
ছবি: সংগৃহীত
ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার মহামায়া ইউনিয়নের মাটিয়াগোধা গ্রামের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন মোঘল আমলের নির্মিত ৪০০ বছরের পুরোনো এক ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিদর্শন—চাঁদগাজী ভূঁইয়া জামে মসজিদ। এই মসজিদ শুধু একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি ইতিহাস, ঐতিহ্য ও স্থাপত্যের এক জীবন্ত সাক্ষ্য বহন করছে। প্রায় চারশো বছর আগের মোঘল আমলে নির্মিত এই মসজিদ এখনো ঠিক তেমনই আগের মত যেমন দৃঢ়,তেমনই স্থির।
জানা যায়,মসজিদটি নির্মাণ করেন মোঘল আমলের প্রভাবশালী বাংলার জমিদার বারো ভূঁইয়াদের বংশধর জমিদার চাঁদগাজী ভূঁইয়া ১১২২ হিজরিতে তথা (১৭১২-১৩) খ্রিস্টাব্দে প্রায় ২৮ শতক জমির ওপর স্থাপিত এই মসজিদটি নির্মাণ করেন বলে মসজিদের নাম পলকে উল্লেখ আছে। এটি ফেনী জেলার প্রথম ও অন্যতম প্রাচীনতম পাকা মসজিদ বলে স্থানীয়রা জানান।
মসজিদটির স্থাপত্যশৈলীতে মোঘল আমলের ঘরানার ছাপ স্পষ্ট। চুন, সুরকি এবং ক্ষুদ্র ইট দিয়ে তৈরি এ মসজিদের দেয়ালগুলো চওড়া ও মজবুত। ৪৮ ফুট দৈর্ঘ্য, ২৪ ফুট প্রস্থ এবং ৩৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট এই মসজিদে রয়েছে তিনটি গম্বুজ সম্বলিত অসাধারণ কারুকার্য ও নিখুঁত নির্মাণশৈলী। এর প্রতিটি খাঁজ, প্রতিটি দেয়ালে ইতিহাস যেন কথা বলে।
এই মসজিদের প্রতিটি ইট যেন বহন করে এক অতীতকালের নিঃশব্দ গল্প। এলাকার প্রবীণরা বলেন, বহু বছর আগে এখানে শুধু ধানের ক্ষেত আর ঘন গাছপালা ছিল। সেই সময়ের মানুষদের জন্য এই মসজিদ ছিল ইমানের আশ্রয় এবং মিলনের কেন্দ্রবিন্দু। আজও সেই ধর্মীয় ও সামাজিক ভূমিকা অব্যাহত রেখেছে মসজিদটি।
স্থানীয়রা জানায় শুধু নামাজ পড়তেই নয়, মসজিদটি দেখতে জেলা ও এর বাহিরের এলাকার দূরদূরান্ত থেকেও দর্শনার্থীরা প্রতিদিন ছুটে আসেন এই মসজিদটি দেখতে । অনেকে ছবি তোলেন, কেউ কেউ বসে থাকেন মসজিদের পাশে, ইতিহাসের গন্ধ শুঁকতে। এটি যেন এক নীরব পাঠশালা, যেখানে দাঁড়ালেই অনুভব করা যায় অতীতের পবিত্র স্পর্শ।
জানা যায়,চারশত বছরের পুরোনো স্থাপনা হলেও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধীরে ধীরে এর গায়ে বয়সের ছাপ পড়ছে। স্থানীয়দের দাবি, এটি যেন জাতীয় ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পায় এবং সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা হয়। মসজিদের মূল নকশা অক্ষুণ্ন রেখে মসজিদটি সংস্কার করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
চাঁদ গাজী ভূঁইয়া জামে মসজিদ শুধু ছাগলনাইয়া উপজেলা বা ফেনী জেলা নয়, এটি বাংলাদেশের গৌরবের প্রতীক। ইতিহাস, ধর্ম, স্থাপত্য—তিনের এক সম্মিলনে গড়ে ওঠা এই মসজিদকে ঘিরে আবর্তিত হয় এলাকার আত্মপরিচয়। শতাব্দী পেরিয়েও মসজিদটি আজও বলে যায়, অতীত কখনও হারিয়ে যায় না—সে রয়ে যায় প্রাচীরের ভাঁজে, মানুষের মনে।
Mily