ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

চাকরির খোঁজে রাজশাহীর যুবকরা উড়ছেন বিদেশের আকাশে

তানভীরুল আলম তোহা, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, রাজশাহী

প্রকাশিত: ০২:০০, ২৭ জুন ২০২৫

চাকরির খোঁজে রাজশাহীর যুবকরা উড়ছেন বিদেশের আকাশে

আজকাল তরুণদের যেকোনো আড্ডায় বা পারিবারিক আলোচনায় একটি বিষয় প্রায় অনিবার্যভাবে উঠে আসে বিদেশ যাওয়ার পরিকল্পনা। কে কোন দেশে যাবে, কার IELTS প্রস্তুতি কতদূর, স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা কতটা, ইউরোপ না আমেরিকা কোনটা ভালো? এমনকি কার ক্লাস কবে শুরু হবে তাও আলোচনায় আসে। যেন চারপাশে একটাই সুর বিদেশে যাওয়ার তীব্র আগ্রহ।

এই আগ্রহকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার অবকাশ খুব কম। বরং এই প্রবণতার পেছনে রয়েছে অনেক গভীর বাস্তবতা ও বদলে যাওয়া সমাজচিত্র।

এক সময় বিদেশে উচ্চশিক্ষা মানে ছিল সমাজের সচ্ছল ও প্রভাবশালীদের সন্তানদের জন্য বরাদ্দ। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দৃশ্যপট পাল্টেছে। এখন মধ্যবিত্ত, এমনকি গ্রামের কৃষক পরিবার থেকেও অনেকেই আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছেন। আবেদন করছেন অনলাইনে, বৃত্তি জোগাড় করছেন, লোন নিয়ে টিকিট কাটছেন। সবকিছু একপ্রকার আত্মবিশ্বাস ও শৃঙ্খলার সঙ্গেই সামলাচ্ছেন।এবং এটাও লক্ষণীয় যে, এখন অনেক বাবা-মা মেয়েদেরও স্বাধীনভাবে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন। এই মনোভাবের পরিবর্তন নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

সম্প্রতি পরিচিত একজন যুক্তরাজ্যে পড়তে গেছেন। সামাজিক মাধ্যমে ক্যাম্পাস থেকে তাঁর পোস্ট করা ছবিতে যে আত্মবিশ্বাস দেখা যায়, তা অনুপ্রেরণাদায়ী। শুধু তিনি নন, অনেকেই বিদেশে গিয়ে নতুন জীবনের সন্ধান পাচ্ছেন শিক্ষা, কাজ, আড্ডা, ভ্রমণ সবকিছু নিয়ে গোছানো এক জীবন।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটও বদলেছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল এই উন্নয়ন আমাদের অনেক দূর এগিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তরুণদের বিদেশমুখিনতার উৎস এসব উন্নয়ন নয়, বরং জীবনব্যবস্থার প্রতিকূলতা, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ও অসমতার ভয়।

অনেক তরুণই বিশ্বাস করেন, এখানকার শিক্ষা ব্যবস্থায় তাদের প্রকৃত মূল্যায়ন হয় না। চাকরির বাজারে প্রবেশে থাকে নানা প্রতিবন্ধকতা ও পক্ষপাত। রাজনীতির প্রভাব, শিক্ষাঙ্গনের কলুষতা, ছাত্র রাজনীতির সহিংসতা এসব তরুণদের হতাশ করে। ফলে তারা একটি নিরাপদ, গঠনমূলক পরিবেশের খোঁজে বিদেশকে বেছে নেয়।

তবুও একটা প্রশ্ন থেকে যায় সবাই যদি দেশ ছাড়ে, তাহলে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব কে দেবে?

তরুণদের বিদেশে পড়তে যাওয়া একান্তই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই শিক্ষাকে দেশের কাজে লাগানোও জরুরি। দেশে না ফিরলেও বিদেশ থেকে কীভাবে দেশের সঙ্গে যুক্ত থাকা যায়, সেটাও ভাবা দরকার।আমাদের প্রয়োজন একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, যাতে বিদেশে থাকা দক্ষ, মেধাবী তরুণরা গবেষণা, প্রযুক্তি, ব্যবসা কিংবা সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে অংশ নিতে পারেন।

দেশপ্রেম কেবল খেলা দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে, সেটিকে বাস্তব কাজে রূপান্তর করতে হবে।

আফরোজা

×