
.
বোরো ধান বীজের দাম কম হওয়ায় বীজ সরবরাহ বন্ধ করেছেন বিএডিসির চুয়াডাঙ্গার চুক্তিবদ্ধ কৃষকরা। ফলে মুখ থুবড়ে পড়েছে বীজ সংগ্রহ কর্যক্রম। কৃষকদের ধান বীজ সরবরাহের শুরুতে কর্তৃপক্ষ দাম নির্ধারণ করেছে। এ মৌসুমে বীজ সংগ্রহমূল্য নির্ধারণ কমিটি প্রত্যায়িত বোরো ধান বীজের দাম জাতভেদে প্রতি কেজি ৪৮-৪৯ টাকা নির্ধারণ করায় কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। তাদের প্রতি কেজিতে প্রায় ৫-৬ টাকা লোকসান গুনতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা বিএডিসি চলতি মৌসুমে বোরো ধান বীজ সংগ্রহ করবে ৭ হাজার ৬৮০ মেট্রিক টন। তাই লোকসান থেকে বাঁচতে বীজ সরবরাহ বন্ধ রেখেছেন তারা। বীজ সংগ্রহ সঠিক সময়ে সম্ভব না হলে দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়বেন। অনেক এলাকায় বৃষ্টির পানি ও বন্যায় চাষের জমি প্লাবিত হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বীজ সরবরাহ না থাকায় বিএডিসি চুয়াডাঙ্গার ৩টি অফিস এলাকায় শুনশান নীরবতা বিরাজ করছে। গত ১০ দিন বন্ধ রয়েছে বীজ সরবরাহ। তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে অফিসগুলো। এখানকার প্রায় শতাশিক শ্রমিক বেকার হয়েছে। কারণ বীজ দিচ্ছেন না কৃষকরা।
কৃষকদের দাবি, বীজের দাম বৃদ্ধি হলেই লোকসান কমানো সম্ভব। কর্তৃপক্ষ বলেছেন, চুক্তিবদ্ধ কৃষকরা বিষয়টি লিখিতভাবে জানালে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। আর বীজ সরবরাহ কর্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের আওতায় জেলায় কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স, অধিক বীজ ও বীজের আপৎকালীন মজুত কর্মসূচি অফিস চুক্তিবদ্ধ কৃষকদের মাধ্যমে ধান বীজ সংগ্রহ করে। দাম নির্ধারণের শুরুতে প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষকদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে। কিছুদিন ধান বীজ সরবরাহ করেছেন চুক্তিবদ্ধ কৃষকরা। বীজের মূল্য জানার পর কৃষকরা বীজ সরবরাহ বন্ধ করেছেন। বীজ সংগ্রহমূল্য নির্ধারণ কমিটি ১৯ জুন প্রতি কেজি বোরো জাতের ধান বীজের দাম নির্ধারণ করেছে ৪৮ থেকে ৪৯ টাকা। চলতি মৌসুমে কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স ৩ হাজার ৬০৫ মেট্রিক টন, অধিক বীজ ২ হাজার ৪৯৫ মেট্রিক টন ও বীজের আপৎকালীন মজুত ১ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন বোরো ধান বীজ সংগ্রহ করার প্রোগ্রাম দিয়েছে চুক্তিবদ্ধ কৃষকদের। কৃষকরা জানান, আমরা বিএডিসির নির্ধারিত জাতের বেশ কয়েকটি ধান চাষ করি জমিতে। সেই ধান থেকে বীজ তৈরির পর বিএডিসিতে সরবরাহ করি। ১ মণ ধান বীজে রূপান্তর করতে গিয়ে আর্দ্রতা, প্রসেসিং ওয়েস্ট ও ধুলা-চিটা বাদ দিয়ে ৩২ কেজি হয়। প্রতি কেজি বীজ ধান প্রস্তুতে খরচ হয় ২ টাকার বেশি। কৃষকদের এক কেজি ধান বীজ উৎপাদন করতে খরচ হয় ৫৩ টাকা। ৪৮ থেকে ৪৯ টাকায় ধান বীজ সরবরাহ করলে কৃষকদের উৎপাদন খরচ উঠবে না। লোকসানের মুখে পড়তে হবে। অন্য কৃষকরা বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি করছেন ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। ন্যায্যমূল্য না পাওয়া পর্যন্ত কৃষকরা বীজ সরবরাহ বন্ধ রাখবেন বলেও তারা জানান।
বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ কৃষকরা জানান, বছরের পর বছর আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। কারণ বিএডিসি ধান বীজের দাম স্বাভাবিকভাবে নির্ধারণ না করায় এ জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। দাম নির্ধারিত হয়েছে ৪৮ থেকে ৪৯ টাকা প্রতি কেজি। ১ কেজি ধান তৈরি করতে ৫৩ টাকার মতো খরচ হয়। তাই বীজ সরবরাহ বন্ধ রেখেছি। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এক বস্তা বীজ ধানও যাবে না। ব্যাংক লোন নিয়ে ধান চাষসহ অন্য খরচ মিটাতে হয়। তারা বলেন, কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বৃদ্ধি করতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা বীজ প্রক্রিয়াজতকরণ কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক এএফএম শফিকুল ইসলাম জানান, বীজ সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল তিনটি অফিসে। বিএডিসি দাম নির্ধারণ করার পর থেকে কৃষকরা ধান সরবরাহ করা বন্ধ রেখেছেন বলে শুনেছি। আমাদের কোোন হাত নেই এখানে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানাব। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।
প্যানেল