ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

গাজায় ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ সরবরাহের সরাসরি পথ বন্ধ করল ইসরায়েল

প্রকাশিত: ০৭:৫৩, ২৭ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৭:৫৫, ২৭ জুন ২০২৫

গাজায় ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ সরবরাহের সরাসরি পথ বন্ধ করল ইসরায়েল

ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েল উত্তর গাজায় ক্রসিং পয়েন্টগুলো বন্ধ করে দিয়েছে, যার ফলে ভূখণ্ডটিতে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে থাকা শত-সহস্র মানুষের জন্য ত্রাণ সরবরাহের সবচেয়ে সরাসরি পথটি বন্ধ হয়ে গেল। এই পদক্ষেপ গাজার মানবিক পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল বেশ কয়েক মাস ধরে গাজায় ত্রাণ সহায়তা প্রবেশে বাধা দিয়ে আসছে। মাঝেমধ্যে কিছু ট্রাককে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। এর ফলে ফিলিস্তিনের এই উপত্যকাটিতে অনাহার, ওষুধের অভাব এবং স্বাস্থ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। দীর্ঘ এই অবরোধে গাজার পুরো জনগোষ্ঠী মানবিক বিপর্যয়ে ধুঁকছে, এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এটিকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

নেতানিয়াহুর নির্দেশে ত্রাণ সরবরাহ বন্ধের খবর

সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের পেছনে হামাসের ত্রাণ লুট ঠেকাতে সেনাবাহিনীকে দুই দিন সময় বেঁধে দেওয়ার কারণ দেখানো হয়েছে। তবে, আন্তর্জাতিক মহল এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।

'মৃত্যুফাঁদ' হয়ে ওঠা ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র

গাজা প্রশাসনের তথ্যমতে, গত চার সপ্তাহে বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে সহায়তা নিতে গিয়ে ৫৪৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং ৪ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। এ ছাড়া ৩৯ জন নিখোঁজ হয়েছেন। গাজার কর্তৃপক্ষ এই কেন্দ্রগুলোকে 'মৃত্যুফাঁদ' হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলছে, ইসরায়েল খাদ্যকে গণহত্যার অস্ত্রে রূপান্তরিত করেছে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজ্জারিনিও পূর্বে এই ধরনের ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থাকে "ঘৃণ্য বিষয়" হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ

ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এলো যখন গাজায় মানবিক সহায়তা কার্যক্রম ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ইতিমধ্যেই উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষের চরম শঙ্কা দেখা দিয়েছে, কারণ অক্টোবর মাস থেকে ইসরায়েলি বাহিনী এই অঞ্চলকে প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে।

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, গাজায় এখন মানবসৃষ্ট খরার সৃষ্টি হয়েছে এবং পানির অভাবে শিশুদের মৃত্যু শুরুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংস্থাটি ইসরায়েলের এই নীতিকে দায়ী করে বলেছে, ত্রাণকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

এই ঘটনা গাজার অবরুদ্ধ মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েলের ওপর চাপ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সাব্বির

×