ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

গোধূলিলগ্নে সমুদ্র সৈকতে কি করছেন মমতা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২৭ জুন ২০২৫

গোধূলিলগ্নে সমুদ্র সৈকতে কি করছেন মমতা

ছবি: সংগৃহীত

পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘায় জগন্নাথ দেবের মাসিরবাড়ি পরিদর্শনে গিয়ে এক অভিনব দৃশ্যের সাক্ষী হন স্থানীয়রা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিকেলে দিঘার জগন্নাথ ঘাট সংলগ্ন এলাকায় পৌঁছে একটি ‘রামভক্ত’ হনুমানকে চা ও বিস্কুট খাওয়ানোর সময় এক মানবিক মুহূর্ত সৃষ্টি করেন। এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যেখানে অনেকেই মুখ্যমন্ত্রীর এই স্বতঃস্ফূর্ত আচরণকে প্রশংসনীয় বলেছেন। তবে, এই সফরের মূল উদ্দেশ্য ছিল দিঘার নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরে ২৭ জুন অনুষ্ঠিতব্য প্রথম রথযাত্রার প্রস্তুতি পরিদর্শন।

মুখ্যমন্ত্রী বুধবার দিঘায় পৌঁছান, তাঁর সঙ্গে ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ও রাজ্যের শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। রথযাত্রার প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে তিনি বৃহস্পতিবার দিনভর বিভিন্ন বৈঠকে অংশ নেন ও নির্দেশনা প্রদান করেন। দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (ডিএসডিএ), পুলিশ ও ইসকনের সন্ন্যাসীদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে তিনি রথের পথ, নিরাপত্তা ও ভিড় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে মন্দিরে পূজার্চনা শুরু হবে এবং দুপুর আড়াইটায় তিনি নিজে রথের রশি টেনে এই ঐতিহাসিক রথযাত্রার উদ্বোধন করবেন।

নিরাপত্তা ও ভিড় নিয়ন্ত্রণে কড়া নির্দেশ: দিঘার এই রথযাত্রা প্রথমবারের মতো আয়োজিত হচ্ছে এবং এতে প্রায় দেড় থেকে দুই লক্ষ ভক্তের সমাগম ঘটবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ধর্মীয় উৎসবের সময় বিগত দুর্ঘটনার কথা মাথায় রেখে মুখ্যমন্ত্রী কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। তিনি বলেন, “রাস্তায় কোনও ভক্তকে দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। ব্যারিকেডের মাধ্যমে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা হবে, ভক্তরা ব্যারিকেডের পাশ থেকে রথের রশি স্পর্শ করে প্রণাম করতে পারবেন।” এই ব্যবস্থার জন্য প্রায় ১,০০০ পুলিশ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করা হয়েছে।

বিশেষ রথযাত্রার আয়োজন: দিঘার জগন্নাথ মন্দিরটি গত ৩০ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বোধনে চালু হয়। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে নির্মিত এই মন্দির ইতোমধ্যে ধর্মীয় ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রথযাত্রার জন্য তিনটি রথ—জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার—প্রস্তুত করা হয়েছে। রথটি নতুন জগন্নাথ মন্দির থেকে পুরনো মন্দির পর্যন্ত এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দেবে। ভক্তদের সুবিধার্থে রথ বিভিন্ন স্থানে থামবে।

পরিবেশ সুরক্ষায় মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগ: পরিবেশ রক্ষার বিষয়েও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দিঘার সমুদ্র সৈকত এলাকায় প্লাস্টিকমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগকে প্লাস্টিকের পাউচে পানি সরবরাহ বন্ধ করতে বলা হয়েছে। পরিবর্তে, ৩০–৪০টি কিয়স্কে কাগজের কাপে পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে ৪৫০ জন স্যানিটেশন কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন।

রাজনৈতিক বিতর্ক ও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য: রথযাত্রা ও জগন্নাথ মন্দির নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কও দেখা দিয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী এই উৎসবকে হিন্দু ভোটারদের আকৃষ্ট করার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “পুরীর জগন্নাথ মন্দির আমরা ভালোবাসি। দিঘার রথযাত্রা পুরীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা নয়। এটি একটি ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব, যা বিদেশি পর্যটকদেরও আকর্ষণ করবে।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এই উৎসবের মাধ্যমে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও পর্যটন উন্নয়নই লক্ষ্য। এটি স্থানীয় অর্থনীতি ও পর্যটন শিল্পের প্রসারে বড় ভূমিকা রাখবে। হনুমানকে চা-বিস্কুট খাওয়ানোর স্বতঃস্ফূর্ততা তাঁর জনঘনিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছে।”

শহীদ

×