
ছবিঃ সংগৃহীত
প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৭ লাখ ২৭ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে, এবং এদের অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের নাগরিক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র তথ্য অনুযায়ী, আত্মহত্যার সর্বোচ্চ হার রয়েছে আফ্রিকার দেশ লেসোথোতে, আর এশিয়ার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া।
ডব্লিউএইচওর সাম্প্রতিক রিপোর্টে জানানো হয়, ২০২১ সালে ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ ছিল আত্মহত্যা। সে বছর সংঘটিত মোট আত্মহত্যার ৭৩ শতাংশই হয়েছিল নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। এর মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হলো— ১০টি শীর্ষ দেশের মধ্যে চারটিই আফ্রিকায় অবস্থিত।
আত্মহত্যার পেছনের কারণ কী?
আত্মহত্যার পেছনে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, জৈবিক, মানসিক ও পরিবেশগত নানা কারণ কাজ করে। কিছু কিছু ঘটনা তাৎক্ষণিক আবেগপ্রবণ মুহূর্তে ঘটে যায়— পারিবারিক কলহ, আর্থিক চাপ, দীর্ঘস্থায়ী রোগব্যথা কিংবা মানসিক সংকট থেকে অনেকেই এই চরম সিদ্ধান্ত নেয়।
উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে আত্মহত্যার সঙ্গে বিষণ্নতা ও অ্যালকোহল ব্যবহারের মতো মানসিক ব্যাধির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আবার শরণার্থী, অভিবাসী, আদিবাসী, এলজিবিটিআই জনগোষ্ঠী এবং কারাবন্দিরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
WHO আরও জানায়, বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ২.১ শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ করা হয়। সবচেয়ে আত্মহত্যাপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে অনেকগুলোরই প্রতি ১ লাখ জনগণের বিপরীতে ১৩ জন মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীর গড়ের নিচে রয়েছে।
ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালের শীর্ষ ১০ আত্মহত্যাপ্রবণ দেশ
১. লেসোথো: প্রতি ১ লাখে আত্মহত্যার হার ৩৬.৭। যদিও ২০২০ সালে ছিল ৪১.৩৪, তবে কিছুটা উন্নতি হলেও মানসিক স্বাস্থ্যখাত এখনো চরম সংকটে।
২. এসওয়াতিনি: আত্মহত্যার হার ৩১.৮। ১২ লাখ মানুষের জন্য মাত্র ১ জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ।
৩. গায়ানা: ৮.২৬ লাখ জনসংখ্যার জন্য রয়েছে মাত্র ১৬ জন মনোরোগ চিকিৎসক। আত্মহত্যার হার ২৬.৩।
৪. জিম্বাবুয়ে: হার ২৫.৪। স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ০.৪% মানসিক স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় হয়। ১.৫ কোটি মানুষের জন্য আছে মাত্র ১ থেকে ১৮ জন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ।
৫. সলোমন দ্বীপপুঞ্জ: আত্মহত্যার হার ২২.৫। মানসিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর তীব্র ঘাটতি রয়েছে।
৬. সুরিনাম: একই হার ২২.৫। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ হিসেবে এর অবস্থাও করুণ।
৭. উরুগুয়ে: হার ২২। ৩০ লাখের বেশি মানুষের জন্য রয়েছে মাত্র ৫৪৪ জন মনোরোগ চিকিৎসক।
৮. দক্ষিণ আফ্রিকা: আত্মহত্যার হার ২১.১। ৫৫ মিলিয়ন মানুষের জন্য রয়েছে মাত্র ৯৩০ জন মনোরোগ চিকিৎসক।
৯. মাইক্রোনেশিয়া (ফেডারেটেড স্টেটস): হার ২০.৮। ১.১২ লাখ মানুষের জন্য মাত্র ১ জন মনোরোগ চিকিৎসক।
১০. দক্ষিণ কোরিয়া: আত্মহত্যার হার ২০.৬। এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ, যদিও দেশটি অর্থনৈতিকভাবে উন্নত।
উপসংহার
আত্মহত্যা প্রতিরোধে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সচেতনতা নয়, প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় নীতিগত পরিবর্তন, মানসিক স্বাস্থ্য খাতে আরও বেশি বরাদ্দ এবং সচল হেলথকেয়ার সাপোর্ট সিস্টেম। ডব্লিউএইচওর এ তথ্য আমাদের সামনে এ সমস্যা মোকাবিলার গুরুত্ব ও জরুরি বাস্তবতা স্পষ্ট করে তুলেছে।
ইমরান