মনে না করলে আমি একটা কথা বলি স্যার। আমি সকালে নাশতা করে বসেছিলাম। অপ্রস্তুত অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়। আমি ভেবেছিলাম, আমাকে দুদক থেকে তলব করা হবে। কিন্তু আমাকে তলব করা হয়নি। আমার আপত্তি আছে। বিচারক বলেন, আপনি কেন আপত্তি করবেন? কবরে ও জেলে একাই যেতে হবে। যারা দুর্নীতি করেছে, তারা অনেকে জেলে, অনেকে বিদেশে।

এ সময় তিনি নিজেকে গ্রেড ওয়ান পার্সন বলে পরিচয় তুলে ধরেন। তখন বিচারক বলেন, নিয়ম অনুযায়ী আপনাকে জেলে যেতে হবে। আপনার যে চিকিৎসা দরকার, সেটা জেল কর্তৃপক্ষ দেবে। এ কথা বলে আদালত শেষ করে বিকেল ৪টা ৩৮ মিনিটে এজলাস ত্যাগ করেন বিচারক।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

এদিন দুদকের মামলায় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ও সাবেক উপাচার্য এ কে এম নূর-উন-নবীসহ পাঁচজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন একই আদালত। নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন– বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, ঠিকাদার মো. আ. সালাম বাচ্চু এবং এম এম হাবিবুর রহমান।

মিমিয়া

×