ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

কিভাবে ইরানের ভেতর থেকেই হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ২৭ জুন ২০২৫

কিভাবে ইরানের ভেতর থেকেই হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল?

ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার ১২ দিনের ভয়াবহ যুদ্ধে ইসরায়েল শুধু যুদ্ধবিমান ও ড্রোন ব্যবহার করেনি, বরং ইরানের ভেতর থেকে গোপনে পরিচালিত হয়েছে বিস্ময়কর সব অভিযান।

২০২৫ সালের ১৩ জুন ভোরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ যে হামলা শুরু করে, তার কিছু সময় পরেই তারা এমন কিছু ভিডিও প্রকাশ করে, যেগুলো ইরানের অজানা স্থান থেকে রাতের বেলায় ধারণ করা। ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, মোসাদ সদস্যরা ক্যমোফ্লাজ পোশাক, নাইট ভিশন গগলস পরে মরুভূমি অঞ্চল থেকে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ধ্বংস করতে অস্ত্র প্রস্তুত করছে।

ইসরায়েল স্পাইক নামক ছোট ও অত্যাধুনিক গাইডেড মিসাইল ব্যবহার করে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি ও এয়ার ডিফেন্স ধ্বংস করেছে। এসব মিসাইলের উপর ক্যামেরা লাগানো ছিল, যা ইরানের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের দৃশ্য দেখিয়েছে। ইরান নিজেও স্বীকার করেছে, তারা কিছু মোসাদ সদস্যের কাছ থেকে উদ্ধার করা “ইন্টারনেট-ভিত্তিক অটোমেটেড মিসাইল লঞ্চার” পেয়েছে।

তদন্তে উঠে এসেছে, তেহরানের দক্ষিণে শহর-এ-রে অঞ্চলে একটি তিনতলা ভবনে ড্রোন ও বিস্ফোরক প্রস্তুতের গোপন সেল খুঁজে পেয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ভবনের অভ্যন্তরে মজুদ রাখা ড্রোন, টাইমার লাগানো বোমা ও গ্রেনেড।

সম্প্রতি ইরানের রাজধানী তেহরান ও আশপাশের শহরগুলোতে পিকআপ ট্রাক ব্যবহার করে গোপনে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। এসব ট্রাকের কার্গো বেড বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিল ছোট ড্রোন লঞ্চের জন্য, যা নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম।

ইসরায়েলের হয়ে কাজ করার অভিযোগে এখন পর্যন্ত ছয়জন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরানি কর্তৃপক্ষ। আরও অনেক সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে চলছে জিজ্ঞাসাবাদ। রাষ্ট্রীয় টিভিতে সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, হাত বাঁধা, চোখ ঢাকা অবস্থায় কয়েকজন সন্দেহভাজন স্বীকার করছে যে তারা তেহরানের বিভিন্ন এলাকায় বিমান প্রতিরক্ষার ভিডিও ধারণ করে পাঠিয়েছে।

২৫ জুন তেহরানের মারজদারান জেলায় ভয়াবহ ড্রোন হামলায় নিহত হন একাধিক পরমাণু বিজ্ঞানী। হামলার পর ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, একটি সন্দেহজনক গাড়ি হামলার মুহূর্তে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। এতে ইরানের পরমাণু সক্ষমতার মূল ব্যক্তিদের একাধিকজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইসরায়েলের হামলায় নিহত ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (IRGC) অ্যারোস্পেস বিভাগের প্রধান আমির আলী হাজিজাদেহ এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, “আমরা সবাই মোসাদের নজরদারিতে আছি।” সম্প্রতি প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি সহকর্মীদের মোবাইল ফোন বন্ধ রাখতে ও নিয়মিত ফোন পরিবর্তন করতে বলছেন। এ বক্তব্যের কিছুদিন পরই তিনি তেহরানের একটি ভূগর্ভস্থ ঘাঁটিতে বিমান হামলায় নিহত হন।

এছাড়াও ইসরায়েলপন্থী হ্যাকার গ্রুপগুলোর সাইবার হামলায় এক পর্যায়ে ইরানের দুটি বৃহত্তম ব্যাংক ও সর্ববৃহৎ ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ অচল হয়ে পড়ে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ইরান সরকার একাধিকবার ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। NetBlocks জানায়, ১২ দিনের যুদ্ধের সময় ইরান ৯৭ শতাংশ ইন্টারনেট কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়—যা আধুনিক ইতিহাসে অন্যতম বৃহত্তম ব্ল্যাকআউট।

মুমু ২

×