ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মাতৃগর্ভের শিশুদের মস্তিষ্কেও যেভাবে পড়ছে জলবায়ু বিপর্যয়ের প্রভাব!

প্রকাশিত: ১৪:৫৫, ১২ জুন ২০২৫

মাতৃগর্ভের শিশুদের মস্তিষ্কেও যেভাবে পড়ছে জলবায়ু বিপর্যয়ের প্রভাব!

ছবি: সংগৃহীত

জলবায়ু বিপর্যয়ের প্রভাব শুধু উপকূলের ঘরবাড়ি ভেঙে পড়া কিংবা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়া পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। গবেষকেরা বলছেন, এসব দুর্যোগের প্রভাব থেকে যায় অনাগত শিশুর মস্তিষ্কেও—যারা তখনো জন্মই নেয়নি।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী PLOS One-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, গর্ভাবস্থায় জলবায়ুজনিত চাপের মধ্যে পড়া মায়েদের গর্ভে থাকা শিশুদের মস্তিষ্কে পরবর্তীতে গঠনগত পরিবর্তন দেখা গেছে। এই গবেষণার পটভূমি ছিল ২০১২ সালের ঘূর্ণিঝড় স্যান্ডি, যা নিউইয়র্ক এবং নিউ জার্সি শহরজুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল।

গবেষণায় দেখা যায়, যেসব শিশুরা মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ‘চাপের’ মুখোমুখি হয়েছে, তাদের মস্তিষ্কের ‘বেসাল গ্যাংলিয়া’ অংশে ৬% পর্যন্ত আকৃতিগত বৃদ্ধি ঘটেছে—যা পরবর্তীতে আচরণগত সমস্যা বা আবেগ-নিয়ন্ত্রণের জটিলতার ইঙ্গিত দিতে পারে।

৮ বছর পরও ধরা পড়ছে ঝড়ের ছাপ

গবেষণায় অংশ নেওয়া শিশুদের বয়স এখন প্রায় আট। তাদের মধ্যে ১১ জনের মা ২০১২ সালে স্যান্ডির সময় গর্ভবতী ছিলেন। নিউইয়র্ক সিটির কুইন্স কলেজের অধ্যাপক ড. ইয়োকো নমুরা, যিনি গবেষণাটির সহ-লেখক, জানান, ‘ঝড়ের সময় গর্ভবতী নারীরা যেসব চাপের মধ্যে পড়েছিলেন, তার প্রভাব আমরা শিশুদের মস্তিষ্কে শনাক্ত করতে পেরেছি।’

নিউইয়র্কের ফ্লাশিং শহরের এই কলেজটিই সেসময় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। নমুরা নিজেই সেই সময় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা গর্ভবতী নারীদের মানসিক বিপর্যয় লক্ষ্য করেন এবং এরপর থেকেই এই গবেষণার উদ্যোগ নেন।

গরমেও বাড়ছে ঝুঁকি

শুধু ঝড়ই নয়, গর্ভাবস্থায় চরম গরম বা তাপপ্রবাহের মুখোমুখি হলে শিশুদের মস্তিষ্কে আরও জটিল পরিবর্তন দেখা গেছে। একদল শিশুর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বেসাল গ্যাংলিয়ার একাংশ বড় হলেও অন্য অংশ সংকুচিত—যা একধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে। গবেষকদের মতে, এটি এমন এক পরিস্থিতি যেখানে মস্তিষ্কের একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্য অংশ অতিরিক্ত কাজ করে সেটি পুষিয়ে নিতে চায়।

গবেষণার প্রধান লেখক ডোনাটো ডি-ইনজেনিয়িস, যিনি সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের একজন ডক্টরাল গবেষক, জানান, ‘এই পরিবর্তনগুলো শিশুর আচরণগত জটিলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।’

গবেষণা ছোট হলেও তাৎপর্য বিশাল

যদিও গবেষণায় মাত্র ৩৪ জন শিশুর তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি একটি ‘trailblazing’ (অগ্রদূত) গবেষণা। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো-জলবায়ু ওয়ার্কিং গ্রুপের চেয়ারপার্সন বারচিন ইকিজ বলেন, ‘ছোট হলেও এই গবেষণার তাৎপর্য অসাধারণ। বিশ্বজুড়ে এখন শিশুদের একসঙ্গে গরম, দূষণ এবং দুর্যোগের সম্মিলিত প্রভাবে বড় হতে হচ্ছে।’

গবেষকদল এখন আরও বড় আকারে গবেষণার পরিকল্পনা নিয়েছে, যেখানে ৮০ জন শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ চলছে। যদিও পূর্ণাঙ্গ ফলাফল প্রকাশের আগেই তারা প্রাথমিক পর্যবেক্ষণগুলো প্রকাশ করেছে—জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য।

গবেষকদের আহ্বান

গবেষকদের আহ্বান, গর্ভবতী নারীদের জলবায়ু বিপর্যয় সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। কারণ, গর্ভকালীন সময়ে এই চাপ শুধু মায়ের ওপরই নয়, প্রভাব ফেলতে পারে আগামী প্রজন্মের ওপরও।

অধ্যাপক নমুরা বলেন, ‘যারা গর্ভধারণের পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য এই তথ্য জানা অত্যন্ত জরুরি। একইসাথে আমাদের সমাজকে গর্ভবতী নারীদের রক্ষার কৌশল নিয়ে ভাবতে হবে।’

 

সূত্র: এনডিটিভি।

রাকিব

×