ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

ইরানের ‘অপরাজেয়’ ভাবমূর্তির সমাপ্তি, পরিণতি হতে পারে সুদূরপ্রসারী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:৫৮, ২৬ জুন ২০২৫

ইরানের ‘অপরাজেয়’ ভাবমূর্তির সমাপ্তি, পরিণতি হতে পারে সুদূরপ্রসারী

ছবিঃ সংগৃহীত

তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ইরান তার সীমান্তের বাইরেও যুদ্ধ চালানোর জন্য একটি জটিল প্রক্সি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল—যার মাধ্যমে শত্রুদের দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল, আর সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি নিজের ক্ষমতা আরও মজবুত করেছিলেন। ফলে ইরানের মাটিতে সরাসরি হামলার চিন্তা ছিল প্রায় অকল্পনীয়।

কিন্তু সেই অজেয়তার চিত্রটি একদিনেই বদলে যায়—১৩ জুন, যখন ইসরায়েল ইরানের ভেতরে নজিরবিহীন এক চমকপ্রদ হামলা চালায়। এ হামলা শুধু তেহরানের নিরাপত্তা বোধ ভেঙে দেয়নি, বরং দেশটির দীর্ঘদিন ধরে লালিত শক্তিমানের ভাবমূর্তিও তছনছ করে দেয়।

হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের বাড়িতে ঢুকে হত্যা করা হয়, কেউ কেউ তখন পরিবারসহ ঘুমিয়ে ছিলেন। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, হামলায় ৬২৭ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অন্তত ৪৯ জন নারী ও ১৩ জন শিশু। যুক্তরাষ্ট্রও ১৬ জুন ইসরায়েলের অভিযানে যোগ দেয় এবং তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা বর্ষণের পরপরই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে।

এই হামলার পর ধারণা করা হচ্ছে, ইরানের সরকার আরও কঠোর হয়ে উঠবে—দেশের ভেতরে দমন-পীড়ন বাড়াতে পারে এবং বৈদেশিক নীতিতে আরও আগ্রাসী মনোভাব নিতে পারে।

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এই হামলার মাধ্যমে ‘শাসন পরিবর্তনের’ স্বপ্ন দেখেছিল, যাতে তাদের জন্য অনুকূল একটি সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু সেই লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়ে ইরান এখন উল্টো এই ‘ব্যর্থতা’র ওপর দাঁড়িয়ে বিজয়ের দাবি করছে।

ইরান দ্রুত নিহতদের স্থলাভিষিক্ত করেছে এবং যাদের ইসরায়েলের সহযোগী মনে করছে, তাদের ওপর কঠোর দমন অভিযান চালিয়েছে। ইতিমধ্যে ‘ইসরায়েলের দালাল’ অভিযোগে ৭০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে কর্তৃপক্ষ।

সরকারের পক্ষ থেকে শক্তি প্রদর্শন বেশ কার্যকর হয়েছে বলে মত দিয়েছেন অনেকেই। একজন নাগরিক বলেন, “সরকার আমাদের এমন পরিস্থিতিতে ফেলেছে, তবে যুদ্ধ পরিস্থিতি মোটামুটি ভালোভাবে সামাল দিয়েছে।”

তবে ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। বিশেষত, সংস্কারপন্থীদের দমন এবং ক্ষমতার শূন্যতায় ইসলামী বিপ্লবী গার্ড (IRGC)-এর প্রভাব আরও বাড়বে বলে মনে করছেন অনেকেই। ৪৫ বছর বয়সী নেদা বলেন, “IRGC এখন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।”

বলা হচ্ছে, সর্বোচ্চ নেতা খামেনি বাঙ্কারে অবস্থান করছেন এবং বাইরের জগতের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। যুদ্ধবিরতির পরও তিনি প্রকাশ্যে আসেননি।

নেদা আরও বলেন, “তারা (সরকার) শক্তি প্রদর্শনে সফল হয়েছে, অন্তত কিছু সময়ের জন্য সেটি কাজেও দেবে। কিন্তু গত কয়েক বছরে আমরা যে অগ্রগতি করেছি—সংস্কারের দিকে, তা কি টিকবে? এত কিছু কিসের জন্য ছিল? পরিবর্তন তো আমাদের ভেতর থেকেই শুরু হয়েছিল। এখন আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে?”
 

সূত্র: সিএনএন

মুমু

×