ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

ঢাকা–মাওয়া–ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে: ফের পুরনো নামে নতুন যাত্রার শুরু

সালাহউদ্দিন সালমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ০০:২১, ২৮ জুন ২০২৫; আপডেট: ০০:৩১, ২৮ জুন ২০২৫

ঢাকা–মাওয়া–ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে: ফের পুরনো নামে নতুন যাত্রার শুরু

দেশের প্রথম জাতীয় ও ছয়লেনের এক্সপ্রেসওয়ের নাম পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন নাম রাখা হয়েছে— ‘ঢাকা–মাওয়া–ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে’। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

তবে নাম পরিবর্তনের এই সরকারি ঘোষণার পরেও সাধারণ মানুষের মধ্যে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। অনেকেই নাম পরিবর্তন হয়েছে সেটিও জানেন না। তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো দ্রুত ও নিরাপদ যাতায়াত—নাম নয়।ঢাকা জেলার যাত্রাবাড়ি থেকে শুরু হয়ে মুন্সীগঞ্জের তিনটি উপজেলা— সিরাজদিখান, শ্রীনগর এবং লৌহজং— হয়ে এই এক্সপ্রেসওয়ে চলে গেছে পদ্মা সেতু পেরিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২২টি জেলার সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে এই রুটে ৫৫ কিলোমিটারের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়।

প্রকল্পের ব্যয় হয়েছে প্রায় ১১ হাজার ৪ কোটি টাকা। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গানাইজেশন (পশ্চিম)।

২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারির প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই এক্সপ্রেসওয়ের সরকারি নাম রাখা হয় ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক’। তবে শুরু থেকেই সাধারণ মানুষ একে ‘ঢাকা–মাওয়া–ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে’ নামেই চিনত এবং ব্যবহার করত।

২০২২ সালে সরকারিভাবে ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক’ লেখা নামফলক স্থাপন করা হয়।

পরে ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সফল হওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দারা ওই নামফলক ভেঙে ফেলে এবং নিজেদের উদ্যোগে এক্সপ্রেসওয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ.) এক্সপ্রেসওয়ে’ লেখা ব্যানার টাঙিয়ে দেন। তবে সরকারিভাবে সেই নাম স্বীকৃতি পায়নি।

সবশেষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবার এক্সপ্রেসওয়ের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবর্তন করে আবার ‘ঢাকা–মাওয়া–ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে’ নামে ঘোষণা করল।

এক্সপ্রেসওয়ের মূল অংশ চার লেনের হলেও, এটি ছয় লেনের মানসম্পন্ন নকশায় তৈরি। দুই পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য সাড়ে পাঁচ মিটার প্রশস্ত পৃথক সড়ক রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়েতে রয়েছে— ২টি সার্ভিস লেন ৫টি ফ্লাইওভার ১৯টি আন্ডারপাস ২টি ইন্টারচেঞ্জ ৪টি রেলওয়ে ওভার ব্রিজ ৪টি বড় সেতু ২৫টি ছোট সেতু ৫৪টি কালভার্ট

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো পদ্মা সেতু, যা এক্সপ্রেসওয়ের দুই প্রান্তকে সংযুক্ত করেছে। সেতুর উদ্বোধনের পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২২টি জেলার সঙ্গে ঢাকার যাতায়াত সহজ ও দ্রুত হয়েছে।

ঢাকা থেকে মাওয়া, সেখান থেকে পদ্মা সেতু পেরিয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা— পুরো রুটে গাড়ি চলাচলের সময় অনেক কমে এসেছে। আগে যেখানে ফেরি পারাপারসহ দীর্ঘ সময় লাগত, এখন আধুনিক এক্সপ্রেসওয়ে এবং সেতুর কারণে ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে ঢাকা থেকে ফরিদপুর পৌঁছানো সম্ভব।

এটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সামাজিক জীবনযাত্রায় বড় পরিবর্তন এনেছে।

নাম নিয়ে নানা রাজনৈতিক বিতর্কের পর, অবশেষে সরকার ‘ঢাকা–মাওয়া–ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে’ নামটি সরকারিভাবে নির্ধারণ করল। এই পরিবর্তনকে কেউ স্বাভাবিক বাস্তবতার স্বীকৃতি বলছেন— কারণ বহু বছর ধরেই মানুষ এই রুটকে এই নামেই চিনে এসেছে।

যাত্রাবাড়ি থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত এই এক্সপ্রেসওয়ে দেশের সড়ক যোগাযোগে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে— যেটিকে একবাক্যে বলা যায় দেশের সড়ক অবকাঠামোর সবচেয়ে বড় অর্জনগুলোর একটি।

রাজু

×