
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের ইতিহাস কেবল জন্মভূমির নয়, এটি আত্মত্যাগের, প্রতিরোধের, এবং ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর এক দীর্ঘ সাহসী অভিযাত্রা। এই অভিযাত্রার প্রতিটি বাঁকে—যখন জাতি অস্তিত্বের প্রশ্নে দাঁড়িয়েছে, গণতন্ত্র লাঞ্ছিত হয়েছে কিংবা মানুষ নিঃশ্বাস ফেলার স্বাধীনতাটুকু হারিয়েছে—তখন বারবার একটি নাম সামনে এসেছে: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি।
১৯৭১ সাল। জাতির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম সেই অধ্যায়ে, যখন সবাই দিশেহারা—ঠিক সেই সময়ে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে এক তরুণ সেনা অফিসার স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন— তিনি মেজর জিয়াউর রহমান। তাঁর কণ্ঠে উচ্চারিত সেই ঘোষণা ছিল না শুধু শব্দ—ছিল বাঙালির বহু প্রতীক্ষিত মুক্তির দিকনির্দেশ। সেই ঘোষণার পর বাঙালিরা দেশমাতৃকাকে শত্রুমুক্ত করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধে। এরপর তাঁর নেতৃত্বে গঠিত জেড ফোর্স।স্থল যুদ্ধের একটি দুর্ধর্ষ ব্রিগেড—যুদ্ধের মাঠে সাহসিকতায় অবদান রাখে। এই বাহিনীর সেক্টর কমান্ডার হিসেবে জিয়াউর রহমান ছিলেন সামরিক কৌশল ও নেতৃত্বের প্রতীক।
১৯৯০ সাল। সময়ের চাকা আবার ঘুরে দাঁড়ায়। দেশের বুকে বিরাজমান স্বৈরতন্ত্র—এরশাদের শক্ত মসনদ—বিজয়ের রঙিন গল্পে পরিণত হয় এক আপোষহীন নেতৃত্বের কাছে। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি তখন আর একটি রাজনৈতিক দল নয়—একটি গণজাগরণের নাম। গুলি, লাঠি, দমন-পীড়ন পেরিয়ে বারবার রাজপথ কাঁপিয়ে বিএনপি প্রমাণ করে—গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আপোষ নয়, লড়াই-ই একমাত্র পথ।
এবং এখন—২০২৪। অনেকেই হয়তো সাম্প্রতিক আন্দোলনকে কেবল এক মাস বা ৩৬ দিনের প্রতিবাদ বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো—এই লড়াই দীর্ঘ ১৭ বছরের প্রস্তুতির, নিরব প্রতিবাদের, বারবার নিপীড়নের শিকার হয়ে আবার মাথা তুলে দাঁড়াবার এক গৌরবময় ইতিহাস। এই সময়ের মধ্যে বিএনপি'র হাজারো নেতা-কর্মী হয়েছেন গ্রেফতার, শিকার হয়েছেন মিথ্যা মামলার, নিখোঁজ কিংবা প্রাণ হারিয়েছেন। তবুও থামেনি দলটির সংগ্রাম। বিএনপি জানে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয় একদিনে নয়, হয় প্রতিদিন প্রতিরোধে।
কেউ যদি বলেন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ সহজ ছিল, তবে ইতিহাসই সাক্ষ্য দেবে—এই স্বৈরশাসনের দেয়াল ভাঙতে শতধাক্কা দরকার ছিল। আর সেই ধারাবাহিক, সুসংগঠিত প্রতিরোধের প্রতিটি পদক্ষেপে বিএনপিই থেকেছে অগ্রভাগে। আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে যিনি রেখেছেন কৌশলগত নেতৃত্ব, তিনিই তারেক রহমান। দেশ থেকে দূরে থেকেও তিনি দিয়েছেন দিকনির্দেশনা, পরিকল্পনা ও প্রেরণা। তাঁর নেতৃত্বে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল—সব স্তরের নেতাকর্মী এক কণ্ঠে বলেছে: “গণতন্ত্র চাই, ভোটাধিকার চাই, বাংলাদেশ বাঁচাতে হবে।”
তিনটি যুগান্তকারী আন্দোলন—একটি ছিল স্বাধীনতার, একটি ছিল স্বৈরতন্ত্র পতনের, একটি চলমান গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের। এই তিন সংগ্রামে বারবার একটিই দল সামনে থেকেছে, নেতৃত্ব দিয়েছে, সর্বস্ব দিয়ে লড়েছে। কারও কারও অবস্থান ছিল এক-আধটা পর্বে, কেউ হয়তো সময় বুঝে সুযোগ নিয়েছে, কেউ আবার নিরব থেকেছে। কিন্তু এই জাতির প্রতিটি সংকটে একটিই দল সব সময় বাংলাদেশের পক্ষ হয়ে মাঠে থেকেছে—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি।
বিএনপি শুধু একটি রাজনৈতিক সংগঠন নয়। এটি একটি সংগ্রামের নাম, একটি রক্তাক্ত পথচলার নাম, একটি জনগণের পক্ষে থাকা দায়বদ্ধতার নাম।
লেখিকা: সায়মা বিনতে কবির
এলএলবি দ্বিতীয় বর্ষ, বাংলাদেশ ইসলামি ইউনিভার্সিটি।
ফারুক