ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

দৈনিক জনকন্ঠে সংবাদ প্রকাশের পর বৃক্ষ প্রেমিক সিদ্দিকের পাশে পাইকগাছার ইউএনও

শাহরিয়ার কবির, পাইকগাছা, খুলনা

প্রকাশিত: ১৯:১৪, ২৬ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৯:১৫, ২৬ জুন ২০২৫

দৈনিক জনকন্ঠে সংবাদ প্রকাশের পর বৃক্ষ প্রেমিক সিদ্দিকের পাশে পাইকগাছার ইউএনও

ছবি:সংগৃহীত

‘ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া মেয়েকে বাঁচাতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে পাইকগাছার বৃক্ষ প্রেমিক সিদ্দিক গাজী’—শিরোনামে দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকার অনলাইনে গত ১৮ জুন সংবাদ প্রকাশ হলে বৃক্ষ প্রেমিক সিদ্দিক গাজীর অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেন খুলনার পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন।

পাইকগাছার বৃক্ষ প্রেমিক সিদ্দিক গাজী উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের শ্যামনগর গ্রামের মৃত বেলায়েত গাজীর ছেলে। তার মেয়ের অসুস্থতার সকল খোঁজখবর নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন, সিদ্দিক গাজীর হাতে তার মেয়ের চিকিৎসার জন্য নগদ অর্থ তুলে দেন।

উল্লেখ্য, খুলনার পাইকগাছার বৃক্ষ প্রেমিক সিদ্দিক গাজী (৬৯) উপজেলার কপিলমুনি ইউনিয়নের শ্যামনগর গ্রামের ছেলে। যদিও এলাকায় সবাই তাকে চেনেন বকুল সিদ্দিক নামে। দারিদ্রতা নিত্য সঙ্গী হলেও ১৯৮৫ সাল থেকে শুরু করে অদ্যাবধি খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরাসহ আশপাশের কয়েকটি জেলায় পায়ে হেঁটে ঘুরে ঘুরে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনসহ নানা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১২ হাজারেরও বেশি বকুলের চারা রোপণ করেছেন তিনি। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখিও হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে বকুল গাছ নিয়ে বিটিভির জনপ্রিয় “ইত্যাদি” অনুষ্ঠানে তার একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করে এবং ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়। সে অর্থও তিনি ব্যয় করেছিলেন মানবতার কল্যাণে বৃক্ষরোপণে।

সর্বশেষ দারিদ্র্যতাকে নিত্য সঙ্গী করে দাম্পত্য জীবনে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বিভিন্ন বিল থেকে বিরগুণি শাকসহ নানা রকমের শাক সংগ্রহ করে কপিলমুনি বাজারসহ বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে সেগুলো বিক্রির টাকায় নানা সংকটেও বেশ কাটছিল তার জীবন। তবে স্বল্প সুখই যেন সইলো না তার।

কয়েকদিন আগে তার ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে খাঁদিজা অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য তাকে ডাক্তারের কাছে নিলে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অ্যাপেন্ডিসাইটিস ধরা পড়ে। ফলে অপারেশনসহ ওষুধের খরচ বাবদ ১৪-১৫ হাজার টাকার কথা জানান চিকিৎসকরা। এরপর কয়েকদিন যাবৎ মেয়ের চিকিৎসার খরচ যোগাতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন হতদরিদ্র পিতা ও মানবিক মানুষ সিদ্দিক গাজী।

তার অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে পারছেন না—এমন তথ্য দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকার কাছে আসলে সেখানে ছুটে যান জনকন্ঠ পত্রিকার প্রতিনিধি। সিদ্দিক গাজীর অসহায় কথা শুনে সেটা দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকার অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ হলে, সেটা পাইকগাছা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার দৃষ্টিগোচর হয়। তিনি বকুল প্রেমিক সিদ্দিক গাজীর অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৫ সাল থেকে শুরু করে খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরাসহ আশপাশের কয়েকটি জেলায় অদ্যাবধি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১২ হাজারেরও বেশি বকুলের চারা রোপণ করেছেন তিনি। প্রথমে তিনি বিভিন্ন নার্সারি থেকে চারা কিনে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রোপণ করতেন। এরপর ১৯৯০ সালে তিনি ১০ কাঠা জমিতে নার্সারি গড়ে তোলেন। যদিও এলাকার লোকজন নার্সারিটি নষ্ট করে দেয়। এরপর আবারও অন্যের জমি ইজারা নিয়ে নার্সারি গড়ে তোলেন। ১৯৯০ সালে তৎকালীন ইউএনও মিহির কান্তি মজুমদার তাকে কপিলমুনি কলেজে মালি পদে চাকরি দেন। এ চাকরি প্রত্যাখ্যান করে বকুলের চারা লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন সিদ্দিক গাজী। ২০১৫ সালে বকুল গাছ নিয়ে বিটিভির জনপ্রিয় “ইত্যাদি” অনুষ্ঠানে তার একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করে এবং ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়।

সিদ্দিক গাজীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে পারছিলাম না। এই খবর জনকন্ঠ পত্রিকার লোক এসে আমার কাছে জানতে চাইলে আমি সব বলেছিলাম। সেটা পত্রিকায় প্রকাশ হলে, পাইকগাছা উপজেলার ইউএনও আমাকে ডেকে বৃহস্পতিবার সকালে চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করেছেন। আমি দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকার কর্তৃপক্ষসহ ইউএনও স্যারের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।”

মারিয়া

×