ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

যে কারণে হেবা দলিল চিরতরে বাতিল হয়ে যেতে পারে!

প্রকাশিত: ১৪:০৭, ১২ জুন ২০২৫

যে কারণে হেবা দলিল চিরতরে বাতিল হয়ে যেতে পারে!

বাংলাদেশে জমি বা সম্পত্তি হস্তান্তরের এক পরিচিত পদ্ধতি হলো ‘হেবা দলিল’। অনেকেই পারিবারিকভাবে সন্তানের নামে বা কাছের আত্মীয়ের নামে হেবা দলিল করে থাকেন। তবে এই দলিল যে চিরস্থায়ী নয়, বরং কিছু নির্দিষ্ট শর্ত লঙ্ঘন করলে তা বাতিল হয়ে যেতে পারে এমনটাই জানাচ্ছেন অভিজ্ঞ আইনজীবীরা। একমাত্র আদালতের মাধ্যমেই এ দলিল বাতিল করা সম্ভব এবং এই সিদ্ধান্ত কেউ আটকাতে পারবে না।

হেবা দলিল কিন্তু কেউ বাতিল করতে পারে না। কোন জেলা প্রশাসক, কোন ক্যাডার কর্মকর্তা, কোন ইউএনও, ম্যাজিস্ট্রেট বা সাব রেজিস্টারও এই দলিল বাতিল করতে পারেন না। কারণ সাব রেজিস্টার শুধু দলিল রেজিস্ট্রি করে দেন, সৃষ্টির কাজ করেন। তিনি নিজেই আবার কীভাবে তা বিনষ্ট করবেন? তবে একজন ব্যক্তি রয়েছেন যিনি দলিল বাতিলের জন্য মামলা করতে পারেন, তিনি হলেন জমির মালিক, যার নামে দলিল রেজিস্ট্রি করা আছে।

মালিক চাইলে বাতিল, আদালতে মামলা হলেই কার্যকর
যার নামে হেবা দলিল রয়েছে, একমাত্র তিনিই আদালতে মামলা করলে এটি বাতিল হয়ে যাবে। আদালতের আদেশে তখন দলিলটি স্থায়ীভাবে অকার্যকর হয়ে যাবে এবং তা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হবে না। এমনকি দলিলের উপর ভিত্তি করে অধিকার দাবি করাও যাবে না।

হেবা কাদের দেওয়া যায়?
হেবা দেওয়া যায় নিকট আত্মীয়দের, যেমন: পিতা-মাতা, পুত্র-কন্যা, স্বামী-স্ত্রী, দাদা-দাদী, নানা-নানী, নাতি-নাতনী, ভাই-বোন এই ১৪ শ্রেণির মধ্যে সীমাবদ্ধ। এদের বাইরে কাউকে হেবা দিলে তা “আনঅথোরাইজড পারসন” হিসেবে বিবেচিত হয় এবং আদালতের মাধ্যমে সহজেই বাতিল করা যায়।

হেবা দলিল বৈধ করতে যেসব শর্ত মানা জরুরি
হেবা দলিল কার্যকর হতে হলে তিনটি মূল শর্ত পূরণ করতে হয়—
১. হেবা ঘোষণা দিতে হবে।
২. গ্রহীতাকে হেবা গ্রহণ করতে হবে।
৩. সম্পত্তির হস্তান্তর বা দখল বুঝিয়ে দিতে হবে।

এই তিনটির যেকোনো একটি শর্ত ভঙ্গ হলে দলিল অবৈধ হয়ে যাবে। উদাহরণস্বরূপ, কেউ হেবা দলিল করলেও যদি সম্পত্তির দখল নিজে রাখেন, তাহলে সেই দলিল বাতিলযোগ্য হবে।

ওয়ারিশি বা পৈতৃক সম্পত্তি যদি এখনো ভাগ-বাটোয়ারা না হয়ে থাকে এবং তা সরকারি রেকর্ডে মৃত পিতামাতার নামে থেকে যায়, তাহলে সেই সম্পত্তি হেবা করার অধিকার থাকে না। কেউ যদি এরকম সম্পত্তি হেবা করে থাকেন, তাহলে ওয়ারিশদের কেউ আদালতে মামলা করলে দলিলটি বাতিল হয়ে যাবে।

অনেকে হেবা দলিলের আড়ালে বিক্রয়ের লেনদেন সম্পন্ন করেন। অর্থাৎ অর্থের বিনিময়ে হেবা দলিল করা হয় শুধু সরকারি খরচ কমানোর উদ্দেশ্যে। এই ধরনের ‘প্রতারণামূলক হেবা’ পরবর্তীতে মামলার মুখে পড়লে বাতিল হয়ে যায়। কারণ হেবা হতে হবে বিনিময় ছাড়া, আন্তরিক সদিচ্ছা থেকে।

অনেকে মনে করেন সাব রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে দলিল বাতিল করা যায়। বাস্তবে তা ভুল ধারণা। সাব রেজিস্টার শুধু ছোটখাট কারিগরি ভুল সংশোধন করতে পারেন। দলিল বাতিল করতে হলে শুধুমাত্র বিজ্ঞ আদালতে মামলা করতে হয়।

একজন ব্যক্তি যদি তার বৈধ মালিকানাধীন সম্পত্তি, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক নিয়ম মেনে, নির্ধারিত শর্ত পূরণ করে হেবা করেন, তাহলে সেই দলিল কখনোই বাতিল হবে না। কেবলমাত্র ত্রুটিপূর্ণ, প্রতারণাপূর্ণ কিংবা শর্তভঙ্গকারী হেবা দলিলগুলোই আদালতের মাধ্যমে বাতিলযোগ্য।


আপনি যদি হেবা দলিল করে থাকেন বা গ্রহণ করে থাকেন, তবে বিষয়টি ভালোভাবে যাচাই করে নিন। কারণ, সামান্য ভুলেই দলিল বাতিল হয়ে যেতে পারে। যে কোনো জটিলতার জন্য একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ গ্রহণই হতে পারে সঠিক সিদ্ধান্ত।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/y2z2rc8s

আফরোজা

×