ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

উদ্বিগ্ন মন সবসময় বিপদের দিকেই মনোযোগ দেয় না- নতুন গবেষণায় চমক

প্রকাশিত: ১৫:৪৮, ২৭ জুন ২০২৫

উদ্বিগ্ন মন সবসময় বিপদের দিকেই মনোযোগ দেয় না- নতুন গবেষণায় চমক

ছবি: সংগৃহীত।

উদ্বিগ্ন ব্যক্তিরা সব সময় বিপদ বা ভয়ানক কিছুর প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ দেন—এই প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে সাম্প্রতিক এক গবেষণা। গবেষণায় দেখা গেছে, যদি যথেষ্ট প্রেরণা দেওয়া হয়, তবে উদ্বিগ্ন ব্যক্তিরাও ভয় বা হুমকির উদ্দীপনা থেকে মন সরাতে সক্ষম হন। অর্থাৎ, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে মনোযোগ সরাতে পারেন, এটি মোটেই সম্পূর্ণ স্বতঃসিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়।

যুক্তরাজ্যের "Cognition & Emotion" সাময়িকীতে প্রকাশিত এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন অ্যাগনেস মুসিকোইয়ো, অ্যান্ড্রু ই. রায়মেন্ট ও পপি ওয়াটসন। তারা মোট তিনটি প্রি-রেজিস্টার্ড (পূর্বনির্ধারিত) পরীক্ষার মাধ্যমে এই বিষয়টি পরীক্ষা করেন।

প্রথম পরীক্ষায় ১৪২ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের Anxiety স্কোর অনুযায়ী দুই দলে ভাগ করে চোখের গতিবিধির ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, যারা শব্দভীতিকর (CS+) চিহ্নের প্রতি চোখ সরাতে দেরি করছিলেন, তাদের দণ্ড (অস্বস্তিকর শব্দ) দেওয়া হয়েছিল। ফলাফলে দেখা যায়, উদ্বিগ্ন ও কম উদ্বিগ্ন—উভয় ধরনের অংশগ্রহণকারীর মধ্যেই মনোযোগ সরানোর সময় (disengagement latency) প্রায় সমান ছিল। অর্থাৎ, উদ্বিগ্ন ব্যক্তিরাও প্রেরণার প্রভাবে সমান দক্ষতায় হুমকিমূলক উদ্দীপনা থেকে চোখ সরাতে পারেন।

পরবর্তী দুটি পরীক্ষায় যথাক্রমে ২০১ ও ১৯৫ জন অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে রিমোট রিঅ্যাকশন টাইম টাস্ক করা হয়। দ্বিতীয় পরীক্ষায় বিভিন্ন মুখাবয়ব (রাগান্বিত, ভীত, নিরপেক্ষ), তৃতীয় পরীক্ষায় মুখাবয়ব ছাড়াও সাপ ও মাকড়সার ছবি প্রদর্শিত হয়। কিছু অংশগ্রহণকারীকে দ্রুত প্রতিক্রিয়ার জন্য আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হয়, অন্যদের শুধুমাত্র সঠিক উত্তর জানানো হয়।

এই পরীক্ষাগুলোতে দেখা যায়, সাপ বা মাকড়সার ছবি হালকাভাবে মনোযোগ আটকে রাখলেও উদ্বেগের মাত্রা এতে কোনো প্রভাব ফেলেনি। এমনকি উদ্বিগ্ন অংশগ্রহণকারীরাও রাগান্বিত বা ভয়ংকর মুখাবয়বে অতিরিক্ত সময় আটকে ছিলেন না।

গবেষকদের মতে, হুমকিজনিত উদ্দীপনা থেকে মনোযোগ সরানো আদতে উদ্বিগ্ন ব্যক্তির জন্য স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল নয়। বরং এটি নির্ভর করে সেই মুহূর্তের পরিস্থিতি, প্রেরণা ও স্টিমুলাসের ধরণে। অনেক সময় ভয়ংকর মুখাবয়ব বা ছবি সবার জন্য সমানভাবে প্রাসঙ্গিক নাও হতে পারে।

গবেষণা শিরোনাম: “The role of motivation in delayed disengagement from threat in anxiety” লেখক: অ্যাগনেস মুসিকোইয়ো, অ্যান্ড্রু ই. রায়মেন্ট, পপি ওয়াটসন।

উদ্বেগগ্রস্ত ব্যক্তি মানেই যে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সবসময় ভয় বা হুমকির দিকেই তাকিয়ে থাকেন, এই ধারণাটি পুরোপুরি ঠিক নয়। প্রেরণা ও প্রসঙ্গ অনুযায়ী তাদের মনোযোগ পরিচালিত হয়। এই গবেষণা মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি যোগ করতে পারে।

সূত্র: https://short-link.me/15Q6B

মিরাজ খান

আরো পড়ুন  

×