ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কখনও আত্মসমর্পণ করবে না ইরান, নতুন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন আয়াতুল্লাহ খামেনি

প্রকাশিত: ২০:০৯, ২৬ জুন ২০২৫; আপডেট: ২০:১০, ২৬ জুন ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কখনও আত্মসমর্পণ করবে না ইরান, নতুন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন আয়াতুল্লাহ খামেনি

ছবিঃ সংগৃহীত

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, “ইরান কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না।” ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির পর এই প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে মুখ খুললেন তিনি। বক্তব্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার ফলাফলকে “গুরুত্বহীন” বলেও উল্লেখ করেন।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে খামেনি বলেন, “আমেরিকার প্রেসিডেন্ট তার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইরানকে আত্মসমর্পণ করতে হবে। আত্মসমর্পণ! এখন আর এটি শুধু সমৃদ্ধকরণ বা পারমাণবিক ইন্ডাস্ট্রির প্রশ্ন নয়, বরং এটি ইরানকে পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করানোর বিষয়। এমন ঘটনা কখনোই ঘটবে না—কখনোই না।”

এই বক্তব্য এসেছে ইরান-ইসরায়েল ১২ দিনের ভয়াবহ যুদ্ধের পর যখন একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এটি ছিল উভয় দেশের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ও ধ্বংসাত্মক সংঘর্ষ।

পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা নিয়ে ভিন্ন মত

যুদ্ধ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফোরদো, নাটাঞ্জ ও ইসফাহানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, এই হামলায় ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো “ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে”।

তবে খামেনি এই দাবি নাকচ করে বলেন, “ট্রাম্প আসলে এই হামলার প্রভাব বাড়িয়ে দেখাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধ থেকে কিছুই অর্জন করতে পারেনি। তাদের হামলা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে কোনো উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করেনি।”

তিনি আরও বলেন, “ইসলামী প্রজাতন্ত্র বিজয় অর্জন করেছে এবং প্রতিশোধ হিসেবে আমেরিকার মুখে একটি শক্তিশালী চড় বসিয়েছে।”

তার ইঙ্গিত ছিল কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দিকে, যেখানে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।

সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন, ভবিষ্যৎ যুদ্ধের হুঁশিয়ারি

আল-জাজিরার তেহরান প্রতিনিধি রেসুল সেরদার জানান, খামেনি তার ভাষণে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীকে অভিনন্দন জানান এবং বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এই ধারণার প্রতিবাদ করেন যে, ইসরায়েলি হামলায় ইরানি বাহিনী “বড় ধাক্কা” খেয়েছে।

যদিও যুদ্ধের সময় রাজধানী তেহরান ছাড়তে বাধ্য হওয়া বহু মানুষ ধীরে ধীরে শহরে ফিরে আসছেন, সেরদার জানান, “তবুও সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, কারণ তারা বিশ্বাস করেন এটি ছিল কেবল প্রথম ধাক্কা।”

তিনি আরও বলেন, “অনেকেই প্রশ্ন করছেন—ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আদৌ কার্যকর কিনা এবং ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের সম্ভাব্য হামলার মুখে ইরান কতটা প্রস্তুত।”

খামেনি জানান, ইরানি সেনাবাহিনী ইসরায়েলের সামরিক ও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে সফলভাবে আঘাত হেনেছে এবং ভবিষ্যতে ইসরায়েল যদি আবার হামলা করে, তবে আরও বড় ধ্বংসের মুখোমুখি হবে।

তিনি সরাসরি কোনো সামরিক হুমকি না দিলেও উল্লেখ করেন যে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এখনো অক্ষত রয়েছে—যুক্তরাষ্ট্রের দাবি সত্ত্বেও।

তিনি বলেন, "বেশিরভাগ পারমাণবিক স্থাপনাই অক্ষত আছে এবং ইরান তার কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে।”

উভয় পক্ষই দাবি করছে বিজয়

১২ দিনের এই সংঘর্ষের পর ইরান ও ইসরায়েল উভয়ই নিজেদের বিজয়ী বলে দাবি করছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একে “ঐতিহাসিক বিজয়” বলে আখ্যায়িত করেছেন।

অন্যদিকে ইরান জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরমাণু আলোচনা পুনরায় শুরু করতে প্রস্তুত।

তেহরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলি হামলায় ইরানে কমপক্ষে ৬২৭ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আর ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ২৮ জন

আগামী শনিবার তেহরানে নিহত শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

সূত্রঃ আল জাজিরা

ইমরান

×