
পাহাড় আর সবুজের সমারোহ বেষ্ঠিত খাগড়াছড়ি মহালছড়ি উপজেলার সুন্দর ২ টি গ্রাম মুড়াপাড়া ও যৌথখামার। দু-চোঁখ যেদিকে যায় সুন্দর আর মায়াবতী রুপ লাবন্য হৃদয়কে শীতল করে দেয়। দিনে সূর্যের ঝলমলে আলোর গ্রামটির সৌন্দর্যে বিমোহিত হলেও সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই নেমে আসে আলোর নিচে নিস্কুস কালো অন্ধকার। ছিমছাম নিরবতায় হয়ে উঠে ভয়ংকর।
মহালছড়ি উপজেলার সন্নিকটে অবস্থিত মূড়াপাড়া ও যৌথখামার গ্রামের ২৫২টি পরিবারের বসবাস। জন্মের পর আজও পর্যন্ত আধুনিক জীবন-যাপনের মৌলিক সুবিধা বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত সকল গ্রামবাসী। প্রযুক্তির এই যুগেও অন্ধকারে ডুবে থাকা এসব গ্রামে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। মহালছড়ি উপজেলা সদর থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরত্বে পশ্চিমর অবস্থিত হলেও অবকাঠামোগত অবহেলার শিকার গ্রামদ্বয়। পাশ্ববর্তী গ্রাম সহ উপজেলা থেকে অনেক দূর্গম এলাকাতে বিদ্যুৎ পৌচ্ছালেও অবহেলিত হয়ে পরে আছে এই ২টি দৃষ্টিনন্দন পাহাড়ী গ্রাম।
২৫২টি পরিবারের গ্রাম গুলোতে শিশু, প্রবীণ ও কৃষিজীবী পরিবারগুলোর উপর বিদ্যুৎ সংকটের প্রভাব সর্বাধিক। সন্ধ্যা নামলেই মোমবাতি ও কেরোসিন ল্যাম্পের উপর নির্ভরশীল হতে হয় বাসিন্দাদের। মোবাইল চার্জ, ফ্যান-লাইট, কম্পিউটার, ল্যাপটপ চালানো এমনকি রাতের আঁধারে নিরাপত্তাহীনতা ও নিত্যসঙ্গী।
মহালছড়ি জোন ও উপজেলা প্রাণকেন্দ্রের কাছেই অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও মূড়াপাড়া ও যৌথখামার গ্রামের বাসিন্দারা যেন বাংলাদেশের উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বহু দূরে। প্রশাসনিক সদিচ্ছাই পারে এই "অন্ধকার যুগের অবসান ঘটাতে। তবে স্থানীয়রা এই প্রতিশ্রুতিতে সন্দিহান। গত বছরও অনুরূপ আশ্বাস দেওয়া হলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে তাদের অভিযোগ।
বিদ্যুৎহীনতায় শিক্ষার্থীদের রাতের পড়াশোনা ব্যাহত হওয়ায় স্কুল ড্রপআউটের হার বাড়ছে। সোলার প্যানেল বা জেনারেটরের উচ্চ খরচ সাধারণ পরিবারের নাগালের বাইরে। হাট বাজার সহ অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে সংযোগ না থাকায় গ্রাম দুটি উন্নয়নের মূল স্রোত থেকে পিছিয়ে রয়েছে।
স্থানীয় সমাজকর্মী ভূমিকা ত্রিপুরা জানান, ২০১৪ সাল থেকে ১১ বছর ধরে বিদ্যুতের জন্য আবেদন করে যাচ্ছি। রাঙ্গামাটি ও মহালছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী অফিসে অসংখ্য দরখাস্ত জমা দিয়েছি, কিন্তু এখনো কোনো সাড়া মেলেনি। শিশুরা রাতে পড়ালেখা করতে পারছে না, অসুস্থ মা-বাবার চিকিৎসায়ও সমস্যা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, বারবার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। বেশ কয়েকবার এসে দেখে গিয়েছে কিন্তু সুফল কিছুই হয়নি।
মহালছড়ি উপজেলা বিদ্যুতায়ন আবাসিক প্রকৌশলী মোঃ মোখলেছুর রহমাস এ বিষয়ে জনকন্ঠকে জানান, অতীতে কেন হয়নি সেটা জানা নেই, তবে চলতি বছরের মধ্যে এই গ্রামগুলোকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। সরকারের দেয়া সেবার সবটুকু সাধারণ মানুষের মধ্যে দিতে চাই।
রাজু