
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রংপুর-১ আসন (সংসদীয় আসন-১৯)। ঐতিহ্যগতভাবে জাতীয় পার্টির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসনে বর্তমানে মাঠে নেমেছে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, নাগরিক পার্টি, গণধিকার পরিষদ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তিগুলো। একদিকে যেমন চলছে প্রার্থী চূড়ান্তের তড়িঘড়ি, অন্যদিকে জনগণের মধ্যে তৈরি হয়েছে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে অনেক আশা-ভরসা।
রংপুর-১ আসন গঠিত হয়েছে গংগাচড়া উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন এবং রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ১ থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে। এ আসনের ভোটার রয়েছে ৩,৩২,২২২ (ডিসেম্বর ২০২৩) এর মধ্যে, পুরুষ ভোটার ১,৬৭,১৮৩ জন, নারী ভোটার ১,৬৫,০৩৭ জন ও তৃতীয় লিঙ্গ: ২ জন। গংগাচড়ার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে সাতটি ইউনিয়নই তিস্তা নদী ভাঙনের কবলে রয়েছে। ফলে এই এলাকার মানুষের মূল দাবি উন্নয়ন ও টেকসই অবকাঠামো।
রংপুর-১ আসনটি বিগত ১১টি জাতীয় নির্বাচনের বেশিরভাগেই জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। তবে স্থানীয় জনগণের মাঝে একাধিকবার দেখা গেছে "বহিরাগত হটাও, গংগাচড়া বাঁচাও" স্লোগান। কারণ জাপার মনোনীত বেশিরভাগ প্রার্থী এই এলাকার বাসিন্দা ছিলেন না।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনীত এরশাদের ভাতিজা আসিফ লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচিত হন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন জাপার সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা। আবারো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হন রাঙ্গা। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে রাঙ্গা বহিষ্কৃত হলে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ সুযোগ কাজে লাগায় এরশাদের ভাতিজা আসিফ। তিনি লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মাঠে নামেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক মার্কা নিয়ে নির্বাচনে মাঠে থাকেন রাঙ্গা। দুজনেই বহিরাগত হওয়ায় এ সুযোগ কাজে লাগায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবলু। তিনি কেটলি প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন।
৫ আগস্টে দৃশ্যপট পরিবর্তন হলে এ আসনের চিত্র পাল্টে যায়। হাটে-বাজারে, মাঠে-ঘাটে আলোচনা চলছে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে মাঠে রয়েছে জামায়াত। তবে দৌড়ে পিছিয়ে নেই বিএনপিও। জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় সুযোগ নিতে মরিয়া এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল।
দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর থেকেই মাঠে কাজ করছে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও রংপুর মহানগরী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক রায়হান সিরাজী। বিএনপি এখনো আনুষ্ঠানিক প্রার্থী ঘোষণা না করলেও মাঠে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী জোর তৎপরতায় রয়েছেন। এদিকে ইসলামী আন্দোলন তাদের নিয়মিত সভা-সেমিনারের মাধ্যমে অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে। ২৪ গণঅভ্যুত্থানের আদর্শে গড়া রাজনৈতিক দল এনসিপি ইতোমধ্যে উপজেলা সমন্বয়কারী কমিটি ঘোষণা করেছে। অপরদিকে গণঅধিকার পরিষদও মাঠে রয়েছে।
উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা নায়েবুজ্জামান জানান, আমরা এ আসনটি পুনরুদ্ধার করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জামায়াত মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক রায়হান সিরাজীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জনকণ্ঠকে জানান, আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক ও দলীয় কার্যক্রমের মাধ্যমে আমাদের প্রচারণা চালাচ্ছি। আমরা এ আসন নিয়ে আশাবাদী।
এদিকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি চাঁদ সরকার বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছি। নিয়মিত সভা-সমাবেশ ও সেমিনারের মাধ্যমে আমরা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় বিএনপির জনকল্যাণমূলক বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি।
ধানের শীষ প্রতীক পেতে বিএনপি নেতা রুহুল আমিন সহ মাঠে রয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন সুজন। আলোচনায় রয়েছে তরুণ উদ্যোক্তা কে এম রিদওয়ানুল বারী জীয়ন।
এদিকে উপজেলা ইসলামী আন্দোলনের আমীর মাওলানা আনিসুর রহমান জানান, রংপুর জেলা ইসলামী আন্দোলনের আমির এটিএম গোলাম মোস্তফা বাবু কে রংপুর-১ আসনের হাত পাখার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা তাকে নিয়ে কাজ করছি।
অপরদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টির উপজেলা প্রধান সমন্বয়কারী রিফাতুজ্জামান জানান, জনগণের পালস বুঝে আমরা সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছি।
ইতোমধ্যে গণঅধিকার পরিষদ তাদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য হানিফ খান সজীব কে এ আসনের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ নিয়ে সজীব জানান, আমরা এ আসনে গণঅধিকার পরিষদের কার্যক্রম চালাচ্ছি। বিশেষ করে তরুণ যুবকদের মধ্যে অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি।
উপজেলা জাপা নেতা গোলাম ফারুক বলেন, এটি জাতীয় পার্টির ঐতিহ্যবাহী আসন। আমরা চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করব।
স্থানীয় জনগণ এই আসনে এমন একজন সংসদ সদস্য চান যিনি হবেন গংগাচড়ার সন্তান, নদীভাঙন ও অবকাঠামোগত দুরবস্থা থেকে মুক্তির দূত। বহিরাগত প্রার্থীর প্রতি বিরূপ মনোভাব আগেও দেখা গেছে, এবারও সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হতে পারে।
সজিব