ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

বারবার করোনার হানায় চাই সম্মিলিত সচেতনতা ও শক্তিশালী ইমিউনিটি

বদরুল ইসলাম, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, বরগুনা

প্রকাশিত: ০১:২৯, ২৭ জুন ২০২৫

বারবার করোনার হানায় চাই সম্মিলিত সচেতনতা ও শক্তিশালী ইমিউনিটি

করোনা এখন আর শুধুই একটি মহামারির নাম নয়, বরং বিশ্ববাসীর ঘাড়ের ওপর ঝুলে থাকা একটি স্থায়ী হুমকি। অতীতে আমরা করোনাকে যেমন ভয় পেয়েছিলাম, সময়ের সঙ্গে সেই ভয় কিছুটা কমে এলেও, এর আগ্রাসন কিন্তু এখনো থেমে যায়নি। করোনা আজও রূপ বদলে, জিনগত রূপান্তরের মাধ্যমে আমাদের শরীর ও সমাজকে বারবার আঘাত হানছে। এমন বাস্তবতায় শুধু সরকার বা স্বাস্থ্যখাতের ওপর নির্ভর করলেই চলবে না; প্রয়োজন সম্মিলিত সচেতনতা এবং ব্যক্তিগতভাবে গড়ে তোলা শক্তিশালী ইমিউনিটি।

করোনা আমাদের কী শেখায়?

একসময় আমরা মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, টিকাদান ইত্যাদি বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন ছিলাম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই চর্চা অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। অথচ বাস্তবতা হলো, করোনাভাইরাসকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব নয়—শুধু নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এই ভাইরাস বারবার তার রূপ বদলাচ্ছে, ভিন্ন ভিন্ন উপসর্গ নিয়ে ফিরে আসছে। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে আমরা দেখেছি, শুধু ওষুধ বা হাসপাতালে বেড পেলেই জীবন রক্ষা হয় না। শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (ইমিউনিটি) যদি দুর্বল হয়, তবে সামান্য সংক্রমণও ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। অনেকেই ওমিক্রনকে হালকাভাবে নিয়েছেন, কিন্তু দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের রোগীদের জন্য সেটিও হয়ে উঠেছিল প্রাণঘাতী।

শক্তিশালী ইমিউনিটি মানেই সুস্থ ভবিষ্যৎ

ইমিউনিটি কেবল ট্যাবলেট বা ইনজেকশনের মাধ্যমে গড়ে ওঠে না। এটি গড়ে তুলতে হয় ধাপে ধাপে—খাদ্য, ঘুম, ব্যায়াম, মানসিক স্বাস্থ্য, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের মাধ্যমে। ঘরে বসেই প্রতিরোধব্যবস্থা শক্তিশালী করা সম্ভব:

  • প্রতিদিন মৌসুমি ফল (যেমন: পেয়ারা, আমলকি, কমলা, মাল্টা) খাওয়া

  • রসুন, আদা, হলুদ, কালোজিরা, লেবু ও মধুর ব্যবহার

  • পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশুদ্ধ পানি পান

  • মানসিক চাপমুক্ত থাকা

  • নিয়মিত হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাচলা

এছাড়াও ধূমপান ও অতিরিক্ত ফাস্টফুড এড়িয়ে চলাও ইমিউনিটিকে শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে।

সম্মিলিত সচেতনতা কেন প্রয়োজন?

করোনা প্রতিরোধে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। একটি পরিবার সচেতন হলে একটি পাড়া সচেতন হয়; একটি পাড়া সচেতন হলে গোটা সমাজেই ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। তাই করোনা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে সরকার, গণমাধ্যম, শিক্ষক, ইমাম, জনপ্রতিনিধি, স্বাস্থ্যকর্মী ও সামাজিক সংগঠন—সবার সম্মিলিতভাবে কাজ করা প্রয়োজন। শুধু শহরে নয়, গ্রামাঞ্চল, হাট-বাজার, মসজিদ ও মাদরাসাতেও সচেতনতা বাড়াতে হবে।

ডা. জান্নাতুল নাছেরা জুঁই বলেন, “করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট এখনো বিভিন্ন দেশে শনাক্ত হচ্ছে। বাংলাদেশেও এই ভ্যারিয়েন্ট ঢুকে পড়তে পারে। মানুষের শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধক্ষমতা যদি শক্তিশালী না থাকে, তাহলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থদের ক্ষেত্রে আরও বেশি যত্নবান হতে হবে। কারণ, তাদের ইমিউনিটি স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল। এদের জন্য চাই বাড়তি পুষ্টি, স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও পরিচর্যা।”

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই শুরু হোক পরিবর্তন

পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষা করতে চাইলে শিশুদের এখন থেকেই স্বাস্থ্য ও ইমিউনিটি সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া জরুরি। স্কুলে স্কুলে ‘স্বাস্থ্যশিক্ষা’ ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালু করা উচিত। শিশুরা যেন খাওয়াদাওয়া, হাত ধোয়া, ব্যায়াম ও ঘুমের গুরুত্ব বোঝে, সেটি শেখাতে হবে। শুধু পাঠ্যবই নয়—বাস্তব অভ্যাসই গড়ে দেবে তাদের ভবিষ্যৎ।

আমাদের করণীয় কী?

  • মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের অভ্যাস বজায় রাখা

  • ঘরোয়া প্রতিরোধমূলক খাবার খাওয়া

  • স্বাস্থ্যকর রুটিন গড়ে তোলা

  • অসুস্থতা লুকিয়ে না রেখে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া

  • সামাজিক ও ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবার্তা প্রচার

    • যেমন: “সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন। ইমিউন হোন, নিরাপদ থাকুন। নিজে বাঁচুন, পরিবারকে বাঁচান, সমাজকে রক্ষা করুন।”

  • গ্রামে-গঞ্জে স্বাস্থ্য ক্যাম্প ও সচেতনতামূলক সভার আয়োজন

করোনা বারবার আসবে, কিন্তু আমরা বারবার ভেঙে পড়ব না—এই প্রতিজ্ঞাই আমাদের পথ দেখাবে। স্বাস্থ্য সচেতনতা যেন কেবল জরুরি অবস্থার জন্য নয়, বরং প্রতিদিনের জীবনের অংশ হয়ে ওঠে। এবং এই অভ্যাসের মূল ভিত্তি হোক শক্তিশালী ইমিউনিটি।

আমরা যদি সবাই মিলে সচেতন হই, শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াই—তবে যেকোনো ভাইরাসই হার মানবে।
আমরাই জিতব—সম্মিলিত সচেতনতা ও সজাগ শরীরের শক্তিতে।

নুসরাত

×