ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফল উৎসব: ঐতিহ্যের রঙে রঙিন এক আবর্তন

খাইরুল ইসলাম মুন্না, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ০২:৫৭, ২৭ জুন ২০২৫; আপডেট: ০২:৫৮, ২৭ জুন ২০২৫

অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফল উৎসব: ঐতিহ্যের রঙে রঙিন এক আবর্তন

বাংলাদেশ, এক কৃষিপ্রধান দেশ যেখানে ফলের বৈচিত্র্য শুধু খাদ্য নিরাপত্তাই নয়, আমাদের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকেও ধারণ করে। এই ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এবং স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেতুবন্ধ তৈরি করতে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ADUST) সম্প্রতি আয়োজন করেছিল এক বর্ণিল ফল উৎসব ২০২৫। বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, এগ্রিবিজনেস বিভাগের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যেন সেজে উঠেছিল দেশীয় ফলের বিমোহক রূপে।

ফলের প্রাচুর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো উৎসব
উৎসবের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশীয় ফলের পুষ্টিগুণ ও গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং কৃষি খাতের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচিত করানো। ফল উৎসবের প্রতিটি কোণে ছিল প্রাণবন্ত উচ্ছ্বাস আর দেশীয় ফলের মনমাতানো সুবাস। আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, তরমুজ, পেয়ারা, ড্রাগনসহ প্রায় ২২ ধরনের মৌসুমী ফলের সমাহার ছিল এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ। ফলের প্রদর্শনী স্টলগুলোতে ভিড় জমিয়েছিলেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। রঙবেরঙের ফলগুলো শুধু চোখ জুড়িয়েই দেয়নি, তাদের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কেও নতুন করে জানতে পেরেছেন দর্শনার্থীরা।

অতিথি ও বক্তাদের অনুপ্রেরণামূলক বার্তা
এগ্রিবিজনেস বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোঃ মোশাররফ হোসেনের প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এবং এডাস্ট স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. আ ন ম এহসানুল হক মিলন। তার বক্তব্যে ড. মিলন বাংলাদেশের কৃষি ও ফল চাষের বৈচিত্র্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, "এমন আয়োজন নতুন প্রজন্মকে দেশীয় ফলের গুরুত্ব ও পুষ্টিমান সম্পর্কে সচেতন করে তোলে।" তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন যে, এডাস্টের এগ্রিবিজনেস বিভাগ পচনশীল ফল থেকে 'ভ্যালু অ্যাডেড' পণ্য তৈরির গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সচিব জনাব কামরুজ্জামান লিটু। তিনি এগ্রিবিজনেস বিভাগকে এই চমৎকার আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং দেশীয় ফলের গুণাগুণ ব্যাখ্যা করে এর আবাদ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর আলোকপাত করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ জাহাঙ্গীর আলম তার বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের বাইরে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং এই ফল উৎসবকে তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেন।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও সম্মাননা জ্ঞাপন
ফল প্রদর্শনীর পাশাপাশি ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যা শিক্ষার্থীদের প্রতিভার এক দারুণ প্রদর্শনী ছিল। গান, নাচ আর আবৃত্তিতে মুখরিত ছিল উৎসব প্রাঙ্গণ, যা দর্শকদের বাড়তি আনন্দ দিয়েছে।
এই উৎসবের মধ্য দিয়ে স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে বলে আয়োজকরা আশা প্রকাশ করেছেন। কৃষি ও কৃষকের প্রতি সম্মান জানানো এবং তাদের উৎপাদিত পণ্যের গুরুত্ব তুলে ধরা এই আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য জনাব কামরুন্নাহার, এগ্রিবিজনেস বিভাগের কোঅর্ডিনেটর জনাব মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক সামিরা ইসলাম রেশমী, ড. মুহিবুল হাসানসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ। এগ্রিবিজনেস বিভাগের সম্মানিত অ্যাডভাইজর অধ্যাপক ড. মীর্জা হাছানুজ্জামন অতিথি ও উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

সবশেষে, সদ্য পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী এগ্রিবিজনেস বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোঃ মোশাররফ হোসেনকে বিভাগের পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক প্রদানের মাধ্যমে এই প্রাণবন্ত ফল উৎসবের সফল সমাপ্তি ঘটে। এই উৎসব শুধু দেশীয় ফলের প্রদর্শনীই ছিল না, এটি ছিল কৃষি, সংস্কৃতি ও শিক্ষার এক অপূর্ব মেলবন্ধন, যা অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ও প্রগতির এক নতুন বার্তা বয়ে এনেছে।

 

রাজু

×