ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

গুয়াদা নেগেটিভ: এক নারীর শরীরে মিলল বিশ্বের একমাত্র রক্তের গ্রুপ!

প্রকাশিত: ১৭:২১, ২৬ জুন ২০২৫

গুয়াদা নেগেটিভ: এক নারীর শরীরে মিলল বিশ্বের একমাত্র রক্তের গ্রুপ!

ছবি: প্রতীকী

বিশ্বে প্রথমবারের মতো আবিষ্কৃত হলো একেবারে নতুন এক ধরনের রক্তের গ্রুপ, যা পাওয়া গেছে মাত্র একজন মানুষের শরীরে—ফ্রান্সের ওভারসিজ অঞ্চল গুয়াদেলুপের এক নারীর দেহে।

এই ৬৮ বছর বয়সী নারীর রক্তে পাওয়া এই বিরল গ্রুপটির নাম রাখা হয়েছে ‘গুয়াদা নেগেটিভ’, যার নামকরণ করা হয়েছে গুয়াদেলুপ দ্বীপের স্থানীয় নাম ‘Gwada’ থেকে।

সম্প্রতি ইতালির মিলানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক রক্ত সংস্থান সম্মেলনে (International Society of Blood Transfusion Congress) গবেষকরা এ বিষয়ে তাদের আবিষ্কার উপস্থাপন করেন।

২০১১ সালের রহস্য উন্মোচিত হলো ২০২৪-এ

২০১১ সালে প্যারিসে একটি রুটিন সার্জারির প্রস্তুতির সময় এই নারীর রক্ত পরীক্ষা হয়। কিন্তু পরীক্ষায় তার রক্তের কোনো প্রচলিত গ্রুপ চিহ্নিত করা যায়নি, এমনকি বিশ্বের কোথাও তার রক্তের মিল পাওয়া যায়নি।

প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে সে সময় গবেষণার অগ্রগতি থেমে যায়। এরপর ২০১৯ সালে উন্নত জিন বিশ্লেষণ প্রযুক্তি (high-throughput gene sequencing) ব্যবহার করে আবারও তার রক্ত পরীক্ষা শুরু করেন গবেষকরা।

জিন বিশ্লেষণে মিলল অজানা রহস্য

দুই বছরের বিশ্লেষণে গবেষকরা পুরো জিনোম (DNA) পরীক্ষা করে দেখতে পান যে, PIGZ নামে একটি জিনে বিশেষ এক রকম মিউটেশন রয়েছে, যার ফলে রক্তকণিকার পৃষ্ঠে থাকা প্রোটিনগুলোর গঠন ভিন্ন হয়ে গেছে।

ফরাসি রক্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘Établissement français du sang (EFS)’-এর জীববিজ্ঞানী থিয়েরি পেরার্ড জানান, ‘এই নারী এমন একমাত্র ব্যক্তি, যিনি কেবল নিজের রক্ত নিজেই নিতে পারবেন, পৃথিবীর আর কারো সঙ্গে তার রক্ত মেলে না।’

বিশ্বে রক্ত গ্রুপ এখন ৪৮টি!

এখন পর্যন্ত সর্বজনবিদিত রক্ত গ্রুপ হলো ABO এবং Rh সিস্টেম, যার সমন্বয়ে তৈরি হয় ৮টি প্রচলিত রক্তের ধরন। তবে আন্তর্জাতিক সংস্থা ISBT-এর মতে, বর্তমানে বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত রক্ত গ্রুপ সিস্টেমের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮টি। এর মধ্যে সর্বশেষ সংযোজন হলো গুয়াদা নেগেটিভ।

বিরল রক্তের রোগীদের জন্য আশার আলো

গবেষকেরা মনে করছেন, এ ধরনের নতুন রক্ত গ্রুপ আবিষ্কারের ফলে বিরল রক্তের রোগীদের জন্য আরও উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

বর্তমানে গবেষকদল গুয়াদেলুপ অঞ্চলে আরও এমন রক্তধারী মানুষের খোঁজে রক্তদাতা অনুসন্ধান শুরু করেছেন। কারণ, রক্ত গ্রুপ মূলত বংশানুক্রমে ছড়ায়, তাই একই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে এমন মিল থাকার সম্ভাবনা বেশি।

EFS-এর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘নতুন রক্ত গ্রুপ আবিষ্কার মানে হলো বিরল রক্তধারীদের জন্য উন্নততর চিকিৎসার সুযোগ তৈরি।’

 

সূত্র: লাইভ সায়েন্স।

রাকিব

×