
পাট—যেটিকে আমরা আদর করে “সোনালী আঁশ” বলি, বাংলাদেশের ইতিহাস, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তবে আপনি কি জানেন, বর্তমানে কোন দেশ বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পাট উৎপাদন করে? এই তালিকায় বাংলাদেশ আছে, তবে এক নম্বরে নয়!
বিশ্বজুড়ে পাটের ব্যবহার আবারও বাড়ছে, বিশেষ করে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই প্যাকেজিং-এর চাহিদা বাড়ায়। সেই প্রেক্ষাপটে চলুন জেনে নিই বিশ্বের শীর্ষ ৫ পাট উৎপাদনকারী দেশের তালিকা ও তাদের বার্ষিক উৎপাদনের তথ্য।
শীর্ষ ৫ পাট উৎপাদনকারী দেশ
১. ভারত
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পাট উৎপাদন করে ভারত, বছরে প্রায় ১.৭২ মিলিয়ন মেট্রিক টন। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম ও মেঘালয়ে মূলত এই চাষ হয়। মোট উৎপাদনের প্রায় ৯০% দেশেই ব্যবহৃত হয়, আর প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ডলারের পাটপণ্য রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে।
ভারতের সরকার বাধ্যতামূলকভাবে খাদ্যপণ্য প্যাকেজিংয়ে পাটের ব্যাগ ব্যবহার করে, যা অভ্যন্তরীণ চাহিদা আরও বাড়িয়েছে।
২. বাংলাদেশ
পাট মানেই বাংলাদেশের গর্ব, বিশেষ করে উচ্চমানের সাদা পাট। বাংলাদেশ বছরে ১.৬৮ মিলিয়ন টন পাট উৎপাদন করে, যা তাকে দ্বিতীয় স্থানে রেখেছে।
তবে রপ্তানির দিক দিয়ে বাংলাদেশই বিশ্বে শীর্ষে—প্রতি বছর প্রায় ৪ লাখ টন কাঁচা পাট ও পণ্য রপ্তানি করে, যার মধ্যে শুধু পাট-ইয়ার্নেই আয় প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার।
প্রধান পাটচাষ অঞ্চলগুলো হল টাঙ্গাইল, ঢাকা, জামালপুর ও ফরিদপুর। যদিও জমির পরিমাণ কিছুটা কমেছে, তবু বিশ্ব রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের আধিপত্য অটুট।
৩. উজবেকিস্তান
প্রতি বছর ১৯,০০০ টন পাট উৎপাদনের মাধ্যমে উজবেকিস্তান তৃতীয় স্থান দখল করেছে। কৃষি বৈচিত্র্য আনতে তারা পাটকে গুরুত্ব দিচ্ছে এবং পরিবেশবান্ধব চাষাবাদের দিকে ঝুঁকছে।
৪. চীন
চীন বছরে ১৫,৭০০–২৯,৬০০ টন পাট উৎপাদন করে। মূলত দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের হুনান, গুয়াংডং ও ইউনান প্রদেশে চাষ হয়। তুলার পরেই পাটের দিকে মনোযোগ বাড়াচ্ছে চীন।
৫. নেপাল
নেপাল বছরে ১০,৪০০–১০,৫০০ টন পাট উৎপাদন করে। ভারতের সীমান্তবর্তী তেরাই অঞ্চলে চাষ হয়। জৈব ও টেকসই উৎপাদনের দিকে মনোযোগী নেপাল রপ্তানি বাজারেও সক্রিয়।
ভারত বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পাট উৎপাদনকারী দেশ, যা মোট বৈশ্বিক উৎপাদনের ৫০ শতাংশ। তবে রপ্তানির বাজারে এখনো বাংলাদেশই রাজা—বিশ্বের ৭০ শতাংশ পাট রপ্তানি এখান থেকেই হয়।
পরিবেশবান্ধব এই আঁশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। তবে বিশ্বে নেতৃত্ব ধরে রাখতে হলে, বাংলাদেশকে আরও গবেষণা, আধুনিক প্রযুক্তি ও কৃষকদের সহায়তা বাড়াতে হবে।
মিমিয়া