
ডিজিটাল প্রযুক্তি কিশোর কিশোরীদের ওপর জটিল প্রভাব ফেলে। ডিজিটাল প্রযুক্তি হচ্ছে এমন একটি প্রযুক্তি যা তথ্যকে ডিজিটাল আকারে সংরক্ষণ করে এবং যার মাধ্যমে যোগাযোগ করা যায়। বর্তমানে পৃথিবীতে ব্যবহৃত সবচেয়ে জনপ্রিয় ডিজিটাল প্রযুক্তি হচ্ছে স্মার্টফোন, যা একদিকে পরস্পরের সাথে সংযোগ, শিক্ষা ও সমর্থন লাভের পাশাপাশি নতুন পথ উন্মোচন করে দেয়। অপরদিকে অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার, সাইবার বুলিং ও ভুল তথ্যের কারণে এটি মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও বিষণ্নতার মতো সমস্যার সৃষ্টি হয়।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী দেশের ৭০ শতাংশ মানুষের কাছে স্মার্টফোন রয়েছে। ২০২২ সালে এর হার ছিল ৫২ শতাংশ। বাংলাদেশের মধ্যে শহরে ৪১ শতাংশ, গ্রামে ২৬ শতাংশ মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। বিভিন্ন জরিপে দেখা গিয়েছে, কিশোর কিশোরীদের মধ্যে ৩০.৬৮ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ১৩-১৮ বছরের কিশোর কিশোরীদের মধ্যে ৯৫ শতাংশ স্মার্টফোন ব্যবহার করে। আধুনিক যুগে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবের মতো ডিজিটাল প্রযুক্তি কিশোর কিশোরীদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের সমীক্ষা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ৭৪ শতাংশ কিশোর কিশোরী ডিজিটাল প্রযুক্তির ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরেছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ঘরে বসেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। পরিবার, বন্ধুবান্ধবের পাশাপাশি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে যোগাযোগ করা যায়। ৩৪ শতাংশ কিশোর মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ পেতে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে যা মাইন্ডফুলনেস ও স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে। ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে অনলাইন কোর্স ও টিউটোরিয়ালগুলোর মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করা যায়। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গান, লেখা, ভিজুয়্যাল আর্টসহ বিভিন্ন উপায়ে নিজের সৃজনশীলতা প্রকাশ করার সুযোগ থাকে।
তবে কিশোর কিশোরীদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরেছে। সোশ্যাল মিডিয়ার অনেক কাল্পনিক কথাবার্তা কিশোর কিশোরীদের ত্রুটি তুলনা করার পরিস্থিতি তৈরি করে, যা তাদের আত্মসম্মান ও আত্মবিশ্বাসে আঘাত হানে। এছাড়া অনলাইন বুলিং বা হয়রানির শিকার হওয়ার ঘটনা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর আঘাত হানে। অতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম ঘুমের সমস্যা, মনোযোগ সমস্যা, বিষণ্নতার মতো সমস্যা সৃষ্টি করে। এছাড়া অনেকে পর্নের মতো খারাপ আসক্তিতে জড়িয়ে পড়ে যা সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ। সামাজিক মাধ্যমে লাইক কমেন্ট করা, ভাইরাল হওয়ার প্রতিযোগিতা তরুণদের মধ্যে উদ্যোগ আত্মসম্মানবোধ ও ডিপ্রেশন তৈরি করছে। এছাড়া গেমিং বা স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের প্রতি আসক্তি পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও একাকিত্বকে তীব্র করছে। বাচ্চাদের খেলাধুলা বা বাইরের কার্যক্রম কমে যাওয়ায় স্থুলতা, ডায়াবেটিসের মতো রোগ বাড়ছে। কিশোর কিশোরীরা সাইবার বুলিংয়ের শিকার ব্যক্তিদের প্রায়ই মানসিক চাপ, উদ্যোগ এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতার মান বৃদ্ধি পায়। ভুয়া বিরক্তিকর তথ্য ক্ষতিকারক বিষয়বস্তুর অবিরাম এক্সপোজের মাধ্যমে আমাদের মানসিক সুস্থতাকে প্রভাবিত করছে।
বর্তমান দেশ যেহেতু প্রযুক্তিনির্ভর। তাই ডিজিটাল প্রযুক্তি থেকে একেবারে মুক্ত থাকা সম্ভব নয়। কিশোর কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থের প্রতি দৃষ্টি রেখে, ডিজিটাল প্রযুক্তির অত্যাধিক ব্যবহার থেকে মুক্তির জন্য কাউন্সেলিং, জনসচেতনতা, প্রচার -প্রচারণা ইচ্ছেশক্তি ও পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারে ইতিবাচক দিকগুলো ব্যবহার করে যাতে পুরোপুরি কাজে লাগানো যায় এবং নেতিবাচক দিকগুলো যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সেজন্য প্রয়োজন ভারসাম্য দৃষ্টিভঙ্গি।
লেখক : শিক্ষার্থী, ইডেন মহিলা কলেজ
প্যানেল