ছবি: সংগৃহীত
২০ টাকার নতুন নোটে কান্তজিউ মন্দিরের ছবি ব্যবহারের পর সামাজিক ও ধর্মীয় অঙ্গনে যখন বিতর্ক চলছে, তখন সেই ইস্যুতে সামাজিক মাধ্যমে সিনিয়র কর্মকর্তাদের নিয়ে অপমান করে পোস্ট করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা। সহকারী পরিচালক (জেনারেল) মোহাম্মদ সাকিব মুন্তাসির নামের ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনভিপ্রেত ও অশোভন আচরণের অভিযোগে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন আকতারুজ্জামান নামের আরেক কর্মকর্তা।
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সতর্ক করে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট, কমেন্ট, শেয়ার বা অশ্লীল মন্তব্য করলে আইন অনুযায়ী শাস্তির আওতায় আনা হবে জানিয়ে ১৬ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে। এছাড়া এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের প্রতি ফেসবুকে বিতর্কিত পোস্ট না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তারপরও ইসলাম ধর্মকে উগ্রবাদী বলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন কেন্দ্রীয় বাংক কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাকিব মুস্তাসির।
২০২৫ সালের ৪ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের পরিচালক (এইচআরডি-২) বরাবর জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়, মোহাম্মদ সাকিব মুন্তাসির সামাজিক মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে কুরুচিপূর্ণ ও ধর্মীয়ভাবে সংবেদনশীল মন্তব্য করছেন, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করছে এবং প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ পরিবেশকে ব্যাহত করছে। অভিযোগে বলা হয়, সাকিব তার ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন- ‘দুঃখজনকভাবে কিছু লোক বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নোট নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক বিতর্ক তৈরি করছেন, যা শুধুমাত্র সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হচ্ছে। এমন লোকেরা কখনোই নন্দনতত্ত্বের সৌন্দর্যকে বুঝতে পারেন না। উগ্রবাদীরা নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে সমাজে সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়াতে চান। কিছু অর্ধশিক্ষিত বা অশিক্ষিত ব্যক্তিরা এতে প্রভাবিত হতে পারেন, তবে বাংলাদেশ ব্যাংকেরই কিছু লোক এত সহজে ব্রেনওয়াশড হয়ে যাওয়া দেখাটা দুঃখজনক।’
তিনি আরও লেখেন, ‘উগ্রবাদীরা মিথ্যে দাবি করছে যে, মসজিদের জায়গায় মন্দির বসানো হয়েছে। কিন্তু পুরানো নোটগুলোতে কোথাও মসজিদ সরিয়ে মন্দির বসানো হয়নি, বরং পুরো নোটটি নতুন করে ডিজাইন করা হয়েছে। তাছাড়া প্রতিটি নোটে আগে কোনও না কোন কালে মসজিদ ছিল।’
অভিযোগকারীর দাবি, সাকিব শুধুমাত্র বিতর্কিত পোস্ট করেই থেমে থাকেননি, বরং ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত পোস্টে অত্যন্ত অমার্জিত এবং বেয়াদবিপূর্ণ ভাষায় মন্তব্য করেছেন এবং পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। এছাড়া, তার ব্যক্তিগত ফেসবুক টাইমলাইনে ধর্মীয় সংবেদনশীল এবং যৌন উত্তেজক বিষয়বস্তুও রয়েছে, যা একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হিসেবে নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। এই প্রেক্ষাপটে অভিযোগকারী কর্মকর্তার দাবি, মোহাম্মদ সাকিব মুন্তাসিরের আচরণ ব্যাংকের পেশাগত শিষ্টাচার পরিপন্থী এবং তার বিরুদ্ধে বিধিসম্মত শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। প্রসঙ্গত, গত ১ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ছাড়ে নতুন ডিজাইনের ১০০০, ৫০ ও ২০ টাকার নোট। নতুন ২০ টাকার নোটে যুক্ত করা হয়েছে দিনাজপুরের বিখ্যাত কান্তজিউ মন্দিরের ছবি, যেখানে পূর্ববর্তী সংস্করণে ছিল একটি মসজিদের ছবি।
এই পরিবর্তন নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। বিশেষ করে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এই নকশা পরিবর্তনকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত বলে আখ্যায়িত করেছে। ৪ জুন গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনটির আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী এবং মহাসচিব আল্লামা শায়খ সাজিদুর রহমান নতুন নোট বাতিলের দাবি জানান।
তারা বলেন, ‘নতুন ২০ টাকার নোটে মসজিদের পরিবর্তে মন্দিরের ছবি বসানো সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং এই নোট বাতিলের দাবি করছি।’
আসিফ
