ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

রিকশাচালককে পিটিয়ে আলোচিত রাজশাহীর সেই সমাজসেবা কর্মকর্তার বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী

প্রকাশিত: ২০:২০, ৩০ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২০:২১, ৩০ জুলাই ২০২৫

রিকশাচালককে পিটিয়ে আলোচিত রাজশাহীর সেই সমাজসেবা কর্মকর্তার বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার

রাজশাহীতে রিকশাচালককে পিটিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসা সেই সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহিদ হাসান রাসেলকে মন্ত্রণালয় ক্ষমা করে দিয়েছে। প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে তাঁর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ। শুধু তাই-ই নয়, বরখাস্ত থাকার সময়টি তাঁর কর্মকাল হিসেবে গণ্য করে তাঁকে বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।

গত রবিবার (২৭ জুলাই) সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপসচিব মোহাম্মদ আবদুল হামিদ মিয়ার সই করা এক প্রজ্ঞাপনে তাঁকে বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়। বুধবারের (৩০ জুলাই) মধ্যে সেখানে যোগ দিতে বলা হয়। 

এর আগে তিনি রাজশাহীর পবা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ২ ফেব্রুয়ারি তিনি এক রিকশাচালককে নির্দয়ভাবে পেটান। এর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে।

জাহিদ হাসানের স্ত্রী একজন বিচারক। রাজশাহীতে ঘটনাটি ঘটেছিল জাজেস কোয়ার্টারের সামনেই। ভাড়া ঠিক করে না উঠে কম টাকা দেওয়ায় রিকশাচালক তাকে ‘লাট সাহেব’ বলেছিলেন। এতেই মেজাজ হারিয়ে ওই রিকশাচালককে জুতাপেটা করেন তিনি। এতেও তাঁর মনের ক্ষোভ মেটেনি। গাড়ির ব্যাকডালা থেকে লাঠি বের করে তিনি রিকশাচালককে পেটান।

এর ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। পরে ৩ ফেব্রুয়ারি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-৫ (প্রশাসন ও শৃঙ্খলা) শাখার এক প্রজ্ঞাপনে তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ঘটনা তদন্তে সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) শহীদুল ইসলামকে তদন্তকারী কর্মকর্তাও নিযুক্ত করা হয়। তদন্ত শেষে শহীদুল ইসলাম সমাজসেবা অধিদপ্তরে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এর ভিত্তিতে গত ২২ জুলাই সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. মহিউদ্দিনের সই করা প্রজ্ঞাপনে দেখা গেছে, জাহিদ হাসান তাঁর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য অনুতপ্ত ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা তাঁর দ্বারা আর হবে না মর্মে লিখিত অঙ্গীকারনামাও দিয়েছেন। রিকশাচালকের সঙ্গে ‘ভুলবোঝাবুঝি সৃষ্টির কারণে’ তিনি ক্ষমাও প্রার্থনা করেন।

জাহিদ হাসান তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেছেন, ‘ঘটনাটি তাঁর জীবনকে বদলে দিয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি নিজেকে শুধরে নিয়েছেন। এ শোধরানোর মধ্য দিয়ে তিনি বাকি জীবন অতিবাহিত করতে পারবেন।’ তাই তাঁর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা সমীচীন মর্মে মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। এ জন্য সাময়িক বরখাস্তের আগের আদেশ প্রত্যাহার করা হলো এবং তাঁর সাময়িক বরখাস্তকাল কর্মকাল হিসেবে গণ্য করা হলো।

জাহিদ হাসান পবায় থাকাকালে নানা বিতর্কিত ঘটনাই ঘটিয়েছিলেন। তাঁর দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত বছরের ৩১ মার্চ উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা শিমুল বিল্লাহ সুলতানা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে জাহিদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। শিমুল জানান, জাহিদ প্রায়ই অশোভন আচরণ করতেন। উপজেলা পরিষদ চত্বরে তিনি সবার সামনে অকথ্য ও অশ্রাব্য ভাষায় অশালীন আচরণ করেন।

এর আগে দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ ২০২৩ সালের ১৬ মে পবা উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী সমাজসেবা কর্মকর্তা শারমিন আফরোজ রাজশাহী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের তৎকালীন উপপরিচালক হাসিনা মমতাজের কাছে জাহিদ হাসানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অভিযোগের তদন্তও হয়নি।

জাহিদের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার শরীফবাড়ি গ্রামে। সেখানে তিনি ফাতেমা ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন করেছেন। এই সংগঠনের জন্য তিনি নিয়ম ভেঙে পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভা থেকে সরকারি ডাস্টবিন নিয়ে যান। পৌরসভার ওই ডাস্টবিন বিতরণ সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি ছিলেন জাহিদ হাসান। তিনি অফিসে যাওয়া-আসা করেন ‘বিচারক’ লেখা প্রাইভেটকারে চড়ে। অফিসে এসে অফিস সহকারী সোহাগ আলীকে দিয়ে গাড়িটি পাহারা দেওয়াতেন তিনি। তবে এসব নিয়ে কোন তদন্ত হয়নি। আগের নানা কর্মকাণ্ডের মতো রিকশাচালককে পিটিয়েও পার পেয়ে গেলেন এই কর্মকর্তা।

জাহিদ হাসানকে বুধবারের মধ্যে বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলায় যোগদান করতে বলা হয়েছে। তিনি যোগ দিয়েছেন কি না তা জানতে দুপুরে তাকে ফোন করা হয়। সাংবাদিক পরিচয় দিলেই তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

রাজশাহী বিভাগীয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ মোস্তাক হাসান বলেন, জাহিদ হাসানের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহারের বিষয়টি তিনি জানেন। 

Mily

আরো পড়ুন  

×