ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ১ আষাঢ় ১৪৩২

বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ ঐতিহ্য, টিকিয়ে রাখতে শরীয়তপুরে হা-ডু-ডু প্রতিযোগ

বিপ্লব হাসান হৃদয়,কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, শরীয়তপুর

প্রকাশিত: ০২:৩৯, ১৫ জুন ২০২৫

বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ ঐতিহ্য, টিকিয়ে রাখতে শরীয়তপুরে হা-ডু-ডু প্রতিযোগ

ছবি: জনকন্ঠ

গ্রামীণ বাংলার মাটি ও মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন ছিল হা-ডু-ডু। একসময় গ্রামবাংলার আনাচে-কানাচে, মাঠে-ঘাটে, খোলা প্রান্তরে প্রতিদিনই গড়ে উঠত এ খেলার জমজমাট আসর। বাঁশির সুরে মুখরিত হতো পরিবেশ, চারদিক জুড়ে ছড়িয়ে পড়ত উচ্ছ্বাসের রঙিন দৃশ্য। কিশোর-যুবকদের প্রাণের উচ্ছ্বাসে মুখর হতো গোটা গ্রাম। কিন্তু সময়ের পালাবদলে, প্রযুক্তি নির্ভর জীবনের ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে সেই প্রাণের খেলা।

নতুন প্রজন্মের কাছে হা-ডু-ডু যেন এখন শুধুই গল্পের অংশ। স্মার্টফোন-ইন্টারনেটের যুগে মাঠে নেমে শরীরচর্চার বদলে তারা বন্দি হয়ে পড়ছে ভার্চুয়াল জগতে। এই প্রেক্ষাপটেই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে নতুন প্রাণ দিতে শরীয়তপুরে আয়োজন করা হয় হা-ডু-ডু প্রতিযোগিতার।

শনিবার (১৪ জুন) বিকেলে শরীয়তপুর সদর উপজেলার ষোলঘর নদীর পাড়ে আতাউর রহমান খান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এই আয়োজনে জমে ওঠে উৎসবের আবহ। পুরো আয়োজন জুড়ে ছিল বর্ণাঢ্য সাজসজ্জা, নানা বয়সী মানুষের সরব উপস্থিতি আর প্রাণবন্ত এক আবহ।

দিনব্যাপী আয়োজনে অংশ নেন স্থানীয় বিভিন্ন দলের খেলোয়াড়রা। চূড়ান্ত খেলায় মুখোমুখি হয় বিবাহিত বনাম অবিবাহিত দল। রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর জয় ছিনিয়ে নেয় অবিবাহিতরা। পুরো খেলাজুড়ে দর্শকদের মাঝে ছিল ব্যাপক উৎসাহ, করতালির ঝঙ্কারে মুখর হয়ে ওঠে নদীর পাড়।

খেলা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন আয়োজকরা।

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি সুরুজ আহমেদ খান বলেন, "আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখন হা-ডু-ডু ছিল প্রতিদিনকার খেলার অংশ। তবে আজ কালের বিবর্তনে এই খেলা প্রায় বিলুপ্তির পথে। আতাউর রহমান খান ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা খেলাধুলা খুবই ভালোবাসতেন। ফুটবল, ক্রিকেট, নৌকা বাইচের পাশাপাশি হা-ডু-ডু ছিল তাঁর অন্যতম প্রিয় খেলা। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা এ আয়োজন করে আসছি। আমাদের উদ্দেশ্য—তরুণ প্রজন্মকে মাদক ও মোবাইল আসক্তি থেকে দূরে রেখে মাঠমুখী করে তোলা।"

আয়োজকদের ভাষ্যমতে, এই আয়োজন কেবল একটি খেলা নয়, বরং এক ধরনের সাংস্কৃতিক জাগরণ। তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এ ধরনের নিয়মিত আয়োজনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম গ্রামীণ ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হবে, আগামীর বাংলাদেশ পাবে সুস্থ, সচেতন ও ঐতিহ্যনিষ্ঠ এক প্রজন্ম।

Mily

×