ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

বাবা দিবস নিয়ে ভাবনা

সাজ্জাদুল হক স্বপন

প্রকাশিত: ০০:৩৬, ১৫ জুন ২০২৫; আপডেট: ০০:৩৮, ১৫ জুন ২০২৫

বাবা দিবস নিয়ে ভাবনা

জীবনের প্রথম 'সুপার হিরো' হিসাবে বেশিরভাগ মানুষই নিজের বাবার কথা উল্লেখ করেন। বাবার কথা বলতে গিয়ে অনেকেই বলেন, বাবা হলেন সেই বটবৃক্ষ-- যা রোদ,বৃষ্টি কিংবা ঝড়ে সন্তানকে আগলে রাখে পরম মমতায়। বাবা-মায়ের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের জন্য আলাদা কোনও দিবসের প্রয়োজন হয় না, তবে বিশেষ একটি দিনে যদি খানিকটা সময় আলাদা করে বাবাকে দেয়া যায়, তাতে ক্ষতি কী?

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে বাবা দিবস পালনের প্রচলন হয়। বাবা দিবসের ধারণাটি পশ্চিমা বিশ্বের হলেও দিবসটি এখন বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১১১ টি দেশে পালন করা হয়। ভালোবাসা, নির্ভরতা আর ভরসার ছায়া জড়িয়ে আছে যে শব্দটির মধ্যে তা হলো পৃথিবীর ছোট ও মধুর শব্দ 'বাবা' ডাকটির মধ্যে। পৃথিবীর সকল বাবার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকেই যায়  শুরু থেকে। বাবা থাকেন সাহসী, নিঃস্বার্থ, যিনি সন্তানদের জন্য নিজের সব সুখ-শখ,আহ্লাদ বিসর্জন দেন। বাবার সারাটা জীবন কাটে সন্তানদের পেছনে, পরিবারের পেছনে। বাবার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের এই বিশেষ দিবসে সন্তানেরা বাবাদের কোনও কোনও উপহার দিতে পছন্দ করে। বিশ্বের অনেক দেশে ঘটা করে বাবা দিবস উদযাপন করা হয়। সমাজ,সংস্কৃতি, দেশভেদে উদযাপনে কিছুটা বৈচিত্র্য দেখা যায়। কোনও দেশে হয়তো সন্তান বাবাকে ফুলের তোড়া ও কার্ড উপহার দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়,আবার কোনও দেশে নেকটাই, টুপি, মোজা ও বিভিন্ন স্পোর্টস সামগ্রী দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। তবে দেশ,সমাজ,সংস্কৃতি কিংবা উপহার ভিন্ন হলেও বাবার প্রতি সন্তানদের ভালোবাসায় নেই কোনও ভিন্নতা। সেখানে প্রকাশভঙ্গি নয়,ভালোবাসা প্রকাশই মুখ্য।

বাবা দিবস কিংবা বাবাদের নিয়ে অনেক কবি কবিতা লিখেছেন। তার কিছু অংশ নিচে উল্লেখ করছি :-
কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর 'আমি যদি বাবা হতাম,বাবা হত খোকা' কবিতায় লিখেন--

" আমি যদি বাবা হতাম, বাবা হত খোকা
না হলে তার নামতা,
রোজ যদি হত রবিবার! 
কি মজাটাই হত যে আমার! 
কেবল ছুটি! থাকত নাক নামতা লেখা জোকা!
থাকত নাকো যুক্ত অক্ষর, অংকে ধরত পোকা!"

রফিকুল ইসলাম তাঁর 'বাবা আর আমি' কবিতায় লিখেছেন -

"বাবা,তুমি কি জানো,
আমি ধীরে ধীরে তুমি হয়ে যাচ্ছি! 
তুমি বিছানায় শুয়েই ঘুমিয়ে পড়তে 
আর আমি ভাবতাম তুমি পৃথিবীর নিশ্চিন্ত এক মানুষ। 
এখন বুঝি,ক্লান্তির কাছে তুমি ছিলে অসহায়! 
তোমার মতো আমিও এখন জীবন নয়
জীবিকার কাছে ছুটে চলা মানুষ। "

মীনাক্ষী দাস তাঁর 'বাবা' কবিতায় লিখেছেন -

"সাত সকালে অফিস যেতেন বাবা
ফিরতে ফিরতে অনেকটা রাত হত
ফিরত যখন সারা গায়ে ঘাম
বিধ্বস্ত ঝোড়ে কাকের মতো....।"

হাবিবুল্লাহ সরকার তাঁর 'প্রিয় বাবা' কবিতায় লিখেছেন -

"এই যে আমি হচ্ছি বড়
বাড়ছে যে জ্ঞান বুদ্ধি 
বাবার পরম আদর শাসন
জীবনের এক শুদ্ধি।"

আকরাম হোসাইন তাঁর 'বাবা মানেই সুখ ' কবিতায় লিখেছেন -

"আজও আমার চোখে ভাসে 
হারানো সেদিন, 
বাবার তরেই জমে আছে 
আমার শত ঋণ।"

বাবা দিবসে আমি একজন সংগ্রামী বাবা,গর্বিত বাবার কথা উল্লেখ করতে চাই। নাম তাঁর মো: হাতেম আলী। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক।মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের কান্দিগাঁও গ্রামে তাঁর বাড়ি। তাঁর একমাত্র কন্যা হোসনে আরা বেগম (স্বপ্না)। শৈশব থেকেই অত্যন্ত মেধাবী স্বপ্না।
২০০৫ সালে তেতইগাঁও রশিদ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি -তে জিপিএ- ৫ , ২০০৭ সালে তেজগাঁও মহিলা কলেজ, ঢাকা থেকে এইচএসসি - তে জিপিএ - ৫ ,২০১৩ সালে বগুড়া মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন কৃতিত্বের সাথে। ৩৪তম বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৬ সালে প্রথম যোগদান করেন বড়লেখা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ানস্ এন্ড সার্জনস্ ( বিসিপিএস) থেকে ২০২৩ সালে এফসিপিএস ( গাইনী ও অবস.) ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে কর্মরত আছেন। একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও একজন ভালো ডাক্তার হিসেবে সারা জেলায় ইতিমধ্যে অনেক সুনাম কুড়িয়েছেন । জনাব মো: হাতেম আলী বাবা দিবসে একজন সফল বাবা হিসাবে নিজেকে গর্ববোধ করেন।

শুরুর দিকে বাবা দিবসের এতটা জনপ্রিয়তা না থাকলেও বর্তমানে বাবা দিবস বেশ জাঁকজমক পূর্ণভাবে উদযাপন করা হয়। আর একজন প্রকৃত সন্তান হিসাবে আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত এই বিশেষ দিনটিতে নিজের বাবাকে আগের চেয়ে আরও বেশি সম্মান ও শ্রদ্ধা করা।

বিশ্বের সকল বাবার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। 

 

সাজ্জাদুল হক স্বপন 
শিক্ষক, কবি ও লেখক।

রাজু

×