বাবাকে ভালবাসতে আলাদা কোনো দিনের প্রয়োজন হয় না, তবু একটা নির্দিষ্ট দিন থাকলে মন্দ হয়না, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় গর্ব, সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ—আমার বাবা।
পেশায় তিনি একজন দিনমজুর, কিন্তু আমার চোখে তিনি একজন নায়ক। যিনি কোনোদিন নিজের স্বপ্নের কথা বলেননি, কিন্তু আমাদের জন্য গড়ে তুলেছেন অসংখ্য স্বপ্নের পথ।
বাবা যেন একটু কঠিন হয়ে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। ছোটবেলায় বুঝিনি কত বড় ত্যাগ একজন বাবা প্রতিদিন করে যান সন্তানদের জন্য। সকালে ঘুম ভাঙার আগেই তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেন, কাঁধে একটা ফাটা ব্যাগে দা,হাতুড়ি, শাবল ইত্যাদি নিয়ে । ঘরে ফিরতেন সন্ধ্যায়, পরিশ্রান্ত মুখে এক চিলতে হাসি নিয়ে। তার গায়ে কখনো নতুন জামা দেখিনি, কখনো দেখিনি নিজের জন্য কিছু চাইতে। কিন্তু আমাদের খাতা-কলম যেন কোনোদিন কম না পড়ে, তার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন।
বাবা কখনো আমাদের কষ্ট বুঝতে দেননি।
যখন স্কুলে পড়ার খরচ বেড়ে যেত, তখন মা'র মুখে শুনতাম—
"তোমার বাবা আজ একবেলা না খেয়ে টাকা জমিয়েছে, শুধু তোমার ফিসটা দিতে পারবে বলে।"
সেদিন বুঝেছিলাম, বাবা শুধু রক্তে-মাংসে গড়া একজন মানুষ নন—তিনি ভালোবাসার এক অব্যক্ত স্রোত।
আমাদের কাছে তার একটাই কথা ছিল:
"মানুষের মতো মানুষ হইও। আমি চাই না তোমরা আমার মতো রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করো। আমি চাই তোমরা মাথা উঁচু করে বাঁচো।"
আজ আমরা দুই ভাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি, আমাদের প্রতিটি সাফল্যের পেছনে, প্রতিটি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের পেছনে, প্রতিটি ছোট-বড় অগ্রগতির পেছনে একজন মানুষের ছায়া—আমার বাবা।
আজ যখন ক্লাসে বসে লেকচার শুনি, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় হেঁটে বেড়াই, তখন মনে পড়ে সেই মলিন মুখে হাসিমাখা মানুষটার কথা, যিনি নিজে ভালো জামা না পরে, আমাদের জীবনের রঙিন জামাটা বুনে দিচ্ছেন প্রতিদিন।
বাবারা আড়ালেই থেকে যায়। কখনই বাবারা ভালোবাসা বা আদর দেখাতে পারেনা সামনে থেকে। আজ এত বছর পর মনে হচ্ছে, বলা হয়নি—
"ভালোবাসি বাবা। তোমার জন্যই আজ আমরা স্বপ্ন দেখি, তোমার জন্যই এগিয়ে চলছি। তুমি আমাদের জীবনের বাতিঘর, ছায়া, ভালোবাসা আর আত্মত্যাগের অপর নাম।"
তোমাকে নিয়ে গর্ব হয়, বাবা। আমরা প্রতিদিন তোমার স্বপ্ন বুকে নিয়ে বড় হচ্ছি। ইনশাআল্লাহ, একদিন সেই স্বপ্নগুলো পূর্ণ করব—তোমার কষ্ট যেন সার্থক হয়।
পৃথিবীর সব বাবাকে “বাবা দিবস” এর শুভেচ্ছা
রাজু
