ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

বয়স বাড়ছে কিন্তু এই খাবারগুলো খাচ্ছেন না? মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে প্রতিদিন!

প্রকাশিত: ১৯:৪৪, ২৭ জুন ২০২৫

বয়স বাড়ছে কিন্তু এই খাবারগুলো খাচ্ছেন না? মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে প্রতিদিন!

ছবি: সংগৃহীত

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন আসে—ভিতর থেকে শুরু করে বাইরের দিকেও। বিপাকক্রিয়া ধীর হয়ে আসে, পেশির পরিমাণ কমে যেতে থাকে। এ ধরনের পরিবর্তন আমাদের শরীরে খাদ্য থেকে পুষ্টি গ্রহণ ও ব্যবহারের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। তাই এই পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং বয়সভিত্তিক পুষ্টি চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য পরিকল্পনা করাটা অত্যন্ত জরুরি।

বয়স বাড়ার সঙ্গে পুষ্টির গুরুত্ব

“বয়ঃপ্রাপ্ত অবস্থায় সঠিক পুষ্টি গ্রহণ সুস্থ বার্ধক্যের ভিত্তি গড়ে দেয়, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ বুঝতে পারেন না যে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের নির্দিষ্ট কিছু পুষ্টি উপাদানের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ে,” বলছেন ড. এরিকা স্যাভেজ-জেটার, যিনি সাউথ ক্যারোলিনার সেন্টারওয়েল সিনিয়র প্রাইমারি কেয়ারে ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান এবং ডিভিশনাল চিফ মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করছেন।

“বয়স বাড়লে শরীর ধীরে চলতে থাকে এবং আমাদের পুষ্টির চাহিদাও পরিবর্তিত হয়,” বলেন ড. ভারজিলিও সানচেজ জুনিয়র, যিনি মায়ামিতে সিনিয়র-ভিত্তিক প্রাইমারি কেয়ার প্রদানকারী কনভিভা কেয়ার সেন্টারে ফ্যামিলি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ।

দুঃখজনক হলেও সত্য, গবেষণা বলছে, অধিকাংশ বয়স্ক মানুষ পুষ্টিকর খাবার কম খেয়ে থাকেন এবং বয়সের কারণে পুষ্টি শোষণ ও ব্যবহার করার ক্ষমতা কমে যাওয়ায় তারা পুষ্টিহীনতা ও দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকিতে থাকেন।

CDC এবং National Center for Health Statistics-এর এক সমীক্ষা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী প্রায় ৮৫% মানুষ অন্তত একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত।

তবে গবেষণায় দেখা গেছে, সঠিক পুষ্টি গ্রহণ সুস্থ বার্ধক্যকে সমর্থন করে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি কমায়। ড. সানচেজ জানান, “যেসব বয়স্ক মানুষ পরিমিত ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করেন, তারা সাধারণত দীর্ঘজীবী হন এবং ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, আলঝেইমারস, কিছু ক্যান্সারসহ অনেক রোগের ঝুঁকি কম থাকে।”

বয়সভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান

সব মানুষের পুষ্টি চাহিদা ভিন্ন হলেও, কিছু নির্দিষ্ট পুষ্টি উপাদান সাধারণত বয়স্কদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ড. সানচেজ বলেন, “বয়স্কদের ক্যালোরির প্রয়োজন কমলেও প্রোটিন, ফাইবার ও কিছু নির্দিষ্ট ভিটামিন ও খনিজ যেমন ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফলেট এবং ভিটামিন ডি-এর চাহিদা বেড়ে যায়।”

প্রোটিন

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকের পেশিশক্তি ও পেশির পরিমাণ কমে যায়—এই অবস্থাকে বলা হয় সারকোপেনিয়া। এটি চলাফেরার ক্ষমতা ও স্বাধীনতা কমিয়ে দেয় এবং হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

প্রোটিন পেশি ধরে রাখতে সাহায্য করে, তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত উচ্চ-মানের প্রোটিন গ্রহণ জরুরি।
ভালো প্রোটিনের উৎস:

  • লিন মাংস, মাছ, ডিম

  • টোফু, ডাল, বাদাম ও বীজ

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, প্রতিদিন ওজন প্রতি ১.২ থেকে ২.০ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত।

ফাইবার

ফাইবার কেবল হজমে সাহায্যই করে না, বরং তা দীর্ঘায়ু, হৃদরোগ প্রতিরোধ, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও ভালো শারীরিক পারফরম্যান্সে সহায়ক।

ভালো ফাইবারের উৎস:

  • পূর্ণশস্য, ব্রকলি, অ্যাভোকাডো, আপেল, বেরি

  • প্রয়োজন হলে সাপ্লিমেন্টও গ্রহণ করা যেতে পারে

৫১ বছরের বেশি বয়সী নারীদের প্রতিদিন কমপক্ষে ২২ গ্রাম এবং পুরুষদের ২৮ গ্রাম ফাইবার গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।

ক্যালসিয়াম

ড. সানচেজ বলেন, “বয়স বাড়ার সঙ্গে আমরা খাদ্য থেকে কম ক্যালসিয়াম শোষণ করি। তখন শরীর হাড় থেকে ক্যালসিয়াম নিয়ে নেয়, ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যায়।”

ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস:

  • দুধ, দই, পনির

  • ক্যালসিয়াম-সমৃদ্ধ সিরিয়াল, সারডিন, শাক-সবজি যেমন পালং শাক, কলার শাক

৫১ বছরের বেশি নারীদের জন্য ১,২০০ মি.গ্রা. এবং পুরুষদের জন্য ৫১-৭০ বছর বয়সে ১,০০০ মি.গ্রা., ৭১ বছরের পর থেকে ১,২০০ মি.গ্রা. ক্যালসিয়াম প্রয়োজন।

পটাশিয়াম

পেশী সংকোচন, মস্তিষ্ক, হৃদস্পন্দন ও স্নায়ুর কার্যকারিতা ঠিক রাখতে পটাশিয়াম অপরিহার্য। পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাদ্য হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

ভালো উৎস:

  • শুকনো খেজুর, কলা, আলু, ডাল
    তবে অতিরিক্ত পটাশিয়াম গ্রহণ বিপজ্জনক হতে পারে—বিশেষ করে যাদের কিডনি সমস্যা আছে।

সাধারণত প্রতিদিন ৪,৭০০ মি.গ্রা. পটাশিয়াম সুপারিশ করা হয়, তবে সুনির্দিষ্ট মাত্রা নির্ধারণে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ফলেট (ভিটামিন বি৯)

ফলেট স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বজায় রাখতে সহায়ক এবং বয়স বাড়লে তা ডিপ্রেশন, শ্রবণশক্তি হ্রাস ও স্মৃতিভ্রংশ রোধে সাহায্য করে।

ভালো উৎস:

  • কলিজা, পালং শাক, ব্রকলি, অ্যাভোকাডো, ফোর্টিফায়েড সিরিয়াল

৫১ বছর বা তার বেশি বয়সীদের প্রতিদিন ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলেট গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

ভিটামিন ডি

ভিটামিন ডির ঘাটতি হাড় ক্ষয়, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বয়স্করা সূর্যালোক থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পায় না বলে তাদের ঘাটতি হতে পারে।

ভালো উৎস:

  • স্যামন মাছ, সারডিন, ডিম, ফোর্টিফায়েড দুধ

বয়স ৫১-৭০ হলে প্রতিদিন ৬০০ IU এবং ৭১ বছরের পর প্রতিদিন ৮০০ IU ভিটামিন ডি প্রয়োজন।

বয়স অনুযায়ী পুষ্টি গ্রহণের পরামর্শ

  • পরিমিত ও বৈচিত্র্যময় খাদ্য নির্বাচন করুন: ফল, শাকসবজি, পূর্ণশস্য, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও প্রোটিন খেতে চেষ্টা করুন। রঙিন খাবারে বিভিন্ন ভিটামিন ও ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট থাকে।

  • ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করুন: আপনার ওষুধ পুষ্টি শোষণে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই পুষ্টি ঘাটতি ও প্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্ট নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

আবির

×