
শিল্পকলা একাডেমি মাঠে অনুষ্ঠিত লাল জুলাই শীর্ষক কর্মসূচিতে হাতের রক্তিম ছাপের মাধ্যমে অভ্যুত্থানের রক্তভেজা সময়কে স্মরণ করা হয়
গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল রাজপথ। স্বৈরশাসনের শৃঙ্খল ভাঙতে সৃষ্টি হয়েছিল ছাত্র-জনতার সংঘটিত খর¯্রােতা আন্দোলন। লাঠি, গুলি, টিয়ারগ্যাসের সামনে বুক চিতিয়ে ধরা তারুণ্যের সাহসিকতার উল্টোপিটে মিশেছিল বহু ত্যাগ। ঝরেছিল অজস্র সেই। বুধবার স্মরণ করা হলো সেই রক্তভেজা জুলইকে। এদিন সকালে শিল্পকলা একাডেমির মাঠে ‘লাল জুলাই’ শীর্ষক আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতির পুনর্জাগরণে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতা এবং শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
এই কর্মসূচিতে ছিল ২০ ফুট ব্যাসার্ধের এক সাদা জমিন। ক্যানভাস আকৃতির সেই জমিনে ঢেকে যায় জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহত পরিবারের সদস্য, আন্দোলনে অংগ্রহণকারীসহ সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে প্রত্যেকের হাতের ছাপে। রক্তের প্রতীকী লালরঙা হাতের ছাপে সাদা জমিন পরিণত হয় লাল রঙে রঞ্জিত এক বৃত্তে। ফুটে ওঠে জুলাই আন্দোলনের আত্মত্যাগের স্মৃতি জাগানিয়া সেই বিয়োগান্তক অধ্যায়।
সকালে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন জুলাই বিপ্লবের শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের বাবা সাহরিয়া খান পলাশ এবং মা সানজিদা খান দিপ্তী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির সচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন। আরও উপস্থিত ছিলেন একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) প্রদ্যোত কুমার দাস, নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনসহ অনেকে।
শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের মা সানজিদা খান দিপ্তী বলেন, আজকে সেই দিন, যেই দিন আমার প্রোফাইল লাল করেছিলাম। আনাসও করেছিল। আনাসের প্রোফাইল ছিল ব্লাডি জুলাই। সেই জুলাইতে আনাসের জীবনটাই চলে গেল। এই দিনে আমরা সকল শহীদকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করব এবং সকল আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করব। একইসঙ্গে বাংলাদেশের সার্বিক কল্যাণ কামনা করি এবং প্রত্যেক শহীদ পরিবার যেন ধৈর্য্য ধারণ করতে পারে সেই দোয়া করি।
আনাসের বাবা সাহরিয়া খান পলাশ বলেন, আজকের যে লাল জুলাইয়ের এই কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে, এর পেছনে যে রক্তগুলো ঝরেছে তা সমস্ত বাংলাদেশের মা-বাবার সন্তানদের এবং তাদের অভিভাবকদের।এই রক্তের কারণেই এইদিনে ফেসবুক প্রোফাইলটা সবাই লাল করেছিল। সেটাকে ধরে রাখার জন্য জাতিকে আবার নতুন করে দেখানোর জন্য, এই দিনটাকে মনে রাখার জন্য আজকে এই অনুষ্ঠানটা।
সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে মাসব্যাপী জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা আয়োজিত হচ্ছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিও এ সকল অনুষ্ঠানমালার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় চলছে মাসব্যাপী নানান অনুষ্ঠানমালা। তারই ধারাবাহিকতায় এই আয়োজন। এ আয়োজনের বৈশিষ্ট্য হলো এই ২০২৪ সালের এই দিনে যেমন সকলের ফেসবুক প্রোফাইল লাল রঙে বৃত্তাকার ছিল, তেমনি রক্তিম হাতের ছাপে মেলে ধরা হচ্ছে সেই বিয়োগান্তক অধ্যায়কে।
প্যানেল হু