
ছবিঃ সংগৃহীত
কাজাখস্তানের আক্তাউ শহরের বাসিন্দা ও পরিবেশবিদ আদিলবেক কোজিবাকভ শৈশবে প্রতিদিন ক্যাভিয়ার খেতেন—রুটি ও মাখনের সাথে সামুদ্রিক স্টারজান মাছের ডিম। এখন বয়স ৫১, আর সেই ক্যাভিয়ারের স্বাদও অতীত, দোকানে পাওয়া যায় না। কারণ—স্টারজান মাছ এখন বিলুপ্তপ্রায়। আর এই প্রজাতির সঙ্গে সঙ্গে আজ বিপন্নতার মুখে পুরো কাস্পিয়ান সাগর।
“আজ আর গবেষণার দরকার নেই, আমাদের চোখের সামনেই সাগরটি শুকিয়ে যাচ্ছে”—বলেছেন কোজিবাকভ, যিনি কাজাখস্তানের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নাগরিক পরামর্শ পরিষদের সদস্য।
গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে
Nature সাময়িকীতে প্রকাশিত এক সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হয়েছে—এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ কাস্পিয়ান সাগরের পানির উচ্চতা কমে যেতে পারে ১৮ মিটার পর্যন্ত। এতে সাগরটি ৩৪ শতাংশ পর্যন্ত তার পৃষ্ঠভাগ হারাতে পারে।
এমনকি যদি ৫-১০ মিটার পানিও কমে যায়, তাহলে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে কাস্পিয়ান অঞ্চলের মূল্যবান বাস্তুতন্ত্র। বিলুপ্তির মুখে পড়তে পারে কাস্পিয়ান সিল এবং স্টারজান মাছের আবাসস্থল।
স্টারজান মাছ বিলুপ্তির পথে
কোজিবাকভ জানালেন, একসময় আক্তাউ শহরের প্রতিটি দোকানে ক্যাভিয়ার পাওয়া যেত। কিন্তু অতিরিক্ত মাছ ধরা ও পরিবেশ ধ্বংসের ফলে স্টারজান এখন প্রায় নিঃশেষ।
“আমার মা বিশ্বাস করতেন ক্যাভিয়ার স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এখন সেই ক্যাভিয়ারই আর নেই”—আক্ষেপ করলেন তিনি।
কাস্পিয়ান সাগর: একটি কৌশলগত জলাধার
-
এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্থলবেষ্টিত জলাধার
-
পাঁচটি দেশ ঘিরে রেখেছে: রাশিয়া, কাজাখস্তান, তুর্কমেনিস্তান, ইরান, আজারবাইজান
-
এটি এশিয়া-ইউরোপ সংযোগের “Middle Corridor” এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ
-
কাস্পিয়ান অঞ্চলে রয়েছে তেল ও গ্যাসের বড় উৎস
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন—এই সাগরের ভবিষ্যৎ আরাল সাগরের মতোই ভয়াবহ হতে পারে
আরাল সাগরের মতো হবে ভবিষ্যৎ?
বিশেষজ্ঞরা ভয় পাচ্ছেন, কাস্পিয়ান সাগরের ভবিষ্যৎ হয়তো ১৯৬০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের কৃষিকাজের জন্য অতিরিক্ত পানি সরিয়ে নেওয়ার ফলে ধ্বংসপ্রাপ্ত আরাল সাগরের মতোই হতে পারে।
বর্তমানে আরাল সাগর শুধু ১০ শতাংশ জায়গা জুড়ে অবশিষ্ট রয়েছে, এবং এর পরিণতি স্থানীয় পরিবেশ ও জনগণের স্বাস্থ্যে ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলেছে।
দায় শুধু জলবায়ুর নয়
বিশ্লেষকরা বলছেন, কাস্পিয়ান সাগরের সংকটের জন্য শুধু জলবায়ু পরিবর্তন নয়, বরং দায়ী নদীর উৎস বন্ধ হওয়া, অতিরিক্ত খনিজ আহরণ এবং অঞ্চলিক অব্যবস্থাপনাও।
পরিবেশবিদদের আহ্বান
“আমরা শুধু বলছি না, এটা চোখে দেখাও যাচ্ছে। কাস্পিয়ান সাগরের পাড় এখন অনেক দূরে চলে গেছে, পানির স্তর চোখে পড়ার মতোভাবে নেমে যাচ্ছে”—বলেছেন কোজিবাকভ।
কাস্পিয়ান সাগর শুধু একটি জলাধার নয়, এটি এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশ ও অর্থনৈতিক সংযোগ।
এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এই সাগরও হয়তো ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেবে, যেমন হয়েছে আরাল সাগরের বেলায়।
জলবায়ু রক্ষায় বিশ্বজুড়ে এখনই সচেতনতা ও কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন—না হলে হারিয়ে যাবে আমাদের ভবিষ্যৎ।
সূত্রঃ আল জাজিরা
ইমরান