ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

রাজস্ব আদায়ে জটিলতা

প্রকাশিত: ১৮:০৬, ২৬ জুন ২০২৫

রাজস্ব আদায়ে জটিলতা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে অপসারণ ও আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের কথিত ‘নিপীড়নমূলক’ বদলি আদেশ বাতিলের দাবিতে স্থবির হয়ে পড়েছে সারা দেশের রাজস্ব আদায় কার্যক্রম। গোটা দেশে একযোগে এই কর্মসূচি পালনের ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে এনবিআর। আন্দোলনরত এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ সারাদেশে ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতি পালন করেছে। চেয়ারম্যানকে অপসারণ না করলে শনিবার থেকে কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দিয়েছে। যা কোনোভাবেই ন্যায্যতার পরিচয় বহন করে না। দাপ্তরিক দাবি-দাওয়া প্রতিটি বিভাগে থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার কিছু সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে।
সারাদেশে কলমবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করার নৈতিক অধিকার তাদের রয়েছে। কিন্তু জনগণকে জিম্মি করে রাজস্ব আদায়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার কোনো এখতিয়ার রাষ্ট্রের কোনো দপ্তরের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর নেই। ভুলে গেলে চলবে না দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুর্ণনের সঞ্জীবনী শক্তি হলো এনবিআরের সচল কার্যক্রম। রাষ্ট্রকে জিম্মি করা কারো জন্যই কল্যাণকর নয়। রাষ্ট্রের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। 
সাধারণত আমরা দেখে থাকি, প্রতি অর্থবছরের শেষ দুই মাসে দৈনিক প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। কিন্তু কলমবিরতি কর্মসূচির কারণে রাজস্ব আহরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত ১২ মে এনবিআরকে দুই ভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। ২৫ মে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, এনবিআর বিলুপ্ত নয়, বরং এ প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীন ও বিশেষায়িত’ বিভাগের মর্যাদায় উন্নীত করা হবে। এর বিরোধিতা করে এনবিআরের অধীনস্থ কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা গত ২৬ মে পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও কলমবিরতি পালন করে। 
আন্দোলনকারীরা এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানকে পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী আখ্যা দিয়েছে। তাদের দাবি, চেয়ারম্যান রাজস্ব ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। আন্দোলন চলাকালীন সময় ‘প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলক’ আচরণের অংশ হিসেবে এনবিআর থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দুটি বদলির আদেশ জারি করা হয়েছে। তবে জারি করা আদেশ অনুযায়ী কর্মকর্তারা নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেননি। সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী, সরকার যে কাউকে, যে কোনো সময়, যে কোনো স্থানে বদলি করতে পারে, রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ তা মানতে বাধ্য।
অন্যদিকে, অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের পেছনে একটি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর ইন্ধন রয়েছে। অধ্যাদেশ অনুযায়ী এনবিআরের রাজস্বনীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা পৃথক করা হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই। সংস্কারে রাজনৈতিক সদিচ্ছাও আছে। রয়েছে প্রশাসনিক দুর্বলতা। অভিযোগ রয়েছে, এনবিআরের ভেতর থেকেও কেউ কেউ সংস্কারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন। আমরা মনে করি, এই সংস্কার সময়ের দাবি। রাষ্ট্র সংস্কারের যে বা যারাই বাধা হয়ে দাঁড়াবে, সরকারকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে।

প্যানেল

×