
ছবি: সংগৃহীত
যোগব্যায়ামকে আমরা সাধারণত মানসিক ও শারীরিক ভারসাম্যের শান্তিপূর্ণ উপায় হিসেবে দেখি। এটি সত্যি যে যোগব্যায়াম অনেক উপকারে আসে, তবে সব ধরণের আসন বা মুদ্রা সবার জন্য উপযুক্ত নয়। বিশেষ করে যেসব আসনে মাথা নিচু করে দাঁড়াতে হয়, গভীরভাবে পশ্চাৎমুখী বাঁক নিতে হয়, বা তীব্রভাবে শরীর মোচড়াতে হয় — সেগুলো অনেক সময় দেহকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ফেলে দিতে পারে। এই আসনগুলো শুধুই সৌন্দর্যমণ্ডিত ভঙ্গি নয়, বরং অগ্রসরমাণ সতর্কতা ছাড়া তা মেরুদণ্ড, হৃদযন্ত্র এমনকি মানসিক অবস্থার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
নিচে এমন পাঁচটি গোষ্ঠীর কথা বলা হলো, যাদের উচিত হবে জটিল যোগ আসন এড়িয়ে চলা বা সংশোধন করে করা — ভয় বা নিষেধের কারণে নয়, বরং শরীরের সতর্ক সংকেতকে সম্মান জানানোর জন্য।
১. গর্ভবতী নারী (বিশেষ করে গর্ভাবস্থার প্রথম ও শেষ ভাগে)
যদিও গর্ভকালীন যোগব্যায়াম প্রসব সহজ করতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক, তবুও কঠিন আসন যেমন মোচড়, গভীর পশ্চাৎবাঁক বা উল্টো ভঙ্গি এ সময়ে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে এই ধরণের আসন হঠাৎ চাপ বা পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে, যা গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়ায়। তৃতীয় ত্রৈমাসিকে এমন আসন জরায়ুতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, রক্ত প্রবাহ কমিয়ে দিতে পারে কিংবা ভারসাম্য নষ্ট করে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
কোকুন হাসপাতালের সিনিয়র স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ডা. মিতুল গুপ্তা বলেন, “গর্ভাবস্থায় যোগব্যায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, বিশেষ করে যদি গর্ভাবস্থা জটিল হয়। প্রথম তিন মাসে শরীরে নানা পরিবর্তন আসে, তাই পেটের ওপর চাপ পড়ে এমন কঠিন আসন এড়িয়ে চলা জরুরি, কারণ এতে গুরুতর ক্ষতি হতে পারে।”
২. উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা
হ্যাঁ, নিয়মিত শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলন ও কোমল মুভমেন্ট রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তবে কঠিন আসন যেমন শোল্ডার স্ট্যান্ড, হেডস্ট্যান্ড বা গভীর পশ্চাৎবাঁক— এসব রক্তপ্রবাহের দিক পরিবর্তনের মাধ্যমে হৃদপিণ্ডে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা বিপজ্জনক হতে পারে।
এই অবস্থায় যোগচর্চার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত শরীরকে চ্যালেঞ্জ না করে প্রশান্তি দেওয়া। বসে করার মতো আসন, সামনের দিকে নমন, ধীরে শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলনই নিরাপদ ও কার্যকর।
৩. মেরুদণ্ড বা ডিস্ক সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা
অনেকেই মনে করেন যোগব্যায়াম পিঠের ব্যথা কমায়। কিন্তু যাদের হাড়ের ডিস্ক সরে গেছে, সায়াটিকা আছে, বা সার্জারির পর অবস্থায় আছেন— তাদের জন্য কিছু আসন বিপজ্জনক। হুইল পোজ, কোবরা পোজ, বা প্লাউ পোজের মতো ভঙ্গি শরীরের দুর্বল অংশে অতিরিক্ত চাপ ফেলে এবং ক্ষতি বাড়াতে পারে।
এই অবস্থায় গভীর বাঁকের চেয়ে দরকার স্থিরতা, সহায়তা ও ধীরে সুস্থ হওয়ার সুযোগ।
৪. অবসাদ বা মানসিক ট্রমায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা
যোগব্যায়াম শুধু শরীর নয়, মনকেও প্রশান্ত করে। তবে কিছু আসন যেমন হিপ ওপেনার বা গভীর শ্বাসচর্চা — শরীরে জমে থাকা মানসিক আঘাত উন্মোচন করে দিতে পারে। কারও কারও জন্য এটি থেরাপির মতো কার্যকর হলেও, ট্রমা বা PTSD-তে ভোগা ব্যক্তিদের জন্য এটি বিপর্যয়কর বা পুনরায় আঘাতজনিত হতে পারে।
এক্ষেত্রে শারীরিক নমনীয়তার পাশাপাশি দরকার মানসিক প্রস্তুতি। ট্রমা-ইনফর্মড যোগ প্রশিক্ষকের সঙ্গে কাজ করাই শ্রেয়।
৫. ভারসাম্যজনিত সমস্যা বা ভার্টিগো আছে এমন ব্যক্তি
যোগব্যায়াম ভারসাম্য ও শারীরিক নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে সাহায্য করে। কিন্তু যাদের কানজনিত সমস্যা, ভার্টিগো, বা স্নায়বিক ভারসাম্যহীনতা রয়েছে, তাদের জন্য দাঁড়িয়ে ভারসাম্যের ওপর নির্ভরশীল আসন যেমন ট্রি পোজ, ঈগল পোজ বা স্ট্যান্ডিং স্প্লিট ঝুঁকিপূর্ণ।
এই অবস্থায়, যোগচর্চা সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ না করে, বসা বা শোয়ার অবস্থায় সহায়ক আসন অনুশীলন করাই নিরাপদ ও কার্যকর বিকল্প।
আবির