ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কৃত্রিম রক্ত তৈরি করছেন বিজ্ঞানীরা, কবে থেকে শুরু হতে পারে ব্যবহার?

প্রকাশিত: ১৩:৪৪, ১২ জুন ২০২৫

কৃত্রিম রক্ত তৈরি করছেন বিজ্ঞানীরা, কবে থেকে শুরু হতে পারে ব্যবহার?

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে রক্তের সংকটের কারণে বহু মানুষ প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছেন। দুর্ঘটনা, অস্ত্রোপচার কিংবা জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত অনেক সময়ই পাওয়া যায় না। বিশেষ করে দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে রক্তের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। এই বাস্তবতায় আশার আলো দেখাচ্ছেন জাপানের বিজ্ঞানীরা।

জাপানের নারা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা কৃত্রিম রক্ত তৈরির পথে এগিয়ে গেছেন উল্লেখযোগ্যভাবে। তাঁদের দাবি, এ রক্তের কার্যকারিতা ইতিমধ্যে পরীক্ষাগারে যাচাই করা হয়েছে এবং যদি চলমান মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সফল হয়, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যেই এই কৃত্রিম রক্ত বিশ্বব্যাপী ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠবে।

কী এই কৃত্রিম রক্ত, কীভাবে কাজ করে?

নারা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল জানায়, এই কৃত্রিম রক্তে কোনো নির্দিষ্ট রক্তের গ্রুপ নেই, অর্থাৎ এটি সর্বগ্রাহ্য (universal)। ফলে জরুরি পরিস্থিতিতে রক্তের গ্রুপ মেলানোর প্রয়োজন হবে না, যেটি চিকিৎসা খাতে একটি বিপ্লব এনে দিতে পারে।

কৃত্রিম রক্ত তৈরি করতে বিজ্ঞানীরা মেয়াদোত্তীর্ণ প্রাকৃতিক রক্ত থেকে লোহিত রক্তকণিকার মূল উপাদান হিমোগ্লোবিন বের করে তা বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করছেন। এরপর এই কৃত্রিম হিমোগ্লোবিনকে এমনভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে যেন তা মানবদেহে প্রাকৃতিক লোহিত রক্তকণিকার মতো অক্সিজেন পরিবহন করতে পারে।

ইতিমধ্যেই মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু

গবেষণা দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁরা এরই মধ্যে ১৬ জন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে ১০০ থেকে ৪০০ মিলিলিটার কৃত্রিম রক্ত প্রয়োগ করেছেন। এসব পরীক্ষায় এখন পর্যন্ত কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি, যা বিজ্ঞানীদের আশাবাদী করে তুলছে।

দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণের সুযোগ

প্রাকৃতিক রক্তের একটি বড় সমস্যা হলো এর সংরক্ষণকাল খুব সীমিত। সাধারণত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। কিন্তু গবেষকদের মতে, এই কৃত্রিম রক্ত দুই বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব, যা একে আরও কার্যকর ও ব্যবহারোপযোগী করে তুলবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্যব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা

গবেষক দলের অন্যতম সদস্য অধ্যাপক হিরোমি সাকাই বলেন, ‘লোহিত রক্তকণিকার এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর বিকল্প নেই। কৃত্রিম রক্তকণিকা এই অভাব পূরণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।’ তিনি জানান, যদি এই রক্ত প্রয়োগ নিরাপদ ও কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়, তাহলে তা বিশেষ করে যুদ্ধক্ষেত্র, দুর্যোগপূর্ণ এলাকা বা দুর্গম অঞ্চলে জরুরি চিকিৎসার জন্য অবিশ্বাস্যভাবে উপযোগী হবে।

মানবসভ্যতার ইতিহাসে কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড বা কৃত্রিম কিডনির মতো উদ্ভাবন যেমন চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিপ্লব এনেছে, তেমনি কৃত্রিম রক্তের সফল উদ্ভাবন ও ব্যবহার পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থার ধারা বদলে দিতে পারে। শুধু উন্নত বিশ্ব নয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোর রক্তসংকট মোকাবিলায় এই আবিষ্কার হয়ে উঠতে পারে এক জীবনরক্ষাকারী সমাধান।

 

সূত্র: এনডিটিভি।

রাকিব

আরো পড়ুন  

×